ভারতের রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণপত্র নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়
দৈনিকসিলেটডেস্ক
ভারতের রাষ্ট্রীয় আমন্ত্রণপত্রে প্রথমবারের মতো ব্যবহার করা হলো ‘দ্য প্রেসিডেন্ট অব ভারত’। এর আগে সবসময়ই আমন্ত্রণপত্রে ‘প্রেসিডেন্ট অব ইন্ডিয়া’ উল্লেখ থাকত। নতুন এই সম্বোধনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ কেউ এই পরিবর্তনকে স্বাগত জানালেও অভিযোগ উঠেছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই এমন কাজ করেছে বিজেপি সরকার।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতে অনুষ্ঠিতব্য জি-২০ সম্মেলনে অংশ নেওয়ার কথা মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকসহ একাধিক বিশ্বনেতার। এই বিশ্বনেতা ও ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীদের নৈশভোজের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। তার সেই আমন্ত্রণপত্রেই লেখা ছিল ‘দ্য প্রেসিডেন্ট অব ভারত’।
কর্মকর্তারা বলছেন, কোনো রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে ভারতের নামকরণে এটাই প্রথম পরিবর্তন। তারা বলছেন, ‘আমাদের সংবিধানেও দেশের নাম ভারত বলে উল্লেখ রয়েছে। সংবিধানের প্রথম অনুচ্ছেদেই বলা হয়েছে, “ইন্ডিয়া, যা আসলে ভারত- কয়েকটি প্রদেশ নিয়ে গঠিত হবে”।’
শুধু আমন্ত্রণপত্রেই নয়, বিদেশি প্রতিনিধিদলের কাছে দেওয়া জি-২০ এর বুকলেটেও ইন্ডিয়ার জায়গায় ভারত লেখা আছে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘ভারত, মাদার অব ডেমোক্রেসি।‘
বুকলেটে বলা হয়েছে, ‘ভারত, যা আসলে ইন্ডিয়া, মানবসভ্যতার ইতিহাসের প্রাচীন সময় থেকে জনগণের সম্মতি নিয়ে দেশ পরিচালনা করে আসছে। ভারত আমাদের দেশের আনুষ্ঠানিক নাম। সংবিধানে এটি উল্লেখ আছে।’
এই পরিবর্তনের প্রশংসা করেছেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত বিশ্বশর্মা। তিনি বলেন, ‘রিপাবলিক অব ভারত- আমি খুশি ও গর্বিত যে আমাদের সভ্যতা অমৃতকালের দিকে সাহসের সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে।’
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান বলেন, ‘এই কাজটি আরও আগেই হওয়া উচিত ছিল। বিষয়টি মনকে প্রশান্তি দেয়। ভারতই আমাদের পরিচয়। আমরা এটা নিয়ে গর্বিত। রাষ্ট্রপতি আমাদের ভারত পরিচয়কে গুরুত্ব দিয়েছেন।’
বিজেপি নেতারা বিষয়টির প্রশংসা করলেও সমালোচনা করছে বিরোধীদলীয় নেতারা। অনেকের দাবি, ‘ইন্ডিয়া’ নামে বিরোধী জোট করায় বিজেপি সরকার এখন সবজায়গায় ‘ভারত’ নাম ব্যবহার করতে চাইছে।
রাষ্ট্রীয় জনতা দলের নেতা মনোজ ঝা বলেন, ‘কয়েক সপ্তাহ হয়েছে আমরা জোটের নাম দিয়েছি ইন্ডিয়া। আর এর মধ্যেই বিজেপি সবাইকে “রিপাবলিক অব ভারত” নামে আমন্ত্রণ পাঠাতে শুরু করেছে। সংবিধানে বলা আছে, “ইন্ডিয়া, যা আসলে ভারত”। আপনি আমাদের কাছ থেকে ইন্ডিয়াও নিতে পারবেন না, ভারতও নিতে পারবেন না।’
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল বলেছেন, ‘যদি “ইন্ডিয়া” জোট নাম পাল্টে “ভারত” রাখে, তাহলে কি বিজেপি সরকার আবার দেশের নাম পরিবর্তন করবে?’
দুই দিন আগেই বিজেপির অঙ্গসংগঠন আরএসএস দাবি করেছিল, ইন্ডিয়াকে ভারত বলে ডাকা উচিত। দলের প্রধান মোহন ভগবত বলেন, ‘আমাদের “ইন্ডিয়া” নাম ব্যবহার বন্ধ করে “ভারত” বলা উচিত। আমরা “ইন্ডিয়া” বলি যারা ইংরেজি বলে তাদের জন্য। সেভাবেই বিষয়টি প্রচলিত হয়ে গেছে। কিন্তু এখন আর সেই সময় নেই। দেশের নাম “ভারত”ই থাকবে আপনি বিশ্বের যেকোনো প্রান্তেই যান না কেন।’
জুলাইয়ে বিরোধী জোটের নাম ইন্ডিয়া রাখার পর থেকেই এই সংকট শুরু হয়েছে। নাম ঘোষণার দিন সংবাদ সম্মেলনে রাহুল গান্ধী বলেছিলেন, ‘এনডিএ ও ইন্ডিয়া এর লড়াই, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ইন্ডিয়ার লড়াই, বিজেপি আদর্শের সঙ্গে ইন্ডিয়ার লড়াই। কিন্তু আপনারা জানেন ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধে কেউ যদি দাঁড়ায়, তবে জয় কার হয়।’
জোটের এই নামকরণে তখন বিজেপি সরকারের পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছিল। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অভিযোগ করেছিলেন, ‘বিরোধীরা এই নাম ব্যবহার করে নিজেদের “পাপ” আড়াল করছেন। তারা আমাদের দেশকে লুট করতে চায়। দেশপ্রেম দেখাতে চায় না।’