রাজাকার-আলবদরবাহিনীর উত্তরসূরীরা এখনও সক্রিয়: বিমান প্রতিমন্ত্রী
নুর উদ্দিন সুমন, হবিগঞ্জ প্রতিনিধি:
হবিগঞ্জের চুনারঘাট উপজেলার পাইকপাড়া ইউনিয়নের ফুলপুর গ্রামে বধ্যভূমি মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধ এর উদ্বোধন করা হয়েছে।
রবিবার (১৭ সেপ্টেম্বর ) সন্ধ্যায় ফলক উন্মোচনের মাধ্যমে এই স্মৃতিসৌধের উদ্বোধন করেন সংসদ সদস্য বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব এডভোকেট মাহবুব আলী । উদ্বোধনের পর স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি অপর্ণ করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন চুনারুঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আব্দুল কাদির লস্কর, উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিদ্ধার্থ ভৌমিক, অফিসার ইনচার্জ ওসি রাশেদুল হক, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবু তাহের, ভাইস চেয়ারম্যান আবিদা খাতুন, পিআইও প্লাবন পাল, উপসহকারী প্রকৌশলী মনির হোসেন জমদ্দার, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আবেদ হাসনাত চৌধুরী সনজু, কৃষকলীগের সভাপতি মুজিবুর রহমান, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শাহজাহান সামী, সাধারণ সম্পাদক সায়েম তালুকদার সহ আরো অনেকেই।
স্মৃতিসৌধ উদ্বোধনকালে বিমান প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব এডভোকেট মাহবুব আলী বলেন, হানাদারবাহিনী তাদের নিশ্চিত পরাজয় বুঝতে পেরে বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করতে স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার-আলবদরবাহিনীর সহযোগিতায় আত্মসমর্পণের প্রাক্কালে দেশের বহু গুণীজনকে নির্মমভাবে হত্যা করে। এ থেকে বোঝা যায় পরাজয়ের শেষ মুহুর্তেও রাজাকার-আলবদর বাহিনী দেশের বিরুদ্ধে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে গেছে। এমনকি স্বাধীনতার পর তারা সক্রিয় থেকেছে। রাজাকার-আলবদরবাহিনীর উত্তরসূরীরা এখনও সক্রিয়। দেশের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। তাদেরকে শেকড় থেকে উচ্ছেদ করতে হবে। যারা এখনও পাকিস্তানের দিকে তাকিয়ে থাকেন, মনে করেন পাকিস্তানের ধারায় দেশ পরিচালিত হবে, তারা মীর জাফর। বঙ্গবন্ধুর কথা মতো, তাঁর আদর্শ অনুযায়ী মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার সঠিকপথে দেশকে পরিচালিত করছে, আগামীতেও করবে। জানা গেছে, হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার ৪ নং পাইকপাড়া ইউনিয়নের ফুলফুর গ্রামের বধ্যভূমিতে এক পরিবারের গোলক দেবনাথ, রাম চরণ দেবনাথ, শ্যাম সুন্দর দেবনাথ, গোপেন্দ্র দেবনাথ, প্রফুল্ল দেবনাথ, রাজেন্দ্র দেবনাথ, মাখন দেবনাথ, ঠাকুরধন দেবনাথ, সুরেশ দেবনাথ সহ ৯ জন মুক্তিকামী মানুষকে ১৯৭১ সালের ১৮ বৈশাখ পাক হানাদার বাহিনী নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। এতদিন সেখানে ছিল না কোনও স্মৃতিসৌধ। শুধু একটি স্মৃতিফলকই সাক্ষ্য দিত সেই গণহত্যার। তবে এবার সেখানে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে একটি স্মৃতিস্তম্ভ। রয়েছে সীমানা প্রাচীর এবং দৃষ্টিনন্দন ফটক।
বিমান প্রতিমন্ত্রীর ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে টি আর কর্মসূচির আওতায় উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের সার্বিক তত্ত্বাবধানে কাজটি বাস্তবায়ন করেছে। এ বছরেরই জুন মাসে কাজ শুরু হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধ নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা।
মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একাত্তরের বিজয়ের প্রাক্কালে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও তাদের দোসররা যে হবিগঞ্জে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল তার অন্যতম সাক্ষী ফুলফুর বধ্যভূমি। বিজয়ের পরপর ১৮ বৈশাখ ফুলফুর এলাকার এই বধ্যভূমি থেকে একই দঁড়িতে বাঁধা ৯ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছিল। এর পর থেকে সেখানে ছুটে যেতেন মুক্তিযোদ্ধা ও স্বজনহারা মানুষ।