সিলেটবাসীর প্রতি পুলিশ সুপারের খোলা চিঠি

দৈনিকসিলেটডটকম
সিলেটে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন এর এক বছর পূর্ণ হচ্ছে ৩১শে আগস্ট। বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে তিনি সিলেটবাসীর উদ্দেশ্যে এক খোলা চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে তিনি বিগত এক বছরে জেলা পুলিশের কার্যক্রম তুলে ধরার পাশাপাশি সিলেটবাসীর কাছে আগামীতেও অব্যাহত সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন খোলা চিঠিতে বলেন,
ঐতিহ্যবাহী সিলেট জেলার পুলিশ সুপার হিসাবে ২০২২ সালের ৩১ আগস্ট যোগদান করি, সিলেট বাসীর নিরাপত্তা প্রদান ও আইনী সেবা নিশ্চিত করতে জেলা পুলিশের সকল অফিসার ফোর্স নিরন্তর কাজ করেছে। পূণ্যভূমি সিলেটের পুলিশ সুপার হিসেবে কাজ করার সুযোগ মর্যাদাপূর্ণ ও গৌরবময়। ৩৬০ আউলিয়ার বিচরণ ভূমি ও শ্রী চৈতন্যের প্রকৃতি কন্যা সিলেট, বাংলাদেশ তো বটেই বিশ্বের বুকেও বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে।
তিনি বলেন গত এক বছরে সিলেট জেলা পুলিশ ২৫৪৪টি মামলার সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করে ২২৭৯ জন অপরাধীকে গ্রেফতার করেছে। বিভিন্ন মামলায় পলাতক ও পরোয়ানাভূক্ত ১০ হাজারের অধিক অপরাধীকে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ পূর্বক ন্যায় বিচার নিশ্চিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। সীমান্তবর্তী জেলা হওয়ায় চোরাচালানের প্রকোপ তুলনামূলকভাবে বেশী, ১৬৪ জন চোরাকারবারিকে গ্রেফতার পূর্বক আনুমানিক ০৫ কোটি টাকার চোরাচালনকৃত মালামাল সরকারি কোষাগারে জমা দেয়া হয়েছে। বৈশ্বিক সমস্যা মাদকের অপব্যবহার নিয়ন্ত্রণেও জেলা পুলিশ ছিল তৎপর, আনুমানিক ০২ কোটি টাকার মাদক দ্রব্য উদ্ধার করে ৩৭১ জন মাদক কারবারিকে আইনের আওতায় নিয়ে এসেছে।
বিগত বছরে সিলেট বাসীর নিরাপত্তা রক্ষায় ২০ হাজারের অধিক পুলিশ টহল পরিচালনা করা হয়েছে। টহল কার্যক্রমকে বেগবান করতে বিশেষায়িত “কুইক রেসপন্স টীম (কিউআরটি)” গঠন ও জেলা পুলিশের পরিবহন পুলে নতুন যানবাহন সংযুক্ত করা হয়েছে। গোয়াইনঘাটের জাফলংয়ের আলোচিত পর্যটক হত্যা মামলা, ওসমানীনগরে ব্লু-লেস নিরীহ অটো চালক হত্যা মামলার রহস্য উদ্ঘাটনসহ অপহৃত ১৪ মাস বয়সী শিশুকে উদ্ধার করে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে মায়ের কোলে; ৩৩ বছর ধরে পালিয়ে থাকা খুনের আসামীও সিলেট জেলা পুলিশের চোখকে ফাঁকি দিতে পারেনি।
পুলিশ সুপার বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি “প্রবাসী”; সিলেটের সম্মানিত প্রবাসীদের তাৎক্ষণিক ও সার্বক্ষণিক সেবা প্রদানের জন্য হট লাইন নাম্বার (+৮৮০১৩২০১১৭৯৭৯) চালু করা হয়েছে। প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের মাধ্যমে প্রবাসীদের দীর্ঘদিনের পুঞ্জিভূত সমস্যা সমাধানে নেয়া হয়েছে নব উদ্যোগ। বিদেশে গমনকারী ও গমনিচ্ছুক ৭৫ হাজারের অধিক সম্মানিত নাগরিকদের ভেরিফিকেশন সম্পন্ন পূর্বক ই-পাসপোর্ট দেয়া হয়েছে, ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টারের মাধ্যমে ৫০ হাজারের অধিক পুলিশ ক্লিয়ারেন্স প্রদান করা হয়েছে।
গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো “নির্বাচন”, সিলেট জেলা পুলিশের স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ ভূমিকায় প্রতিটি নির্বাচনে ভোট কেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। ঐতিহ্যবাহী সিলেটের মানুষের রয়েছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক চমৎকার ঐতিহ্য। ঈদ, দুর্গা পূজা, মাঘী পূর্ণিমা ও বড়দিনের মতো উৎসবগুলোতে জেলা পুলিশের ছিল সতর্ক ও সজাগ উপস্থিতি।
সমাজের অসহায়, নির্যাতিত মানুষের পুলিশ বাহিনীর নিকট ন্যায় বিচারের প্রত্যাশা অনেক বেশী। সিলেট জেলা পুলিশ মানুষের আশা-ভরসার ধারক ও বাহক হয়ে উঠতে চায়। ইতোমধ্যেই পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগে সমাজের প্রান্তিক পরিবারের ৫৬ জন সদস্যের অন্তর্ভূক্তি অসহায় ও দরিদ্র মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে। চাকরি প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাসরত পরিবারের সদস্য; চাকরি পেয়ে ইতিহাসের অংশ হয়েছে জেলে, দিনমজুর, রিক্সা/অটো/সিএনজি চালক এবং বাক প্রতিবন্ধী পিতার সন্তানেরা।
পরিশেষে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন,সিলেটের সম্মানিত নাগরিক ও রেমিটেন্স যোদ্ধাগণ জেলা পুলিশের প্রতি আস্থা রেখেছেন এবং সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন, সেজন্য জেলা পুলিশের প্রতিটি সদস্যের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ রইল।