শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের অসদাচরণের অভিযোগ, সোস্যাল মিডিয়ার প্রতিবাদের ঝড়
মিসবাহ উদ্দিন, বিয়ানীবাজার প্রতিনিধি :
সিলেটের বিয়ানীবাজার আদর্শ মহিলা কলেজের পরীক্ষার হলের একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তোলপাড় চলছে। গত কয়েকদিন থেকে এই ঘটনা ভাইরাল হওয়ায় শিক্ষার্থী-শিক্ষক-অভিভাবক মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। পক্ষে-বিপক্ষে লিখনীর মাধ্যমে ক্রমেই জঠিল হচ্ছে কলেজের অভ্যন্তরীন বিষয়টি। তবে সেদিনকার প্রকৃত ঘটনা জানার চেষ্টা করেছে প্রতিবেদক ।
গত ১০ আগস্ট বিয়ানীবাজার আদর্শ মহিলা কলেজের অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা চলাকালে একাধিক অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। তবে সেদিনকার ঘটনাপ্রবাহ ফেসবুকে তুলে ধরেন কলেজের ছাত্রী পরিচয়ধারী মাহিয়া আক্তার (ছদ্মনাম)। ওই নামীয় ফেসবুক আইডি থেকে তিনি লিখেন (হুবহু তুলে ধরা হল), ’আমি বিয়ানীবাজার আদর্শ মহিলা কলেজের একজন নিয়মিত ছাত্রী। ১০/০৮/২০২৩ তারিখ থেকে আমাদের ইনকোর্স পরিক্ষা চলছে। গত ১৭/০৮/২০২৩ তারিখ হল গার্ড হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষক খালেদ হোসেন। ঐ দিন হলে কি কি ঘটনা হয়েছিল তা নিচে তুলে ধরলাম। প্রথমত, পরিক্ষার আগ মুহূর্তে পড়ার জন্য একটি মেয়ে বই নিয়ে এসেছিল। হঠাৎ স্যার ক্লাসে আসার কারণে মেয়েটা ব্যাগ বাহিরে রাখতে না পেরে নিজের পাশে একটি সাইটে রেখেছিলো। ব্যাগ টি দেখে স্যার ব্যাগের ভিতরে থাকা বইটি হাতে নিয়ে ৩/৪ টুকরো করে চিড়ে বাহিরে ফেলে দিলেন!! সাথে সাথে মেয়েটির পরিক্ষার খাতাও নিয়ে নিলেন। তারপর ওই মেয়েটি স্যারের পা ধরে ৫/৬ বার মাফ চেয়েছে, আমরা নামাজে যে ভাবে সিজদা করি সেই ভাবে মেয়েটি স্যারের পায়ের সামনে মাথা নত করেছে, স্যারের পা ধরলে স্যার সরে যান, স্যারের পা ধরলে স্যার চেয়ার থেকে উঠে বাইরে চলে যান এইভাবে অনেক বার পায়ে ধরেও, অনেক কান্না করেও মেয়েটাকে স্যার ক্ষমা না করে ক্লাস থেকে বের করে দিলেন। পরে স্যার বলছেন তোমাকে টিসি দিয়ে কলেজ থেকে বহিষ্কার করে দেবো! ঐ ছাত্রীর কান্না দেখে আমার চোখের পানি চলে আসছে,বাট স্যারের একটুও দয়া হলো না। সবাই পরিক্ষা দিতেছে, আর মেয়েটি স্যারের পায়ের সামনে মাটিতে মাথা রেখে কান্না করছিলো ক্লাসের সব মেয়েরা দেখেও কেউ ভয়ে বড় গলায় কতা বলতে পারছে না! দ্বিতীয়ত, এক সময় স্যার সবাইকে বলছেন তোমরা আজ রাষ্ট্রবিজ্ঞান পরিক্ষা দিচ্ছ বলো তো রাষ্ট্র পতির নাম কি? অনেকে বলেছে আবার অনেক নিরব। তখন স্যার ছাত্রী দের বললেন– “তোমরা গলাত ফাঁস লাগিয়া মরো না কেনে? গলাত ফাঁস লাগিয়া মরিও”। তৃতীয়ত, স্যার আমাদের বল্লেন– “তোমাদের মুখের নেকাপ খুলে রাখো”। একটা মেয়ে নেকাপ না খুলায় স্যার মেয়েটাকে জোর গলায় বল্লেন ওই মেয়ে বার বার বলছি নেকাপ খুলো তুমি কেনো খুলো নি? পরে মেয়েটা স্যারকে ভয় পেয়ে নেকাপ খুলছে!!’
তবে মাহিয়া আক্তার নামে ফেসবুকে আইডি খুলে লেখা হলেও আ্ইডিটি কে চালায়-তা জানা সম্ভব হয়নি। লেখাটি মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ৫৬০ বার শেয়ার করা হয়েছে। একই আইডি থেকে আরো বেশ কয়েকটি স্ট্যাটাস শেয়ার দেয়া হয়েছে
এ বিষয়ে বিয়ানীবাজার আদর্শ মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মজিবুর রহমান বলেন, মাহিয়া আক্তার নামে আমাদের কলেজে কোন ছাত্রী নেই। ভূয়া ফেসবুক আইডি থেকে কলেজের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছে কোন মহল। তিনি আরো বলেন, নেকাব সংক্রান্ত বা কোন শিক্ষকের অসৌজন্যমূলক আচরণ নিয়ে আমার কাছে কেউ নালিশ করেনি।
বিয়ানীবাজার আদর্শ মহিলা কলেজের শিক্ষক খালেদ আহমদ জানান, পরীক্ষার হলে নেকাব খুলে শিক্ষার্থী যাচাইয়ের বিধান রয়েছে। তাছাড়া পরীক্ষার হলে কালো নেকাব পরার ফলে ওই ছাত্রী অন্ন্য ছাত্রীর সাথে যেসব কথাবার্তা বলে তা অনুমান করা যায়না। পাবলিক পরীক্ষার শৃংখলা শেখাতে আমরা অভ্যন্তরীন পরীক্ষাকে গুরুত্ব দেই। তিনি দাবী করেন, পরীক্ষার হলে যে ছাত্রী নেকাব পরে আসে সে কিন্তু ক্লাস করতে নেকাব পরেনা। পরীক্ষার হলে নেকাব পরার অন্য উদ্দেশ্য থাকতে পারে বলে তাঁর ধারণা।
বই ছিঁড়ে ফেলা প্রসঙ্গে শিক্ষক খালেদ আহমদ বলেন, নকল মারার কাজে এক ছাত্রী বই ব্যবহার করছিল। তাই তাকে শাসানো হয়। তবে অন্য সহকর্মীর অনুরোধে তাকে ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে।
এ প্রতিবেদকের সাথে কথা বলার সময় শিক্ষক খালেদ রাজ্জাক আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। তিনি কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, কোন ছাত্রীর সাথে তিনি কিংবা তাঁর কোন সহকর্মী অন্যায় আচরণ করেননি। এরপরও মিথ্যা অপবাদের দায় কেন তাদের দেয়া হচ্ছে মর্মে প্রশ্ন রাখেন তিনি।