নবীগঞ্জের ৫ সড়কে ৫ মানুষের লাখের চরম ভোগান্তি
দৈনিকসিলেট ডটকম :
‘ইতারে রাস্তা কয়নি, এক দিন গাড়ি চালাইলে তিন দিন যায় গায়ের বেতায়। হক্কল (প্রতিদিন) দিন রাইতে প্যারাসিটামল খাইয়া ঘুমান লাগে।’ ক্ষোভ নিয়ে এভাবেই নবীগঞ্জ-আইনগাঁও-হবিগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের অবস্থা বর্ণনা করছিলেন সালামতপুর বাসস্টেশনে দাঁড়ানো স্থানীয় সিএনজি অটোরিকশা চালক আব্দুল কাহার।
শুধু এই সড়কেই নয়। উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ এমন ৫টি আঞ্চলিক সড়কের অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়, যার কারণে ভোগান্তিতে আছেন অন্তত ৫ লাখ মানুষ। এগুলোরই একটি প্রয়াত অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার নামে নির্মিত আউশকান্দি-নিলাম বাজার সড়কের ৩ কিলোমিটার পাকা রাস্তার কার্পেটিং উঠে গিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বর্ষাকালে এলাকার ৪০/৫০ গ্রামের মানুষকে অনেক কষ্ট করে চলাচল করতে হয়।
নবীগঞ্জ উপজেলার অপর ৫টি বেহাল সড়কের কারণে অন্তত ৫ লাখ মানুষ ব্যাপক দুর্ভোগে পড়েছে। সড়কের কার্পেটিং উঠে গিয়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া ৫টি সেতুর অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। এলজিইডি অফিস বলছে, কোনো বরাদ্দ না থাকায় এসব সড়ক ও সেতুর সংস্কার বা মেরামত করা সম্ভব হচ্ছে না।
ইনাতগঞ্জ-বান্দেরবাজার ভায়া বুরহানপুর সড়কের নাদামপুর গ্রামের কাছে একটি কালভার্টের গোড়ার মাটি সরে যাওয়ায় সেটি ধসে গেছে। ফলে গুরুত্বপূর্ণ ওই সড়কে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। তাছাড়া উপজেলার ইনাতগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ সড়কে লতিবপুর গ্রামের কাছে একটি সেতু ধসে গেছে। যে কোনো সময় সেতুটি বিবিয়ানা নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সড়কের আনগাঁও পয়েন্টে অবস্থিত সেতুটির মাঝেখানে ভেঙে গর্ত হয়ে আছে এক বছর ধরে। এখানেও ব্যাহত হচ্ছে যান চলাচল।
দাউদপুর গ্রামের মুজিবুর রহমান জানান, নবীগঞ্জ উপজেলার কিবরিয়া সড়কের অবস্থা করুণ। বৃষ্টি হলে পানি জমে খালে পরিণত হয় সড়কটি।
জানা গেছে, সড়ক ও জনপথের মাধ্যমে উপজেলার আউশকান্দি-দীঘলবাক ও ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের ওপর দিয়ে যাওয়া শহীদ কিবরিয়া সড়কের নাম পরিবর্তন করে আউশকান্দি নিলাম বাজার সড়ক নামকরণ করে পুনর্নির্মাণের কাজ চলছে। অত্যন্ত ধীরগতিতে।
এছাড়া নবীগঞ্জ উপজেলার বাংলাবাজার-গোপলা বাজার সড়ক, ইনাতগঞ্জ-নবীগঞ্জ সড়ক, দৌলতপুর-আমকোনা সড়ক, ইনাতগঞ্জ-কাজীরগঞ্জ-নবীগঞ্জ সড়ক, নবীগঞ্জ-আনগাঁও- কান্দিগাঁও সড়কের অবস্থাও অত্যন্ত খারাপ। এসব সড়কের বেশির ভাগ অংশের কার্পেটিং নেই। ফলে সড়ক ৫টি নিয়ে নবীগঞ্জ উপজেলার ৫ লাখ মানুষ ব্যাপক দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন। এর মধ্যে নবীগঞ্জ-হবিগঞ্জ-আউশকান্দি আঞ্চলিক মহাসড়কের ৪০/৫০ কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন বিশাল আকার ধারণ করেছে।
বাসচালক আলকাছ মিয়া জানান, নবীগঞ্জ সড়কে ভাঙনের কারণে যাত্রী নিয়ে গাড়ি চালাতে ভয় লাগে। গত এক বছরে এই সড়কে ২০/২৫টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। নিম্নমানের কাজ এবং তদারকির অভাবে সড়কগুলোর এই পরিস্থিতি। অথচ হবিগঞ্জ ও নবীগঞ্জ এলজিইডি অফিসের সংশ্লিষ্টরা ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে নীরবতা পালন করছে।
ইউএনও সাব্বির আহমদ জানান, তাদের কাছে বরাদ্দ না থাকায় এসব সড়ক মেরামত করা সম্ভব হচ্ছে না। সড়কগুলো মেরামতের জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, সড়কগুলোর অবস্থা বর্ণনা করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে শিগগিরইই এ ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আসবে।