আবারও খুলে গেছে বেইলি সেতুর পাটাতন, ঝুঁকি নিয়ে যান চলাচল
সুনামগঞ্জ-জগন্নাথপুর-আউশকান্দি-ঢাকা আঞ্চলিক মহাসড়কের জগন্নাথপুর উপজেলা নলজুর নদের কাটাগাঙ্গের ওপর বেইলি সেতুর পাটাতন আবারও খুলে গেছে। এতে করে বড় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
অন্যদিকে ঝুঁকি নিয়ে ছোট যানবাহনগুলো চলাচল করছে।
গতকাল রোববার সকাল থেকে সেতুর পাটাতন খুলে উঠে যাওয়ায় আতঙ্ক দেখা দেয়। এবং রাজধানীতে যাতায়াতকারী বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
ঝুঁকি এড়াতে স্থানীয়রা সেতুটির উভয় পাশে ও খুলে যাওয়া পাটাতনে লাল কাপড় দিয়ে খুটি গেড়ে রেখেছেন। এরপরও ঝুঁকি নিয়ে অটোরিকশাসহ ছোট ছোট যানবাহন চলাচল করতে দেখা যায়।
সরেজমিনে সেতুতে গিয়ে দেখা গেছে, সুনামগঞ্জ- ঢাকা আঞ্চলিক এ মহাসড়কের বেইলি সেতুর চারটি পাটাতনের জোড়া খুলে ফাঁক হয়ে উঠে যায়। নিচের অংশের স্টিলও ছিঁড়ে গেছে। সেতুর উভয়পাড়ে বড় বড় পরিবহনের কয়েকটি গাড়ি আটক থাকলেও ঝুঁকি নিয়েই রানীগঞ্জ থেকে জগন্নাথপুরগামী অটোরিকশা চলাচল করছে।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের নভেম্বর মাসে সিলেট বিভাগের দীর্ঘতম রানীগঞ্জ সেতুসহ এ সড়কের আটটি সেতু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্ধোধনের মাধ্যমে সড়ক দিয়ে সরাসরি রাজধানীর সঙ্গে যোগাযোগ শুরু হয়। ফলে এ সড়ক দিয়ে সুনামগঞ্জ থেকে ৫২ কিলোমিটার কম সময়ে রাজধানীতে যাতায়াত করতে বড় বড় পরিবহনের যাত্রীবাহী বাস চলাচল শুরু হয়। তবে এ সড়কের ভবভমি ও কাটাগাঙ্গের ওপর দুটি বেইলি সেতু ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সড়ক দিয়ে প্রায়ই যান চলাচল বিঘ্নিত হয়।
জগন্নাথপুর উপজেলা বাস পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি নিজামুল করিম জানান, আঞ্চলিক এ মহাসড়ক চালুর পর থেকে দিন দিন গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে। বড় বড় পরিবহনের সব কোম্পানির বাস সার্ভিস ছাড়াও এ সড়ক দিয়ে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য জগন্নাথপুর তথা জেলা শহরে আসছে। কাটাগাঙ্গের সেতুটি জোড়াতালি দিয়ে চালুর কারনে প্রায়ই যান চলাচল বিঘ্নিত হয়। দ্রুত নতুন সেতু নির্মাণ দরকার।
উপজেলা নাগরিক ফোরাম আহ্বায়ক নুরুল হক বলেন, ৫২ কিলোমিটার কম দূরত্বে সুনামগঞ্জবাসীকে রাজধানীতে যাতায়াত করার সুযোগ মাত্র একটি বেইলি সেতুর কারণে বিঘ্নিত হচ্ছে। ঝুঁকি নিয়ে কাটাগাঙ্গের সেতুটি পার হতে ভয় করে। তিনি বলেন, প্রায়ই পাটাতন খুলে নদীতে পড়ে যায়। রোববার সকাল থেকে পাটাতন খুলে যান চলাচল বিঘ্নিত হয়।
এব্যাপারে সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম প্রামাণিক বলেন, ওই সেতুর পাটাতন খুলে যাওয়ার খবর পেয়ে সংস্কারের উদ্যােগ নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আঞ্চলিক এ মহাসড়কের দুই বেইলি সেতুর মধ্যে ভববমি বেইলি সেতুর সাড়ে আট কোটি টাকা ব্যয়ে দরপত্র প্রক্রিয়া শেষ করে কাজ শুরু হয়েছে। কাটাগাঙ্গের ওপর বেইলি সেতুতে নতুন সেতু নির্মাণের প্রস্তাব পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
উল্লেখ্য, সুনামগঞ্জ-পাগলা-জগন্নাথপুর-আউশকান্দি-ঢাকা আঞ্চলিক এ মহাসড়কে জগন্নাথপুর উপজেলার ইছগাঁও নামক স্থানে বহমান নলজুর নদীর উপর (কাটাগাঙ্গ) ২০১২ একটি বেইলি সেতুটি নির্মাণ করা হয়। পরে ২০১৭ সালের ১৩ জুন সেতুটির দক্ষিণ অংশের অ্যাপ্রোচের মাটি ধসে গর্তের সৃষ্টি হয়। একই বছরে ১৩ জুলাই আবার মাটি ধসে একই স্থানে দ্বিতীয় বার গর্তের সৃষ্টি হলে অ্যাপ্রোচে অতিরিক্ত স্টিল দিয়ে মেরামত কাজ করা হয়। পরে আবার ২০২২ সালে ১৫ জুলাই সেতুটির উত্তর অংশের অ্যাপ্রোচের মাটি ধসে গর্তের সৃষ্টি হলে অ্যাপ্রোচে অতিরিক্ত স্টিল দিয়ে মেরামত কাজ করা হয়। এছাড়া কয়েকদিন পর পর সেতুটির পাটাতন খুলে গেলে মেরামত করা হয়। সর্বশেষ গত ১১ মার্চ রাতে সেতুটির একটি পাটাতন খুলে নদীতে পড়ে গেলে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরদিন নতুন পাটাতন লাগানো হলে যানচলাচল শুরু হয়।