জরাজীর্ণ ভবনে পাঠদান, পাঁচ বছরেও শেষ হয়নি স্কুল ভবনের কাজ
![](https://dainiksylhet.com/images/icon.jpg)
দৈনিকসিলেট ডটকম
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়নের বৃন্দাবনপুর আবুল ফজল চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের চার তলাবিশিষ্ট নতুন ভবনের কাজ প্রায় ৫ বছরেও শেষ হয়নি। নির্ধারিত সময়ের চেয়ে তিন বছর বেশি অতিবাহিত হলেও মাত্র দোতলা পর্যন্ত আংশিক নির্মাণ শেষে কাজ ফেলে রেখেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ভবন নির্মাণ সম্পন্ন করতে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে বারবার ধরনা দিলেও কাজ হচ্ছে না। শ্রেণিকক্ষের সংকটের কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।
জানা যায়, আবুল ফজল চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়টি ১৯৮৬ সালে স্থাপিত হয়। বর্তমানে এই বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী রয়েছে ৩৬০ জন। শিক্ষক ও কর্মচারী ২০ জন। বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবনটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়ায় ২০১৮ সালে আবুল ফজল চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়টি ৩ হাজার নতুন স্কুল নির্মাণ প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত হয়। গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে একটি চার তলাবিশিষ্ট ভবন নির্মাণ করতে বলা হয়। এ জন্য প্রায় পৌনে তিন কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ২০১৮ সালের ৩ নভেম্বর নতুন ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন মৌলভীবাজার-৪ আসনের (কমলগঞ্জ-শ্রীমঙ্গল) সংসদ সদস্য ও অনুমিত হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি, বীর মুক্তিযোদ্ধা উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদ। ভবনের কাজ শেষ করার জন্য ১৮ মাস সময় নির্ধারণ করে ২০১৯ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া হয়। ২০১৯-২০ সালে ভবনের দোতলার ছাদ ঢালাইয়ের পর বর্তমানে প্রায় তিন বছর ধরে কাজ বন্ধ অবস্থায় আছে।
সরেজমিন বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, স্কুলের পুরাতন টিনশেড ঘরে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। চার তলাবিশিষ্ট ভবনের তিন তলার ছাদ ঢালাইয়ের জন্য বাঁশ লাগানো রয়েছে। কিন্তু আলাপকালে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা জানান, কয়েক বছর ধরে নতুন ভবনের কাজ বন্ধ আছে। এতে বিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষ সংকটে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে।
আলাপকালে বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থী সৃষ্টি রানী দাস, ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ রহমান সাজু ও নিশাত জাহান রিজু তালুকদার জানায়, শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারণে ছোট ছোট রুমে গাদাগাদি করে ক্লাস করানো হচ্ছে। এসব রুমে ক্লাস করতে তাদের ভালো লাগে না। তারা জানায়, বিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থীর স্বপ্ন ছিল নতুন ভবনে ক্লাস করবে। কিন্তু এরই মধ্যে শিক্ষার্থীদের অনেকেই এসএসসি দিয়ে বিদ্যালয় ছেড়েছে।
আবুল ফজল চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিছবাহুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘অনেক কষ্ট করে আমরা একটি ভবন পেয়েছিলাম। কিন্তু দীর্ঘ ৩ বছর ধরে কাজ বন্ধ আছে। আমরা জানি না, কেন কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। অবকাঠামো সংকটের কারণে শিক্ষার্থীদের পাঠদানে সমস্যা হচ্ছে।’
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি প্রভাষক মো. আবদুল আহাদ বলেন, ভবনের অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করতে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে বারবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। গত তিন বছর অনেক দপ্তরে তারা যোগাযোগ করলেও কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না। বিদ্যালয় ভবনের বাকি কাজগুলো দ্রুত সম্পন্নের দাবি জানান তিনি।
জানতে চাইলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক মো. ফজলুর রহমান বলেন, করোনা মহামারির সময়ে নির্মাণকাজ বন্ধ রাখা হয়। পরে রড-সিমেন্টসহ নির্মাণসামগ্রীর দাম অনেক বেশি বেড়ে যায়। যার জন্য আর কাজ করানো হয়নি। জিনিসপত্রের দাম কিছুটা স্থিতিশীল হলে আবার কাজ শুরু করা হবে।
মৌলভীবাজার শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শামসুল আরেফিন খান বলেন, নির্মাণসামগ্রীর দামের ঊর্ধ্বগতির কারণ দেখিয়ে ঠিকাদার কাজ বন্ধ রেখেছেন। তাঁদের সঙ্গে কথা হয়েছে। ১ মাসের মধ্যে যদি বিদ্যালয় ভবনের কাজ শুরু না করলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন করা হবে।