চুনারুঘাট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মিলবে চক্ষু চিকিৎসা
নুর উদ্দিন সুমন, হবিগঞ্জ
হবিগঞ্জের চুনারুঘাট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চক্ষু চিকিৎসাসেবা চালু করা হয়েছে। এর ফলে এখন থেকে এখানে চক্ষু চিকিৎসা, চশমা এবং ওষুধ বিনামূল্যে পাবেন সাধারণ রোগীরা। দীর্ঘদিন ধরে এ উপজেলাবাসী বিনামূল্যে চক্ষু চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত ছিলো।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অন্যান্য রোগের যথাযথ চিকিৎসা সেবা পেলেও চক্ষু চিকিৎসা সেবা মিলতো না। ফলে নিম্ন আয়ের লোকজন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে এ রোগের চিকিৎসা নিতে গিয়ে আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন হতো।
তাদের দুর্দশার চিত্র বিবেচনা করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সরকারি উদ্যোগে চক্ষু চিকিৎসা সেবা যুক্ত করা হয়। গত ৩ সেপ্টেম্বর সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করেন চুনারুঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোজাম্মেল হোসেন। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোজাম্মেল হোসেন জানান, প্রশিক্ষিত শামীমা ও মাহদিয়া লিপি নামে দু’জন নার্সের মাধ্যমে রোগীদের প্রয়োজনীয় চক্ষু সেবা ও হাসপাতাল থেকে বিনামূল্যে ওষুধ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ফলে এখন থেকে উপজেলায় লেন্স সংযোজনসহ চোখের ছানি অপারেশন, দৃষ্টি পরীক্ষা করে চশমা প্রদান, গ্লকোমা রোগ, ডায়াবেটিস জনিত চক্ষু রোগ, শিশু চক্ষু রোগ, রেটিনার রোগসমূহ, চোখের আঘাত জনিত সমস্যা, চোখের মনির (কর্ণিয়া) রোগসমূহ নেত্রনালীর রোগ, চোখের অন্যান্য সকল রোগের সেবা পাবেন রোগীরা। পরবর্তীতে আরও বৃহৎ আকারে এটি চালু করা হবে। উপজেরায় বিনামূল্যে সরকারী চক্ষু সেবা পেয়ে সাধারণ লোকজনও বেশ খুশি ।
চক্ষু রোগী আব্দুল সালাম ও রহিমা বেগম সহ বেশ কয়েকজন রোগীর সাথে আলাপকালে জানা যায়, একসময় টাকা থাকলেও উপজেলা ও জেলা সদরে প্রাইভেট হাসপাতালে চিকৎিসা নিতে হতো তাদের , তারপরও ভোগান্তির কমতি ছিলনা। এখন আমাদের সরকারী হাসপাতালে চক্ষু সেবা চালু হওয়ায় সময়ও বাচবে এবং সঠিক পরামর্শর পাশাপাশি চিকিৎসাও মিলবে। চুনারুঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোজাম্মেল হোসেন বলেন, চুনারুঘাট উপজেলা হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবা নিতে যাওয়া মানুষ যেন পূর্ণাঙ্গ সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারে সরকারের সেই উদ্যোগ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গত পহেলা সেপ্টম্বর থেকে ন্যাশনাল আই ভিশন কেয়ার সেন্টারের মাধ্যমে যারা চোখে কম দেখে এবং যারা চোখের সমস্যা আছে তারা চক্ষু সেবা নিতে পারছে। আমাদের দুজন নার্স আছে তারা চোখ দেখে চশমা দেয়, চোখের ড্রপ দেয় এবং কোনো ওষুধ লাগলে আমরা এখান থেকে সরকারিভাবে বিনামূল্যে সরবরাহ করছি। একইসাথে কারো যদি কোন সমস্যা থাকে ওনি সরাসরি ন্যাশনাল আই ভিশন কেয়ার সেন্টারে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আছে উনার সাথে ভিডিও কলের মাধ্যমে কথা বলে ওনি প্রেসক্রাইপ করে সে অনুপাতে আমাদের নার্সরা চিকিৎসাসেবা দেয়।
এটা অত্যান্ত সফলভাবে পরিচালিত হচ্ছে। এলাকার জনসাধারণ যারা চোখের সমস্যায় ভুগছে তারা এখানে এসে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা সহ ওষুধ নিতে পারছে। এতে করে আমাদের চোখে দেখার যে সমস্যা অন্ধত্বের যে সমস্যা এটা দূরীকরণে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে যাচ্ছি। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালে চুনারুঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। হাসপাতালে জুনিয়র কনসালট্যান্ট শিশু, জুনিয়র কনসালট্যান্ট মেডিসিন, জুনিয়র কনসালট্যান্ট গাইনি, জুনিয়র কনসালট্যান্ট সার্জারি ও জুনিয়র কনসালট্যান্ট অ্যানেস্থেসিস্ট পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। ৯ জন চিকিৎসকের মধ্যে আছেন মাত্র চারজন। খালি আছে আয়ুর্বেদ মেডিক্যাল অফিসারের পদ। সিনিয়র স্টাফ নার্স পাঁচজন, ল্যাব মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট ২ জন, ফার্মাসিস্ট ২ জন, আয়া ১ জন, সুইপার ২ জন, ওর্য়াডবয় ২ জনের পদ খালি।
জনবল অপ্রতুল হওয়ায় স্বাস্থ্যসেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। এ হাসপাতালে রয়েছে সুসজ্জিত অস্ত্রোপচার কক্ষ। রয়েছে সব ধরনের যন্ত্রপাতিও। দীর্ঘদিন ব্যবহার না হওয়ায় নষ্ট হচ্ছে সরঞ্জামগুলো। ইসিজি, আলট্রাসনোগ্রাফি, মেশিন ও প্যাথলজির র্কাযক্রম বন্ধ থাকায় হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগীরা শহরের ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে পরীক্ষা করাতে হয়। এতে গরিব ও অসহায় রোগীরা পড়েন বিপাকে। চুনারুঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোজাম্মেল হোসেন জানান, এ হাসপাতালের একটি ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন আছে। জনবল থাকায় রোগীরা এর সেবা পাচ্ছেন।
চিকিৎসক ও প্যাথলজিস্ট শূন্য পদ পূরণ করা হলে ল্যাব ও অস্ত্রোপচার কক্ষ চালু করা হবে। রোগীরা চিকিৎসা পাবেন। জনবল কম হলেও আমরা চিকিৎসাসেবা চালিয়ে যাচ্ছি।