‘সব মার পেটো ওসি বেডার লাখান পুয়া অয় না’
স্বামী মারা গেছেন ১৫ বছর আগে। নেই কোনো সন্তানাদি। নিজের দেখাশুনার জন্য স্বামীর রেখে যাওয়া ভিটায় আশ্রয় দেন এক নাতিকে (ভাসুরের ছেলের নাতি)। ভিক্ষা করে সেই নাতির সংসারের খরচও যোগান দেন আশি ঊর্ধ্ব বিধবা আবজান বিবি। কিন্তু জীবনের শেষ সময়ে এসে স্বামীর ভিটায়ও ঠাঁই হয়েনি মাথাগোঁজার। বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয় ওই বিধবা বৃদ্ধাকে। শয়ন কক্ষকে বানানো হয় গোয়ালঘর।
গত ৫ বছর ধরে এলাকার জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের কাছে বলেও ফিরে পাননি বাড়িটি। সর্বশেষ ৫ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে থানায় গিয়ে জানান সেই সব কথা।
শনিবার জগন্নাথপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান সেই বাড়িটি উদ্ধার করে ফিরিয়ে দেন বৃদ্ধা ওই বিধবাকে।
বৃদ্ধা আবজান বিবি উপজেলার চিলাউড়া (আউলী) গ্রামের মৃত ওয়াহিদ উল্লার স্ত্রী।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, ২০০৫ সালে নিঃসন্তান ওয়াহিদ উল্লা ও তাঁর স্ত্রী আবজান বিবির দেখাশুনার জন্য ভাতিজা মজমিল মিয়ার ছেলে অজুদ মিয়াকে তাঁদের বাড়িতে আশ্রয় দেওয়া হয়। ২০০৮ সালে স্বামী ওয়াহিদ উল্লা মারা যাওয়ায় ভিক্ষা করতে হয় বৃদ্ধা আবজান বিবিকে। পরে ২০১৮ সালে ওই বৃদ্ধাকে তাঁরই বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন নাতি অজুদ মিয়া। পরে ঘরের আসবাবপত্র ও বাড়ির গাছ কেটে বিক্রি করেন অজুদ। দীর্ঘ ৫ বছর ধরে বৃদ্ধা ওই বিধবা স্থানীয়ভাবে কোনো সমাধান না পেয়ে আশ্রয় নেন থানা পুলিশের। বিষয়টি জগন্নাথপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমানের নজরে আসলে তিনি গতকাল বাড়িটি উদ্ধার করে ওই বিধবা বৃদ্ধাকে ফিরিয়ে দেন।
দীর্ঘ ৫ বছর পর নিজের ঘরবাড়ি ফিরিয়ে পেয়ে বিধবা আবজান বিবি বলেন, “কত মানুষের কাছে গিয়েছি। কেউ আমার কথার দাম দিলো না। থানায় যাইতেউ ওসি বেডায় আমার বাড়ি ফিরাইয়া দিছইন। ‘সব মার পেটো ওসি বেডার লাখান পুয়া অয় না’ । আমার কোনো পুত নাই তাই আল্লাহ আমার লাগি এই পুতরে (ওসি) পাঠাইছইন। দোয়া করি বহুত দিন আল্লায় যেনও বাছাইয়া রাখইন। ‘
এ ঘটনায় অভিযুক্ত অজুদ মিয়া বলেন, আমি বৃদ্ধ নারীর বাড়ি দখল করিনি। তিনি আমার সম্পর্কে দাদী হন। আমার দাদা মৃত্যুর আগে ওই বাড়িতে চার শতাংশ জায়গা আমাকে দিয়ে গেছেন। একটি কুচক্রি মহল দাদীকে ভুল বুঝিয়ে আমার সঙ্গে দ্বন্দ্ব তৈরি করতে চাইছে।
চিলাউড়া-হলিদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহিদুল ইসলাম বকুল বলেন, আমরা অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু অজুদ আমাদের কথা শুনেনি। পুলিশ এসে বাড়িটি উদ্ধার করে ওই বিধবার জন্য চৌকি, লেপ-তোষকসহ কাপড়চোপড় সব কিছু কিনে দিয়ে গেছে। মানবিক এ কাজের জন্য থানার ওসি মিজানুর রহমানকে আন্তরিক ধন্যবাদ।
জগন্নাথপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, নিঃসন্তান বৃদ্ধা বিধবা ওই মহিলাকে তাঁর নিজের বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। ৫ বছর ধরে কেউই তাঁর কোনো দেখাশুনা করেনি। তিনি পুলিশকে বিশ্বাস করে ৫ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে থানায় এসে বিষয়টি জানান। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে বাড়িটি উদ্ধার করে তাঁর শয়ন কক্ষের সব মালামাল বের করে সবকিছু বুঝিয়ে দিয়েছে।
ওসি মিজানুর বলেন, বিছানাপত্রসহ ওই মহিলার থাকা-খাওয়ার সবকিছুর ব্যবস্থা পুলিশ করে দিচ্ছে। সেই সাথে সরকারি সকল সুযোগ-সুবিধার জন্য স্থানীয় চেয়ারম্যানকে বলা হয়েছে।