হাকালুকিতে জলজ বৃক্ষ নিধন, ২২ জনকে বেলার নোটিশ
দৈনিকসিলেট প্রতিবেদক :
মৌলভীবাজার ও সিলেট জেলার উপজেলাজুড়ে দেশের বৃহত্তম হাওর হাকালুকির অবস্থান। ১৯৯৯ সাল থেকে এই হাওরের ১৮ হাজার ৩৮৩ হেক্টর এলাকাকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। হাকালুকির আওতায় মালাম বিলসহ ছোট-বড় অনেক বিল রয়েছে। ইজারা চুক্তি লঙ্ঘন করা হচ্ছে এখানে প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা জলজ উদ্ভিদ নিয়ে। নানাভাবে ক্ষতি করা হচ্ছে প্রাকৃতিক পরিবেশের।
সংকটাপন্ন এলাকায় স্থাপিত বাঁধ, বিলে ফেলা মাটি অপসারণ, গাছ কাটার বিপরীতে নির্ধারিত সংখ্যক গাছ লাগানো ও পরিচর্যার বিষয়ে পদক্ষেপ জানতে ২২টি প্রতিষ্ঠানকে নোটিশ পাঠিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)।
গত বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) ভূমি সচিব, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, মনাদি মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডসহ ২২টি দপ্তর ও প্রতিষ্ঠানের প্রধানের কাছে এই নোটিশ পাঠিয়েছে পরিবেশবাদী সংগঠনটি। নোটিশ পাওয়া ৭ দিনের মধ্যে এসব বিষয় সম্পর্কে অবহিত করতে বলা হয়েছে।
বেলার নোটিশ সূত্রে জানা যায়, পরিবেশ অধিদপ্তর ও বড়লেখা ভূমি অফিসের তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী ইজারা চুক্তি লঙ্ঘন করে ২০২১ সালে এ বিলের দক্ষিণ-পূর্ব পাশে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো বিভিন্ন প্রজাতির জলজ উদ্ভিদ (হিজল, করচসহ অন্যান্য জলজ প্রজাতি) কেটে ফেলছে, দুই কিলোমিটার দীর্ঘ বাঁধ দেওয়া হয়েছে ও এক হাজার ১২ বিঘা ভূমি চাষ উপযোগী করা হয়েছে। এ ঘটনায় পরিবেশ অধিদপ্তর ৭ জনকে অভিযুক্ত করে বড়লেখা থানায় একটি মামলা দায়ের করে। তবে জলজ উদ্ভিদ নিধন, বাঁধ নির্মাণের স্পষ্ট অভিযোগ ইজারাদারের বিরুদ্ধে থাকলেও তাকে বিবাদী করা হয়নি কিংবা ইজারা বাতিল করা হয়নি।
বেলার প্রতিনিধি পরিদর্শনকালে এলাকাবাসী জানিয়েছেন, ইজারাদার কর্তৃক বাঁধ নির্মাণ ও কৃষি কাজের জন্য বিলের ১০-১৫ ফুট উচ্চতার প্রায় ২০ হাজার জলজ উদ্ভিদ কেটে ফেলা হয়েছে। কর্তনকৃত স্থানে কিছু গাছের চারা লাগানো হলেও পরিচর্যার অভাবে সেগুলো হারিয়ে গেছে।
বেলার পক্ষ থেকে মৌলভীবাজারের বড়লেখা, জুড়ী, কুলাউড়া ও সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ উপজেলাজুড়ে বিস্তৃত হাকালুকি হাওরের চিহ্নিত প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার দাবি জানানো হয়েছে।
গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর বেলার সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট শাহ শাহেদার নেতৃত্বে প্রতিনিধিদল সরেজমিনে মালাম বিল এলাকা পরিদর্শন করে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগে চারটি সুপারিশ করে। হাকালুকি হাওরের মালাম বিলের জলজ বৃক্ষ নিধনের ঘটনায় হাওরের হারানো পরিবেশ পুনরুদ্ধারে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির চার সুপারিশ উপেক্ষিত হয়েছে। সর্বশেষ বেলার প্রতিনিধিদল চলিত মাসের গত ১১ জুলাই ফলোআপ পরিদর্শনে গিয়ে সুপারিশগুলো কার্যকর হয়নি দেখে গত ২০ জুলাই সংশ্লিষ্টদের নোটিশ প্রদান করেছে।
বেলার সিলেট বিভাগের সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট শাহ শাহেদা বলেন, হাকালুকি হাওরের প্রতিবেশ নষ্টের মূল কারিগর ইজারাদারকে মামলায় বিবাদী করেনি পরিবেশ অধিদপ্তর। প্রতিবেশ রক্ষায় সংশ্লিষ্ট ২২টি দপ্তরে নোটিশ পাঠিয়ে হাকালুকি হাওরের প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন অবস্থা সংরক্ষণে গৃহীত পদক্ষেপ ৭ দিনের মধ্যে জানতে চাওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালাম বলেন, বেলার পাঠানো পত্র আমরা পেয়েছি। বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি। এ জেলায় আমি সদ্য যোগদান করেছি। খোঁজ নিয়ে যথাযথভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।