রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে ওআইসিকে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানালেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী
নিউইয়র্ক থেকে বিশেষ প্রতিনিধি
রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে ওআইসি-কে পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ। মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩) জাতিসংঘ সদর দপ্তরে আয়োজিত রোহিঙ্গা সংকট বিষয়ে ওআইসি কন্টাক্ট গ্রুপের সভায় প্রদত্ত বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন, এমপি এ আহবান জানান।
মিয়ানমারের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা মুসলিমদের বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার পর ছয় বছর ধরে যে ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজ করছে তা তুলে ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ মানবিক কারণে প্রায় ১২ লক্ষ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে। কিন্তু তাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসন বিলম্বিত হওয়ার ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি, জনসংখ্যা এবং পরিবেশের উপর মারাত্মক চাপ সৃষ্টি করছে।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসনে ২০১৭ এবং ২০১৮ সালে মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষর করা সত্ত্বেও উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি হয়নি। প্রত্যাবাসনকে ঘিরে অনিশ্চয়তার কারণে রোহিঙ্গা জনগণ হতাশায় ভুগছে এবং ক্যাম্প ও আশেপাশের এলাকার নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে, যা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের টেকসই ও স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনের মাধ্যমে এই সঙ্কটের স্থায়ী সমাধান করা বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনের সুবিধার্থে বাংলাদেশ মিয়ানমারের সাথে কাজ করছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘বৈশ্বিক বিভিন্ন সংকটের কারণে রোহিঙ্গা সংকটের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগ ও সমর্থন কমে যাচ্ছে। ২০২৩ সালের জন্য রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তার প্রয়োজনীয় তহবিলের মাত্র ৩০% পাওয়া গেছে, ফলে তাদের জন্য খাদ্য রেশন কমে গেছে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওআইসি সদস্য দেশগুলোর মানবিক সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন না হওয়া পর্যন্ত তাদের সহায়তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান।
ড. মোমেন আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের মাধ্যমে মিয়ানমারের জবাবদিহিতার জন্য গাম্বিয়ার উদ্যোগের প্রশংসা করেন, যেখানে মামলার বিষয়ে মিয়ানমারের আপত্তি প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, কানাডা, নেদারল্যান্ডস, যুক্তরাজ্য, জার্মানি এবং ফ্রান্সসহ অন্যান্য দেশগুলিও এই মামলায় অংশ নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। সভায় গাম্বিয়ার আইন মন্ত্রী মামলার সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে সভাকে অবহিত করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের দুর্দশা লাঘবে ওআইসিকে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান এবং টেকসই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারে উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে সমন্বিত প্রচেষ্টার উপর গুরুত্বারোপ করেন।
সভা পরিচালনা করেন ওআইসি’র মহাসচিব হিসেইন ব্রাহিম তাহা। সভায় তুরস্ক, সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, গাম্বিয়া, জিবুতি, মিশর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ব্রুনেই ও সেনেগাল আলোচনায় অংশ নেয়।