শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবার বেহাল দশা

শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি
মৌলভীবাজারে শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবার বেহাল দশা। চিকিৎসকরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসা-যাওয়া করছেন ইচ্ছেমত, নেই কোন সময় সীমা এমনই অভিযোগ উঠেছে। ফলে রোগীরা পাচ্ছেন না কাঙ্খিত সেবা। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা হতে হতদরিদ্র রোগীরা ডাক্তার দেখাতে আসেন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। এখানে ডাক্তার দেখাতে এসে প্রায়ই খারাপ আচরণের শিকার হচ্ছেন দরিদ্র রোগীরা।
গত ১১ সেপ্টেম্বর জানাউড়া গ্রামের জাহানারা বেগম (৬৫) দাঁতের ব্যথায় ছটপট করতে থাকেন। মায়ের ছটপট দেখে চিকিৎসা করাতে ছেলে মাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। বহির্বিভাগে টিকেট কেটে তিনি ডেল্টাল সার্জন কক্ষে প্রবেশ করেন। এসময় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ডেন্টাল) মো. সাইফুল আলম চৌধুরী চিকিৎসা নিতে আসা জাহানারা বেগমের সাথে খারাপ আচরণ করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গত মঙ্গলবার দুপুর দেড়টায় সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, টিকেট কাউন্টারে একজন মহিলা বসে আছেন। এছাড়া সকল চিকিৎসকদের কক্ষগুলোতে তালা ঝুলছে। রোগীরা ডাক্তার দেখাতে কেউ কেউ এসে চিকিৎসা না নিয়ে ফেরত যাচ্ছেন, আবার কেউ কেউ ইমারজেন্সি রুমে গিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
এসময় সংবাদকর্মীদের দেখে মেডিকেল অফিসার (ডিজিজ কন্ট্রোল) ডাক্তার পার্থ সারথি সিংহ তিনি বলেন, ২টার আগে কক্ষগুলি তালা দেওয়া হয়নি কিন্তু রোগী নাই বিধায় আজ কক্ষগুলা বন্ধ করেছি। রোগীদের সাথে খারাপ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, গতকাল যে ঘটনা ঘটে ছিল, আমি ছিলাম, সমাধান হয়ে গেছে। আপনার বাড়ী কি শ্রীমঙ্গল উপজেলায়? এই উপজেলায় যারা ডাক্তার দেখাতে আসে, তার মধ্যে বেশিভাগ লোক আসে শুধু ঔষধ নিতে। ডাক্তার বলতে পারে? মেডিসিন নিবেন না, চিকিৎসা নিবেন? তিনি হুমকি দিয়ে বলেন, আপনারা কি কালকের ঘটনাকে বড় করতে চাচ্ছেন? যা পারেন করেন?
এমন অভিযোগ করেন ভূক্তভোগী রোগী জাহানারা বেগমের ছেলে ফয়ছল মিয়া তিনি বলেন, আমার মা দাঁতের ব্যথায় ছটপট করতে থাকেন, আমি মায়ের ছটপট করতে দেখে মাকে নিয়ে সরকারি হাসপাতালে যাই দাঁতের ডাক্তার দেখানোর জন্য। দাঁতের ডাক্তার আমার মাকে বলেন, মেডিসিন নিবায়? না চিকিৎসা নিবায়? আপনারা ফ্রিতে ঔষধ নেয়ার জন্য এখানে এসে শুধু শুধু প্রতিদিন ভিড় করেন। দাঁতের ডাক্তার বাহিরে অনেক আছেন, সরকারি হাসপাতালে আসতে হবে কেন? পরে আমি প্রতিবাদ করলে ডাক্তার পার্থ সারথি সিংহ অভিযোগ বক্সে অভিযোগ করতে বলেন।
উপজেলার আশীদ্রোন গ্রামে আব্দুল বারিকের ছেলে মো: দুলাল মিয়া বলেন, আমি গত ১৫/২০ দিন আগে দাঁতের ডাক্তার দেখাতে সরকারি হাসপাতালে যাই, দাঁতের ডাক্তার আমার সাথে খুব বাজে আচরণ করে। আমাকে ডাক্তার বলে কেন সরকারি হাসপাতালে আইছি? প্রাইভেটে দেখাইতাম? পরে আমি প্রাইভেটে ডাক্তার দেখাই।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট (ডেন্টাল) মো. সাইফুল আলম চৌধুরী বলেন, আমি কিন্তু ঐ মহিলাকে এভাবে বলিনি। আমি বলেছি উনার দাঁতে ময়লা জমে পাথর হয়েগেছে। স্ক্যানার করার লাগবে। আমাদের এখানে স্ক্যানার নাই। তাই উনাকে ঔষধ নিবেননি বলছি আর বাহির হতে স্ক্যানার করার কথা বলেছি। উনি হয়তো আমার কথা বুঝেননি।
এবিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী বলেন, দুইটা আগে বর্হিবিভাগ কোন ভাবেই বন্ধ করতে পারবে না। যদি চেম্বার বন্ধ করে এমন অভিযোগ আসলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। রোগীদের সাথে খারাপ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, রোগীর সাথে কোনো ডাক্তার খারাপ আচরণ করতে পারবে না। আমি খুব শীঘ্রই মিটিং করবো মিটিংগে এবিষয়ে আলোচনা করবো।