আট মাসে সিলেটে ২.৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা
দৈনিকসিলেট ডেস্ক :
দেশে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত আট মাসে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ৩৬১ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। এর মধ্যে নারী শিক্ষার্থী ২১৪ জন এবং পুরুষ শিক্ষার্থী ১৪৭ জন। এসব শিক্ষার্থীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি, ১৬৯ জন রয়েছে স্কুলগামী শিক্ষার্থী, এরপর কলেজ শিক্ষার্থী ৯৬ জন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ৬৬ জন এবং মাদরাসার শিক্ষার্থী ৩০ জন।
২০২২ সালে এক বছরে ৫৩২ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। সে তুলনায় এ বছর আত্মহত্যার হার কিছুটা বেড়েছে। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আঁচল ফাউন্ডেশনের ‘শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার হার ক্রমবর্ধমান : কোন পথে সমাধান?’ শীর্ষক সমীক্ষায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল শনিবার সকাল ১১টার দিকে এক ওয়েবিনারে এই সমীক্ষার ফলাফল জানানো হয়।
সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী, আট মাসে আত্মহত্যাকারী স্কুল ও কলেজ শিক্ষার্থীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ঢাকা বিভাগে, যা ৩১.৩০ শতাংশ।
এরপর রয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগে, যা ১৪.১০ শতাংশ এবং খুলনা বিভাগে ১৩ শতাংশ। এ ছাড়া রাজশাহী বিভাগে ১১.৯০ শতাংশ, রংপুরে ৮.৯০ শতাংশ, বরিশালে ৮.৩০ শতাংশ, ময়মনসিংহে ১০ শতাংশ এবং সিলেটে ২.৫ শতাংশ। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ঢাকা শহরে পড়াশোনা ও বেড়ে ওঠার সহায়ক পরিবেশ না থাকায় এখানে আত্মহত্যা বেশি।
নারী শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা হার বেশি
আত্মহত্যার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি নারী শিক্ষার্থীদের। ৩৬১ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৫৯.৩০ শতাংশ নারী, পুরুষ ৪০.৭০ শতাংশ। নারী শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, অভিমান করে ২৬.৬০ শতাংশ, প্রেমঘটিত কারণে ১৮.৭০ শতাংশ, মানসিক ভারসাম্যহীনতার কারণে ৮.৪০ শতাংশ, পারিবারিক বিবাদের কারণে ৯.৮০ শতাংশ, যৌন হয়রানির কারণে ৫.১০ শতাংশ এবং পড়াশোনার চাপ ও ব্যর্থতার কারণে ১২.৬০ শতাংশ আত্মহত্যা করেছে।
আত্মহত্যায় স্কুলগামী শিক্ষার্থী বেশি
সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা করেছে স্কুলগামী শিক্ষার্থীরা। ৪৬.৮ শতাংশই স্কুলগামী। এর মধ্যে নারী শিক্ষার্থী ১১২ জন এবং পুরুষ ৫৭ জন। কলেজগামী শিক্ষার্থী ২৬.৬০ শতাংশ। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ১৮.৩০ শতাংশ, মাদরাসার শিক্ষার্থী ৮.৩১ শতাংশ।
আত্মহত্যা বেশি বয়ঃসন্ধিকালে
সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা করেছে ১৩ থেকে ১৯ বছর বয়সী শিক্ষার্থীরা। তাদের হার ৬৭.৩ শতাংশ। এর মধ্যে নারী শিক্ষার্থী ১৫৯ জন, পুরুষ ৮৪ জন। ২০ থেকে ২৫ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার হার ২১.৬ শতাংশ। ২৬ থেকে ৩০ বছরের শিক্ষার্থীর হার ২.৮০ শতাংশ। ১২ বছরের নিচে ৮.৩০ শতাংশ।
অভিমানে আত্মহত্যা বেশি
শিক্ষার্থীদের মধ্যে অভিমান করে আত্মহত্যার হার ৩১.৬০ শতাংশ। এর মধ্যে নারী ও পুরুষ শিক্ষার্থীর হার সমান। প্রেমঘটিত কারণে ১৫.৮০ শতাংশ, পারিবারিক সমস্যার কারণে ৬.৯ শতাংশ, মানসিক অস্থিরতা থেকে ১১.৪ শতাংশ, যৌন নির্যাতনে ৩.৩০ শতাংশ ও প্রাতিষ্ঠানিক চাপে ৪.৪ শতাংশ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে।
মাদরাসা শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা
গত আট মাসে ৩০ জন মাদরাসা শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। এর মধ্যে ৫৩.৩০ শতাংশ নারী, পুরুষ ৪৬.৭০ শতাংশ। অভিমানে মাদরাসার শিক্ষার্থীর ৪০ শতাংশের আত্মহত্যা।
ওয়েবিনারে উপস্থিত ছিলেন হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি ফরিদা ইয়াসমিন, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দীন আহমদ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির প্রগ্রাম ম্যানেজার শহীদুল ইসলাম, আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তানসেন রোজ প্রমুখ।
ডা. হেলাল উদ্দীন আহমদ বলেন, ‘এত শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করায় আমাদের উচিত তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে মনোযোগী হওয়া।’