গরু বেঁচে ঋণ পরিশোধ করে দুধ দিয়ে গোসল

দৈনিকসিলেট ডেস্ক :
গরু বিক্রি করে এনজিওর ঋণ পরিশোধ করে এক মণ (৪০ লিটার) দুধ দিয়ে গোসল করে ঋণমুক্ত হলেন শহিদুল ইসলাম নামের এক রাজমিস্ত্রী। ঘটনাটি ঘটেছে শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার বাঘবের ইউনিয়নের জাংগালিয়া কান্দা গ্রামে।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে জাংগালিয়াকান্দা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন নিজ বাড়ির আঙ্গিনায় জনসম্মুখে দুধ দিয়ে গোসল করে তিনি ঋণমুক্তির ঘোষণা দেন। একই সঙ্গে তিনি শপথ করেন জীবনে আর কোনোদিন সমিতি বা এনজিও থেকে কোনো প্রকার ঋণ গ্রহণ করবেন না। এমনকি কেউ যেন এনজিও থেকে ঋণ না নেয়, সে বিষয়েও তিনি জনসাধারণকে উৎসাহিত করেন।
এর আগে ঋণমুক্ত হতে তার শেষ সম্বল একমাত্র পালের গরুটি বিক্রি করে দেন শহিদুল ইসলাম।
জানা গেছে, নালিতাবাড়ী উপজেলার বাঘবের ইউনিয়নের জাংগালিয়াকান্দা গ্রামের আব্দুল কাদেরের ছেলে রাজমিস্ত্রী শহিদুল ইসলাম এক বছর আগে স্থানীয় একটি এনজিও থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নেন। ওই ঋণের টাকা সাপ্তাহিক কিস্তিতে পরিশোধ করার কথা থাকলেও তিনি তা নিয়মিত কিস্তি পরিশোধ করতে পারছিলেন না। ফলে তিনি ওই এনজিও কর্মকর্তাদের চাপের মুখে পড়ে ঘরের হাঁস মুরগির ডিম বিক্রি করে কিস্তি দিয়েও ঋণ পরিশোধ হচ্ছিল না।
অপরদিকে রাজমিস্ত্রীর নিয়মিত কাজ না থাকায় তিন কন্যা সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে পাঁচজনের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছিল তাকে। এ ছাড়া তিনি অনেকটা অসুস্থ, হার্টের রোগী। নিয়মিত কাজে যেতে পারেন না। এনজিওর ঋণের কিস্তির চাপে তার কাজকর্মেও মন বসছিল না। অনেকটা অসহায় হয়ে সর্বশেষ সিদ্ধান্ত নেন পালের একটি মাঝারি ষাঁড় গরুটি বিক্রি করে দিয়ে ঋণ পরিশোধ করবেন।
পরে তিনি দুধ দিয়ে গোসল করে শপথ নেবেন জীবনে আর কোনোদিন ঋণ বা সুদে টাকা ধার করবেন না। এমন সিদ্ধান্তে মঙ্গলবার বিকেলে উপজেলার জাংগালিয়াকান্দা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন নিজ বাড়ির আঙিনায় বড় একটি পাতিলে এক মণ দুধ কিনে প্রকাশ্যে দুধ দিয়ে গোসল করে ঋণমুক্তির ঘোষণা দেন। এরপর থেকে শহিদুল ইসলামকে দেখতে তার বাড়িতে এসে লোকজন ভিড় শুরু করে।
অভিনব কায়দায় দুধ দিয়ে গোসল করা সম্পর্কে জানতে চাইলে এনজিওর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি রাজমিস্ত্রীর কাজ করে পরিবারের পাঁচ সদস্য নিয়ে কষ্ট করে সংসার চালাই। সংসারে চালাতে একটি এনজিও থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে নিয়মিত কিস্তি পরিশোধ করতে পারছিলাম না। কিন্তু ওই এনজিও থেকে কিস্তি পরিশোধে খুব চাপ ছিল। তাই পালের গরু বিক্রি করে ঋণমুক্ত হয়ে দুধ দিয়ে গোসল করি।’