প্রথম স্ত্রীর মামলায় বরখাস্ত হলেন নার্স মহেশ ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী শুক্লা

দৈনিকসিলেটডেস্ক
সিলেটে নমিতা রানী বিশ্বাসের দায়ের করা নারী নির্যাতন মামলার তদন্তে অভিযুক্ত হয়েছেন তার স্বামী নার্স মহেশ বিশ্বাস ও মহেশের বর্তমান স্ত্রী প্রিয়লক্ষ্মী রায় শুক্লা। আদালত এ মামলার চার্জগঠন করে বিচার শুরু করেছেন। তদন্তে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় নার্সিং মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর থেকে মহেশ ও তার বর্তমান স্ত্রী শুক্লাকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে। তারা দু’জন সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন। অধিদপ্তর থেকে সাময়িক বরখাস্ত হওয়ার আদেশ পাওয়ার পর ওসমানী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে গত সোমবার থেকে এই আদেশ কার্যকর করেছে। এদিকে আইনি লড়াইয়ে থাকা নমিতা রানী বিশ্বাস জানিয়েছেন- প্রায় দুই বছর আগে তিনি এ নারী নির্যাতন মামলা দায়ের করেছিলেন। এরপর থেকে আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি মামলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাবেন। মামলার আইনজীবী এডভোকেট সাইফুর রহমান খন্দকার রানা জানিয়েছেন- নারী নির্যাতনে দায়ের করা এই মামলাটি আদালতে বিচার শুরু হতে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে গত বছরের ৩০শে জুন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার এসআই নীহারিকা সরকার তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছিলেন।
আদালত চার্জশিট গ্রহণ করেছেন।
মামলায় নার্স মহেশ বিশ্বাস ও তার বর্তমান স্ত্রীকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। ২০২১ সালের ২৭শে অক্টোবর গোপালগঞ্জের নমিতা রানী বিশ্বাস বাদী হয়ে সিলেটের কোতোয়ালি থানায় এ মামলা দায়ের করেছিলেন। মামলার আসামি মহেশ বিশ্বাস জকিগঞ্জ উপজেলার বিরশ্রী পিবক গ্রামের মুক্তেশ্বর বিশ্বাসের ছেলে এবং অপর আসামি প্রিয়লক্ষ্মী রায় শুক্লা বাগবাড়ি প্রমুক্ত আবাসিক এলাকার বাসিন্দা। তারা দু’জন এখন স্বামী-স্ত্রী। ২০১০ সালে লিবিয়ার বেনগাজীতে থাকা অবস্থায় কুমারী নমিতার জীবনের মহেশ আসে। সিলেটের এই যুবকের সঙ্গে বেনগাজীতেই তারা বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে পড়েন। এরপর থেকে একসঙ্গেই বসবাস শুরু করেন। এরমধ্যে ২০১৩ সালে দেশে এসে ঢাকায় বাংলাদেশের আইন সম্মতভাবে বিয়ে করেন দু’জন। ২০১৫ সালের দিকে লিবিয়ার পাঠ শেষ করে মহেশ চলে আসেন দেশে কিন্তু নমিতা থেকে যান চাকরিতে। নমিতা দেশে পাঠানো তার আয়ের একাংশ মহেশকে দিতেন। এ কারণে মহেশ দেশে আসার পর নমিতা তাকে মাসে মাসে টাকা পাঠাতেন।
এরই মধ্যে মহেশ সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নার্সের চাকরি নেন। এবং জড়িয়ে পড়েন অপর নারীর সঙ্গে সম্পর্কে। প্রিয়লক্ষ্মী নামের ওই নারীও একজন নার্স। নমিতা প্রবাসে থাকা অবস্থায় ২০১৬ সালের শেষদিকে প্রিয়লক্ষ্মীর সঙ্গে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হন মহেশ। বিষয়টি জানার পর বেনগাজী থেকে ২০১৭ সালের প্রথমে দেশে আসেন নমিতা। সিলেটে এসে প্রতিবাদ করেও কোনো লাভ হয়নি। এরপর নিজ এলাকা কোটালীপাড়ায় ফিরে গিয়ে গোপালগঞ্জ আদালতে নারী নির্যাতন আইনে মামলা করেন। এ মামলায় ওয়ারেন্ট ইস্যুর পর গ্রেপ্তার হন মহেশ। কারাভোগও করেন। এরপর নমিতার সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমেই জেল থেকে ছাড়া পান। স্ত্রী হিসেবে ঘরে তুলে সংসার করবেন এমন আশ্বাসে বিশ্বাস নিয়ে নমিতা মামলা প্রত্যাহার করেন। দুই পরিবারের মধ্যস্থতায় সব ভুলে নমিতা নতুন করে শুরু করেন।
কিন্তু ছুটি ফুরিয়ে যাওয়ায় কয়েক মাস থাকার পর নমিতা চলে যান বেনগাজীতে। সেখানে গিয়ে কয়েক মাস অবস্থান করেন। এরপর স্বামীর টানে চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে তিনি চলে আসেন সিলেটে। নমিতা ও মহেশ মিলে নগরের পাঠানটুলা এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করেন। নমিতা জানান- ২০১৭ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত একসঙ্গেই তিনি ছিলেন মহেশের সঙ্গে। বার বার তিনি অন্তঃসত্ত্বা হয়েছেন। কিন্তু সন্তান নিতে পারেননি। কখনো ভাতের সঙ্গে ওষুধ খাইয়ে, আবার কখনো তলপেটে লাথিসহ নির্যাতন চালিয়ে তার গর্ভের সন্তান নষ্ট করা হয়। বার বারই ডাক্তারের কাছে গিয়ে তাকে এবরসন করাতে হয়েছে। এতে করে নমিতা মর্মাহত হন। স্বামীর এই আচরণে তিনি ক্ষুব্ধ থাকলেও সংসার টিকিয়ে রাখার জন্য প্রতিবাদ করেননি। ২০২১ সালে একবার অন্তঃসত্ত্বা হলে তিনি প্রতিবাদ শুরু করেন। আর তখন থেকেই তার ওপর চলে আসে নির্যাতনের স্টিম রোলার। মহেশের সঙ্গে একাই বাসায় থাকতেন নমিতা। এই সময়ে মহেশ তাকে নানা ভাবে নির্যাতন করতো। কখনো কখনো তিনতলা থেকে লাথি দিতে দিতে নিচে নামিয়ে আনতো। আবার ঘরের মধ্যে মুখে গামছা বেঁধে নির্যাতন করতো। নগরের সুবহানীঘাটের একটি ক্লিনিকে নার্সের দায়িত্বে থাকা নমিতা চাকরি ছেড়ে আইনি লড়াই শুরু করেন।-মানবজমিন