সেতু আছে সড়ক নেই, দুর্ভোগে লাখ লাখ মানুষ
দৈনিকসিলেট ডটকম :
সুনামগঞ্জের দিরাই কালনী নদীতে প্রায় ২২ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতু নির্মাণ করা হলেও সেতুটি মানুষের কাজে আসছে না। সেতু হলেও সড়ক না হওয়ায় ওই এলাকার মানুষ চরম দুর্ভোগে রয়েছেন। হাওরের জনপদ দিরাই-শাল্লার মানুষের যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়নে সেতুটি নির্মিত হলেও সড়ক না হওয়ায় সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতুটি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, সেতু নিমার্ণ করা হয়েছে কিন্তু সেই সেতুর সড়ক নিমার্ণ করা হয়নি। আমরা মনে করি সরকারের ২২ কোটি টাকা জলে গেছে। সেতু আছে অথচ সড়ক নেই। সড়ক হলে পূর্ব দিরাইয়ের দেড় লাখ মানুষের উপজেলা সদরের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন হবে। এ ছাড়াও সড়কটি চালু হলে দিরাই ও শাল্লার সঙ্গে রাজধানী ঢাকা ও বিভাগীয় শহর সিলেটের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগের দূরত্ব কমে আসবে।
জানা যায়, হাওরাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ উন্নয়নের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রায় ২২ কোটি টাকা ব্যয়ে ২১০ মিটার দীর্ঘ কালনী ব্রিজ নির্মাণ করা হয়। এছাড়া ৫ কোটি ১৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ব্রিজের দুই পাশে গাইডওয়াল দিয়ে ৩৭৫ মিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়।
কালনী নদীর ওপর সেতু নির্মাণ হলেও সড়ক না হওয়ায় ব্যবহৃত হচ্ছে না। হাওরপাড়ের মানুষের উপজেলা সদরের সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ ও ঢাকা সিলেটের সঙ্গে সড়ক দূরত্ব কমাতে সেতুটি নির্মিত হলেও তা স্থানীয়দের কোনো কাজে আসছে না। জমি অধিগ্রহণ, নকশা নিয়ে জটিলতা আর বিশ্বব্যাংক অর্থ ফিরিয়ে নেওয়া সব মিলিয়ে হযবরল অবস্থায় রয়েছে বলে জানা গেছে। পরিবেশ রক্ষা করে ওই সড়ক নির্মাণে প্রায় ৬০০ কোটি টাকা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রয়াত সংসদ সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের উদ্যোগে ২১০ মিটার দীর্ঘ ও ৬ দশমিক ১০ মিটার প্রস্থ সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৩ সালে। শুরুতে ব্যয় প্রাক্কলন করা হয় ১৮ কোটি ৭২ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। পরে ব্যয় বেড়ে হয় ২২ কোটি টাকা। ২০১৫ সালে সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ হয়।
কালনী সেতু থেকে সড়ক নির্মিত হলে কালনী-কলকলিয়া সড়কটি দিরাই থেকে পূর্ব দিরাই হয়ে সুনামগঞ্জ-পাগলা-আউশকান্দি-ঢাকা আঞ্চলিক সড়কে যুক্ত হবে। এতে দিরাই-শাল্লার সাথে রাজধানী ঢাকা ও সিলেটের দূরত্ব কমে আসবে। এছাড়া কালনী নদীর পূর্বাঞ্চালের দেড় লাখ মানুষ সরাসরি সড়কপথে উপজেলা সদরে যাতায়াত করতে পারবে। সেতু নির্মাণ সম্পন্ন হলেও এ পর্যন্ত কালনী-কলকলিয়া সড়কের কাজ শুরু না হওয়ায় সেতুটি কোনো কাজে আসছে না। এতে করে যাতায়াতের দুর্ভোগও কমছে না স্থানীয় বাসিন্দাদের।
স্থানীয় বাসিন্দা আলেক উদ্দিন বলেন, কালনী নদীর উপর কয়েক বছর আগে সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে সেতু হয়েছে। কিন্তু সেই সেতু দিয়ে চলাচল করার জন্য এখনো সড়ক নির্মাণ করা হয়নি এটাকে দায়িত্বের অবহেলা মনে করি। দ্রুত সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণ করতে আমরা দিরাইবাসী জোর দাবি জানাই।
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রথমে জমি অধিগ্রহণ-সংক্রান্ত জটিলতায় সংযোগ সড়কের নির্মাণকাজ আটকে যায়। পরে ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সড়কের জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হয়। কিন্তু অধিগ্রহণকৃত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার জায়গা নিয়ে আপত্তি জানায় পরিবেশ অধিদপ্তর। ওই পাঁচ কিলোমিটার এলাকা হাওরের মধ্যে হওয়ায় সেখানে সড়ক নির্মাণের ফলে হাওর ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে জানায় পরিবেশ অধিদপ্তর। আপত্তির কারণে নতুন করে সড়কের নকশা করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)।
এলজিইডির স্থানীয় কর্মকর্তারা জানান, প্রথমে এ প্রকল্পটি ছিল বিশ্বব্যাংকের অধীনে। জটিলতার কারণে অর্থ ফিরিয়ে নেয় বিশ্বব্যাংক। এতে আটকে যায় সংযোগ সড়কের নির্মাণকাজ।
এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী ইফতেখার হোসেন বলেন, পরিবেশ রক্ষায় আড়াই কিলোমিটার উড়াল সড়কসহ এই সড়কের জন্য প্রায় ৬০০ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাবনা অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। প্রকল্প অনুমোদন হলেই হাওরা লের মানুষের যাতায়াতের এই সড়কের পরবর্তী কাজ শুরু হবে। সুত্র: ইত্তেফাক