ভোলাগঞ্জে বর্ডার হাটে পোয়াবারো ভারতীয় বিক্রেতাদের
বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী অঞ্চলের লোকদের সুবিধার্থে চালু করা হয়েছে বর্ডার হাট। এর মধ্যে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ হাট অন্যতম। এতে কোনো দেশের পর্যটকদের প্রবেশের নিয়ম না থাকলেও ভোলাগঞ্জ বর্ডার হাটের (সীমান্ত হাট) চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। প্রচুর বাংলাদেশি পর্যটক কোনো বাধা ছাড়াই বর্ডার হাটে প্রবেশ করছেন। এসব পর্যটক ক্রেতাকে পেয়ে পোয়াবারো হচ্ছে ভারতীয় বিক্রেতাদের। সুযোগ বুঝে বাড়তি দামে পণ্য বিক্রি করছেন তারা।
ভোলাগঞ্জ বর্ডার হাটে প্রবেশ করে বিভিন্ন স্টলের দিকে দৃষ্টি ফেরালে বৈসাদৃশ্য চোখে পড়বে। কিছু স্টলে দেখা যাবে ক্রেতাদের ভিড়। কিছু স্টল ক্রেতাশূন্য। ভিড় থাকা স্টলগুলো ভারতীয় বিক্রেতাদের। ক্রেতাশূন্য বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের স্টল।
বর্ডার হাটে গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্থানীয় পর্যটনকেন্দ্র সাদা পাথরে বেড়াতে আসা বাংলাদেশি লোকজন বর্ডার হাটে হুমড়ি খেয়ে পড়েন। তারা দেদার ভারতীয় পণ্য কেনেন। অন্যদিকে ভারতীয় ক্রেতারা না আসায় বাংলাদেশি স্টলগুলোতে তেমন বেচাকেনা নেই।
স্থানীয় কয়েকজন বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভারতীয় পণ্যের বিক্রি বাড়িয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশি পর্যটকরা। পার্শ্ববর্তী পর্যটনকেন্দ্র সাদা পাথর ভ্রমণ শেষে পর্যটকরা অনায়াসে ঢুকতে পারছেন বর্ডার হাটে। ৩০ টাকা দিয়ে যে কেউ প্রবেশ করে কেনাকাটা করতে পারেন। অথচ নিয়ম রয়েছে উভয় দেশের শুধু পাসধারী ব্যক্তিরাই বর্ডার হাটে কেনাকাটা করতে পারবেন। তারা হবেন বর্ডার হাটের পাঁচ কিলোমিটার এলাকার বাসিন্দা। আবার পর্যটকরা কে কত টাকার পণ্য কিনছেন, তার ইয়াত্তা নেই। এ ক্ষেত্রে চোরচালানেরও আশঙ্কা রয়েছে।
ভারতীয় একটি স্টলে এক খাসিয়া নারীর সঙ্গে পণ্য বিক্রিতে সহায়তাকারী মিন্টু দাস জানান, প্রতি হাটে তারা ৪০-৫০ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি করতে পারেন। আরেক ভারতীয় নারী খংলা জানান, প্রতি হাটে লাখ টাকার পণ্য বিক্রি করেন তিনি। হাটে বাংলাদেশি ক্রেতাদের উপস্থিতিতে খুশি এ নারী বিক্রেতা।
হাটে ভ্যারাইটিজ পণ্যের ব্যবসায়ী ও ভোলাগঞ্জ গ্রামের বাসিন্দা নাজিম উদ্দিন জানান, ভারতীয় ক্রেতা কম থাকায় কোনো হাটে ২ হাজার টাকার পণ্যও বিক্রি করতে পারেন না তিনি।
বিপুল বিক্রি সত্ত্বেও ভারতীয় বিক্রেতাদের পণ্যের দাম বেশি রাখার অভিযোগ উঠেছে। ভারতীয় স্রিং নামে একটি ড্রিংকসের বোতলের গায়ে দাম লেখা ৩০ রুপি। রুপির সঙ্গে টাকার বিনিময় করলে তা কিছুতেই ৪০ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। কিন্তু ভারতীয় বিক্রেতারা সেটি ৬০ টাকায় বিক্রি করছেন। স্থানীয় এক বাংলাদেশি ক্রেতা জানান, তিনি ৩০০ গ্রাম ওজনের একটি সেরেলাক দুধ কিনেছেন। ভারতীয় ২২৬ রুপি দাম। এক রুপি সমান ১ টাকা ৩০ পয়সা করে হলে ২৯৩ টাকা রাখার কথা। কিন্তু ৩৫০ টাকা দিতে হয়েছে। হাট শুরুর প্রথম দুই সপ্তাহ সঠিক দাম রাখলেও বাংলাদেশি ক্রেতা বাড়ায় দুই সপ্তাহ ধরে দাম বেশি নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ বাংলাদেশি ক্রেতাদের।
রুপির সঙ্গে টাকা বিনিময় প্রসঙ্গে বাংলাদেশি বিক্রেতা মো. হাসান বলেন, হাট শুরুর পর ভারতীয় বিক্রেতারা ১ রুপির বিনিময়ে ১ টাকা ৩০ পয়সা করে রেখেছেন। প্রথম দিকে দাম না বাড়ালেও এখন পণ্য পরিবহনে ভাড়ার অজুহাত তুলে প্রতি টাকার বিপরীতে আরও ৭২ পয়সা করে রাখেন। এর যৌক্তিকতা নেই। কারণ আমরাও তো পণ্য বহন করে হাটে নিয়ে আসি।
বর্ডার হাটে বেআইনিভাবে পর্যটক প্রবেশ ঠেকাতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে আবেদন জানিয়েছেন ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর পর্যটনকেন্দ্রের কয়েকজন ব্যবসায়ী। আবেদনকারী সাফাত উল্লাহ, লিটন মিয়া, আব্দুল জলিল ও রুবেল আহমদ বলেন, ভোলাগঞ্জ বর্ডার হাট দুই দেশের সরকারের যুগান্তকারী পদক্ষেপ। কিন্তু নিয়ম না মেনে পর্যটকরা হাটে প্রবেশ করছেন। এ সুযোগে ভারতের ব্যবসায়ীরা দ্বিগুণ দামও নিচ্ছেন। পর্যটকদের প্রবেশ বন্ধ ও পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণের দাবি জানান তারা।
কোম্পানীগঞ্জের লুসিকান্ত হাজং জানান, বর্ডার হাটের জন্য প্রায় ৩ হাজার পাসকার্ড সীমান্ত এলাকার জনসাধারণের মধ্যে বিতরণের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। সেগুলো বণ্টন করা যাচ্ছে না। সে কারণে হাটে প্রবেশে সবাইকে সুযোগ দেওয়া হয়েছে।