জকিগঞ্জে মালটা চাষে কৃষকের ভাগ্য বদল

দৈনিকসিলেট ডটকম
মালটা চাষ করে সাড়া ফেলেছেন জকিগঞ্জের সুলতানপুর ইউনিয়নের হালঘাট গ্রামের কৃষক আছাব আলী। উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে বাড়িসংলগ্ন পতিত জমিতে বারি-১ জাতের মালটার বাগান গড়ে তুলেছিলেন। সেই বাগান থেকে প্রতিমাসে এখন লক্ষাধিক টাকা আয় করছেন তিনি।
২০১৬ সালে বাড়ির পাশে পতিত থাকা জমিতে মালটার বাগান গড়ে তোলেন আছাব আলী। তিন ছেলে কাওছার আহমদ, আলী হোসেন ও ইসমাইল আলীকে নিয়ে বাগানের পরিচর্যা করতে থাকেন। চারা রোপণের তিন বছরের মাথায় আশাতীত ফলন পান তারা। ২০১৯ সালে মালটা বিক্রি করে প্রায় ৫ লাখ টাকা আয় করেন আছাব আলী। পরের বছর আয় হয় ৭ লাখ টাকা। সাফল্য আসায় পরবর্তী সময়ে আরও এক একর জায়গায় মালটা চাষ করেন। এতেই ঘুরে যায় ভাগ্যের চাকা। আছাব আলীর ছেলে আলী হোসেন জানান, বাগান থেকে ২০২১ সালে প্রায় ১২ লাখ টাকা আয় হয় তাদের। পরের বছর আয় হয়েছে প্রায় ১৩ লাখ টাকা। চলতি বছর গত সোমবার থেকে বাগানের মালটা বিক্রি শুরু করেছেন। এ বছর ফলন আরও ভালো হয়েছে। মালটার সাইজ অন্য বছর থেকে বড় এবং দাম ভালো থাকায় এ বছর আরও বেশি আয় হবে বলে আশাবাদ প্রকাশ করেন তিনি।
আছাব আলীর বাগানে গিয়ে দেখা যায়, গাছে গাছে ঝুলছে মালটা। ফলের ভারে নুইয়ে পড়ছে ডালপালা। ফল পাকতে শুরু করেছে। দৃষ্টিনন্দন বাগানে প্রচুর দর্শনার্থীর ভিড়।
আছাব আলী জানান, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা বলাই চন্দ্র বিশ্বাসের পরামর্শে ২০১৬ সালের এপ্রিলে মালটা চাষ শুরু করেন তারা। চারা, সার, কীটনাশক ও পরামর্শ সবই বিনামূল্যে দেয় উপজেলা কৃষি অফিস। মাত্র চার বছরের মাথায় ৫ লক্ষাধিক টাকার মালটা বিক্রি করেন। এর পর থেকে প্রতি বছরই ফলন ও বিক্রি বেড়েই চলেছে। তিনি বলেন, যে জমিতে সব মিলিয়ে বছরে ২০ হাজার টাকার ধান পাওয়া যেত না, সেখান থেকে এখন মাসে লাখ টাকার বেশি আয় হচ্ছে।
আলাপকালে আছাব আলী আরও জানান, স্থানীয়ভাবে প্রচুর চাহিদা থাকায় পাইকারির পাশাপাশি বাগান থেকে খুচরা মালটা বিক্রি করছেন তিনি। বিদেশি মালটা প্রতি কেজি ১৯০-২০০ টাকায় বিক্রি হলেও সবুজ দেশি মালটা বিক্রি করছেন মাত্র ১২০ টাকা কেজিতে। বাগানে ফলনও এসেছে ভালো। গাছপ্রতি ৩০ থেকে ৫০ কেজি মালটা পাওয়া যাবে বলে জানান তিনি।
জকিগঞ্জ উপজেলার ভারপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা শেখ ফরিদ জানান, আসাব আলীর বাগানটি শুধু সিলেট বিভাগ নয়, দেশের অন্যতম একটি মালটা বাগান। তাদের এ সাফল্য দেখে জকিগঞ্জে আরও তিনটি বাগানে ইতোমধ্যে মালটার চাষ শুরু হয়েছে। কৃষি বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছাড়াও আশপাশের জেলার কৃষকরা বাগানটি দেখতে আসেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ কে এম ফয়সাল জানান, আছাব আলীর সাফল্যে তিনি অভিভূত। সিলেটের পতিত জমি চাষের আওতায় আনতে অনুকরণীয় হতে পারে এ কৃষক পরিবার।
উপজেলা চেয়ারম্যান লোকমান উদ্দিন চৌধুরী বলেন, কৃষক আছাব অনেকের চোখ খুলে দিয়েছেন। তিনি প্রমাণ করেছেন, জকিগঞ্জের মাটি মালটা চাষের উপযোগী। তিনি আমাদের সামনে নতুন একটি সম্ভাবনা উপস্থাপন করেছেন।