আত্মহত্যা প্রতিরোধে করণীয়

ডা. আহমদ রিয়াদ চৌধুরী
‘কর্মের মাধ্যমে আশার সঞ্চার’ প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়ে এবছর পালিত হচ্ছে ‘বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস’। আত্মহত্যা প্রতিরোধে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ২০০৩ সাল থেকে প্রতিবছর ‘১০ সেপ্টেম্বর’ দিবসটি বিশ্বব্যাপী পালন করা হয়। প্রতীকী হিসেবে বেছে নেয়া হয়েছে ‘হলুদ/কমলা’ রঙ। আত্মহত্যা এমন একটি ব্যাপার যেটি সংঘটিত হলে প্রতিকারের সুযোগ নেই। সুতরাং প্রতিরোধই সর্বোত্তম দাওয়াই। ইচ্ছাকৃতভাবে পরিণতির কথা জেনে যেকোন ঝুকিপূর্ণ কাজের মাধ্যমে নিজের মৃত্যু নিশ্চিত করাকে আত্মহত্যা বলে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আত্মহত্যা প্রতিরোধে ‘কর্মের মাধ্যমে আশার সঞ্চার'(creating hope through action), ‘সবাই মিলে একসাথে আত্মহত্যা প্রতিরোধ’, ‘মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়ন ও আত্মহত্যার প্রতিরোধ’ প্রভৃতি বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে। অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। কারণ আমরা এক অস্থির সময়ে অস্থির সমাজে বসবাস করছি। সোশ্যাল মিডিয়া বা শোঅফ মানসিকতা আমাদের হয় হতাশ করছে, নয় জেদি করছে। আমরা এখন মানবিক নই, পুরোদস্তুর যান্ত্রিক। তাই যন্ত্রের মত আমরা অল্পতেই এগজস্টেড হয়ে যাচ্ছি। আমাদের মনের শক্তি কমতে কমতে তলানিতে। তাই একটু প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির ফারাক হলেই বিষিয়ে উঠছে জীবন, প্রিয়মুখগুলো। সহজ সমাধান খুঁজছি আত্মহত্যায়। জীবন থেকে পালিয়ে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানাচ্ছে পৃথিবীতে ২৫০ কোটি মানুষ বিষণ্নতায় ভুগছে। প্রতি সেকেন্ডে আত্মহত্যা করছে ৪০ জন। বছরে ৮ লাখ মৃত্যুর কারণ আত্মহত্যা। প্রতিদিন আত্মহত্যার চেষ্টা করে ৬০ হাজার জন। বাংলাদেশ একটি মধ্যম আয়ের দেশ। আছে জনসংখ্যার চাপ। দূর্নীতির অভিশাপ। রাজনীতির উত্তাপ। এখানে বছরে ১০ হাজার মৃত্যুর কারণ আত্মহত্যা। প্রতিবছরে লাখে ৭.৮ জন আত্মহত্যা করে। ১১-২৫ বছর বয়সী নারীদের মৃত্যুর দুই-তৃতীয়াংশ কারণ। ৮% কিশোর-কিশোরীর আত্মহত্যার কল্পনা থাকে। ৫% এর মাথায় বারবার আত্মহত্যার চিন্তা ঘুরপাক খায়। দুঃখজনক ব্যাপার হল, প্রতি ২০ জন আত্মহননের চেষ্টাকারীর মধ্যে ১ জন দূর্ভাগ্যের শিকার হয়। গবেষণায় আরও জানা যায়, সংঘটিত আত্মহত্যার ৯০% সংঘটিত হয় কোন না কোন মানসিক ব্যাধির কারণে।
একই সময়ে উপস্থিত একাধিক মানসিক ব্যাধি (psychiatric co-morbidity) আত্মহত্যার ঝুঁকি বাড়ায়, বিশেষ করে যখন মাদকের অপব্যবহার বা বিষণ্নতার লক্ষণগুলি অন্য মানসিক ব্যাধি বা অবস্থার সাথে একত্রে অবস্থান করে। আত্মহত্যা এবং আত্মহত্যা প্রচেষ্টার ঝুঁকি নিয়ে অনেক মনোসামাজিক কারণও জড়িত। এর মধ্যে যেকোন ধরণের ক্ষতি বা লাইফইভেন্ট (বিশেষত, কর্মসংস্থান, পেশা, আর্থিক, আবাসন, বৈবাহিক সম্পর্ক, শারীরিক স্বাস্থ্য এবং ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা) সাম্প্রতিক জীবনের ইভেন্ট ও সম্পর্কের সমস্যা, বেকারত্ব এবং দীর্ঘস্থায়ী বা দীর্ঘমেয়াদী (chronic & long term) সমস্যাগুলোও যেমন- আইনি অভিযোগ কিংবা জটিলতা এর অন্তর্ভুক্ত। তীব্র বা চরম দুর্দশাগ্রস্ত মানসিক অবস্থা (বিশেষ করে অপমান, হতাশা, অপরাধ এবং লজ্জা) আত্মঘাতী ধারণা , পরিকল্পনা এবং প্রচেষ্টার সাথে জড়িত। আত্মঘাতী ধারণা ও আচরণ অভিন্নভাবে ভবিষ্যদ্বাণীমূলক না হলেও, তারা মানসিক দূর্বলতার সতর্কবার্তা, লক্ষণ এবং তাৎক্ষণিক অস্বস্তি কমিয়ে আত্মহত্যার ঝুঁকি মূল্যায়ন করার জন্য মানসিক স্বাস্থ্য মূল্যায়নের প্রয়োজনীয়তা নির্দেশ করে।
সব বয়সেই আত্মহত্যার ঝুঁকি রয়েছে। তবে পুরুষ, অবিবাহিত বা তালাকপ্রাপ্ত, বয়স্কদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি কয়েকগুণ বেশি। আবার বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ পেশা যেমন ভেটেরনারি চিকিৎসক, প্রান্তিক চাষী, ফার্মাসিস্ট, চিকিৎসক বিশেষত নারীচিকিৎসকদের মধ্যে আত্মহত্যার হার বেশি। বেকারত্ব বা চাকরি হারানোও আত্মহত্যার শীর্ষ কারণগুলোর একটি। এছাড়া মস্তিষ্কে গুরুতর আঘাতজনিত কারণে ও মানসিক রোগীদের আত্মহত্যার প্রবণতা বহুল স্বীকৃত।
আমাদের সমাজে বিশেষ করে পুরুষের জন্য মন খারাপ খুব আপত্তিকর বা অপমানজনক। মানসিক হাসপাতাল বা মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞদের কাছে চিকিৎসা নেয়ার ব্যাপারে আছে সামাজিক ভীতি বা ট্যাবু। পাগল ট্যাগ পাওয়ার ভয়। আর তাই একটু একটু করে মানসিক চাপ, দ্বন্দ্ব বাড়তে বাড়তে মন যখন আর নিতে পারছে না তখন ঘটছে বিস্ফোরণ। সেটি হতে পারে প্রচণ্ড হতাশা, মেজাজের ভারসাম্যহীনতা, উগ্রতা, আত্মহত্যা কিংবা মাদকের পথে পা বাড়িয়ে দেয়া। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) স্বাস্থ্যের সংজ্ঞায় মানুষের শারীরিক, মানসিক, সামাজিক ও আধ্যাত্মিক সুস্থতার শর্তারোপ করেছে। প্রত্যেকটি শারীরিক রোগের সাথে মনের একটি সম্পর্ক আছে। মানুষের মন বিচিত্র। তার আছে আবেগ-অনুভূতি, চিন্তা, বুদ্ধিমত্তা, স্মৃতি, ভাল-মন্দ বিচারিক ক্ষমতা আরও কত কী! মন ভালো তো শরীর ভালো, জগত ভালো। আমরা শরীরের যত্ন নিই কিন্তু মন ততটাই অবহেলিত। মানসিক স্বাস্থ্য ছাড়া কোন স্বাস্থ্যই সম্পূর্ণ নয়। মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়ন জনস্বাস্থ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ। বর্তমান সরকার মানসিক স্বাস্থ্য ও অটিজম নিয়ে যার পর নাই আন্তরিক। সরকার ইতোমধ্যে ‘মানসিক স্বাস্থ্য আইন ২০১৮’ মহান সংসদে পাশ করেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল মানসিক স্বাস্থ্যে সেরা উদ্ভাবনী ১০০ নারীর তালিকায় উঠে এসেছেন। এটি নিঃসন্দেহে জাতি হিসেবে আমাদের বড় অর্জন। আমরা তাকে অভিনন্দন জানাই। মানসিক স্বাস্থ্যে সরকারের বরাদ্দ স্বাস্থ্যবাজেটের ০.৪৪%। যেটি প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে তা স্বাস্থ্য বাজেটের ন্যুনতম ২.৭৮% হওয়া উচিত। এব্যাপারে আমরা সরকারের নীতিনির্ধারক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আশা জাগানিয়া ব্যাপার হল, আত্মহত্যা প্রতিরোধে দেশব্যাপী ‘সোসাইটি ফর সুইসাইড প্রিভেনশন বাংলাদেশ’ নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) মনোরোগবিদ্যা বিভাগে ‘সুইসাইড প্রিভেনশন ক্লিনিক’ ও বিভিন্ন সরকারি/বেসরকারি মেডিকেল কলেজে মনোরোগবিদ্যা বিভাগে তিনশতের অধিক বিশেষজ্ঞরা তাদের সীমিত সামর্থ্যের আলোকে সর্বোচ্চ সেবা দিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত।
মানসিক শব্দটি শুনলেই আমাদের কল্পনায় ভেসে ওঠে শেকলবন্দি উসকো-খুসকো মানুষ। কিংবা রাস্তায় ছেঁড়া কাঁথা জড়িয়ে বসে আবর্জনা টোকা কেউ। আদতে মানসিক রোগ বলতেই তেমন নয়। মানসিক শব্দটি এসেছে মন বা মানস থেকে। মানসিক না বলে মনোরোগ বললে হয়ত সেটি মন থেকে গ্রহণ করতে আরও সুবিধা হয়। মনোরোগকে মোটাদাগে দুই ভাগে ফেলা যায়-
১। বড় ধরণের; সিজোফ্রেনিয়া, বাইপোলার মুড ডিজর্ডার, মেজর ডিপ্রেশন ইত্যাদি।
২। ছোট ধরণের; দুশ্চিন্তাজনিত রোগ, শুচিবায়ু, যৌন সমস্যা, ঘুমের সমস্যা, মাদক বা আত্মহত্যার ধারণা ইত্যাদি।
মানসিক স্বাস্থ্য বলতে শুধু মানসিক রোগের অনুপস্থিতিকেই বোঝায় না। তার চেয়ে আরও বেশি কিছু। মানসিক রোগ না থাকলেও আপনি মানসিকভাবে সুস্থ নাও থাকতে পারেন। মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সঠিক ধারণা জনে জনে পৌঁছতে হবে। বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে মানসিক স্বাস্থ্যখাতকে আরও দৃঢ় করতে হবে। প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার প্রতিটি স্তরে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে। পর্যাপ্ত মনোচিকিৎসক, মনোবিদ, সাইকিয়াট্রিক নার্স ও অন্যান্য লোকবল নিয়োগ করতে হবে। মানসিক স্বাস্থ্যের একটি সমান্তরাল সাধারণ অবকাঠামো তৈরি করতে হবে। সাধারণ চিকিৎসকদের মানসিক স্বাস্থ্যে ন্যুনতম প্রশিক্ষিত করে তুলতে হবে। এগুলো রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও প্রতিশ্রুতির বিষয়। সমাজ উন্নয়ন ছাড়া মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়ন অসম্ভব। জনশিক্ষা, সচেতনতা, সাক্ষরতা ও শিক্ষার হার বৃদ্ধি, নারীর ক্ষমতায়ন, সামাজিক অনাচার-বিচারহীনতা রোধ, সামাজিক বৈষম্য কমানো, পিছিয়ে পড়াদের প্রণোদনা, মাদক-সন্ত্রাস দমন, বেকার সমস্যার প্রতিকার সবই সমাজ উন্নয়নের অংশ। মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নের জন্য আন্তঃবিভাগীয় সমন্বয়ও জরুরি। এর মধ্যে আবাসন, সড়ক-পরিবহন, নগর পরিকল্পনা, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাও অন্তর্ভূক্ত। দরকার আন্তর্জাতিক সহযোগিতা। বিশেষ করে আমাদের মত নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশের জন্য একা সংকত মোকাবেলা করা দুঃসাধ্য। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে। অর্থনৈতিক সহযোগিতা, গবেষনা ও নীতিমালা প্রণয়ন, জনবল প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তির ব্যবহার, বিস্তৃত পরিসরে নিরীক্ষণ এবং টেকসই উন্নয়নের পরিকল্পনা গ্রহণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এগিয়ে আসতে পারে। মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নের জন্য পাচটি মূল সুপারিশ করা যেতে পারে-
১। জনস্বাস্থ্য ও সামাজিক পদক্ষেপের মাধ্যমে মানসিক স্বাস্থ্যের যথাযথ উন্নয়ন সম্ভব ২। আন্তঃবিভাগীয় সহযোগিতা ছাড়া তা দুঃসাধ্য ৩। টেকসই উন্নয়ন কর্মসূচি মূল ভূমিকা রাখতে পারে ৪। আরও বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও মূল্যায়নের মাধ্যমে কর্মসূচি ঠিক করতে হবে ৫। পরবর্তী তথ্য-প্রমাণ ছড়িয়ে দিতে আন্তর্জাতিক কার্যক্রম হাতে নিতে হবে।
অধিকাংশ মানুষ দুকারণে আত্মহত্যা করে। প্রথমতঃ পূর্বপরিকল্পনা ছাড়া, হঠাৎ করে জেগে ওঠা আবেগীয় কারণে। দ্বিতীয়তঃ পূর্ব পরিকল্পনার অংশ হিসেবে। এদের ক্ষেত্রে আত্মহত্যার ধারণা প্রথমে মনে আসে, অনেকসময় পরোক্ষ মৃত্যুর চিন্তাও আগে আসতে পারে। তারপর চিন্তা মাথায় বারবার ঘুরপাক খায়, তারপর সিদ্ধান্ত নেয়, তারপর পরিকল্পনা করে এবং সর্বশেষ প্রচেষ্টা চালায়। যারা একবার আত্মহত্যার প্রচেষ্টা চালায় তারা বারবার তা অব্যাহত রাখে। তাদের ঝুঁকি বেশি। এ দীর্ঘ সময়ে তারা কাউকে না কাউকে আত্মহত্যার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ইঙ্গিত দেয়। আত্মহত্যার কিছু সতর্কবার্তা লক্ষণ আছে। এরমধ্যে প্রধান তিনটি এরকম- ১. আত্মহত্যা বা স্ব-ক্ষতির হুমকি ২. আত্মহত্যার উপকরণ খোঁজ করা- ঔষধ সংগ্রহ, অস্ত্রের খোঁজ করা ইত্যাদি ৩. মৃত্যু বা আত্মহত্যা নিয়ে আলোচনা, কথা বলা, লেখা বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করা।
এগুলো খামখেয়ালি নয় গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করতে হবে। তাকে মনোচিকিৎসকের কাছে নিতে হবে। আত্মহত্যা মানসিক সমস্যা ও মানসিক স্বাস্থ্যের অন্তর্গত। এসহজ সত্যটি অনুধাবন করতে হবে। স্বীকৃতি দিতে হবে। যারা আত্মহত্যার চেষ্টা করে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে তারা আমাদের সমাজের বিশাল হিমশৈলের ক্ষুদ্র চূড়ামাত্র। আপনার আমার আশেপাশে, আপনজন হয়ত মনে মনে আত্মহত্যার চিন্তা নিয়ে দিন কাটাচ্ছে। আমাদের সতর্ক হতে হবে। মনের খবর নিতে হবে। আত্মহত্যা প্রতিরোধযোগ্য। দরকার সবার সমন্বিত প্রয়াস। পরিবার থেকে শুরু। হ্যাপি প্যারেন্টিং আমাদের মূল প্রেরণার শক্তি। স্কুল আমাদের অনুশীলনের পাদপীঠ। স্কুলের বুলিং নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। শিক্ষকদের এগিয়ে আসতে হবে। বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করতে হবে। ইভটিজিং এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। ধর্ম একটি রক্ষাকবচ হতে পারে। সব ধর্মই আত্মহত্যাকে ধিক্কার জানায়। মিডিয়াকে আরও দায়িত্বশীল রিপোর্ট করতে হবে। আত্মহত্যার ছবি, ভিডিও প্রচার করা যাবে না। তারকা ব্যক্তিত্বদের আত্মহত্যার খবর ফলাও করে ছাপা যাবে না। উপায়-উপকরণের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ থেকে বিরত থাকতে হবে। সিনেমা-নাটকগুলোতে এমন দৃশ্য অবশ্যই সেন্সর করতে হবে। ঔষধ বিপণন আইন সংশোধন ও কার্যকর করতে হবে। ব্যবস্থাপত্র ছাড়া ঔষধ বিক্রয় নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। মানসিক স্বাস্থ্যসেবাকে আরও সহজলভ্য করতে হবে। মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে হবে। বিষণ্ণ রোগী বা আত্মহত্যার প্রচেষ্টারত রোগীকে দীর্ঘ মেয়াদে চিকিৎসা করতে হবে। কম ক্ষতিকারক এন্টিডিপ্রেস্যান্ট ঔষধ দিতে হবে। জ্বালানী গ্যাস, তেল ও গাড়ির ধোঁয়া বিষমুক্ত করতে হবে। সমস্যা ও দূর্ঘটনার উপকরণ সীমিত করতে হবে। সর্বোপরি সামাজিক পলিসি গ্রহণ এবং জনশিক্ষা ও সচেতনতা তৈরি করলে আমরা কার্যকরীভাবে আত্মহত্যা প্রতিরোধ করতে পারব। জাতিগত আমাদের একটি গৌরবোজ্জ্বল সংগ্রামী ইতিহাস আছে। কাজেই আত্মহত্যার মতো মানসিক ব্যাধির কাছে পরাজিত হতে আমরা রাজি নই। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও কর্মের মাধ্যমে ইতিবাচক পরিবর্তনে আমরা আশাবাদী।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক
মনোরোগবিদ্যা বিভাগ, সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ, সিলেট