উন্নত জাতের ভীড়ে হারিয়ে গেছে দেশী জাতের লালশাক
নাহিদ মিয়া,মাধবপুর প্রতিনিধি
লালশাক দেশের একটি জনপ্রিয় খাদ্য। একসময় আমাদের দেশের মানুষ শুধু শীতকালে বাড়ির আঙ্গিনায় ও আশপাশের অপেক্ষাকৃত উঁচু জমিতে লালশাক চাষাবাদ করে নিজেদের খাদ্যের চাহিদা পূরণ করতো।
দেশীয় বা স্থানীয় জাতের খুবই সুস্বাদু ও পুষ্টিকর এই শাক ছিল সকলের পছন্দের খাবার। বানিজ্যিক ভিত্তিতে কৃষিপণ্য উৎপাদন শুরু হওয়ায় কম সময়ে অধিক উৎপাদনের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয় কৃষকরা। কৃষি বিজ্ঞানীরা অধিক উৎপাদনশীল নতুন নতুন জাত উদ্ভাবন করেন। আর এসব নতুন জাতের ভীড়ে হারিয়ে গেছে দেশীয় জাতের লালশাক।
সুরমা চা বাগান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নয়ন চৌধুরী জানান, আগে লালশাক দিয়ে ভাত মাখলে ভাত লাল হয়ে যেতো। এতো সুস্বাদু ছিল যে শুধু লালশাক দিয়েই পেটভরে ভাত খেতে পারতাম। এখন লালশাক আছে কিন্তু সেই স্বাদ আর নেই।
সবজি ব্যাবসায়ী মোঃ জাফর বলেন, আগের লালশাক রান্না করলে রক্তের মতো লাল হয়ে যেতো, এখন আর সেই লালশাক নেই। মাধবপুর উপজেলার তেলিয়াপাড়া বাজারের সার কীটনাশক ও বীজ ব্যাবসায়ী মোঃ আবুল কালাম জানান, এখন বাজারে বিভিন্ন কোম্পানির উন্নত জাতের লালশাকের বীজ পাওয়া যায়।
স্থানীয় জাতের বীজ পাওয়া যায় না। কম উৎপাদন ও বেশি সময় লাগার কারণে কৃষকরা দেশীয় জাতের লালশাক দীর্ঘদিন যাবত চাষাবাদ না করায় এই জাতটি হারিয়ে গেছে। কৃষকরা বানিজ্যিক ভিত্তিতে চাষাবাদের জন্য অধিক ফলনশীল জাতের লালশাক বীজ ক্রয় করে। তিনি জানান, এখন বাজারে আর এম যাদু, আলতাপেটি, ললিতা, রক্ত রাঙা, পিংকি কুইন, বারি লালশাক ১ জাতের লালশাক বীজ পাওয়া যায়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আল মামুন হাসান জানান, এখন বাজারে অনেক উন্নত জাতের লালশাক বীজ পাওয়া যায়। মাত্র ৩০ দিনের মধ্যে এসব শাক বাজারজাত করে এই জমিতে আবারও চাষ করা যায়। বারি লালশাক সারা বছর চাষাবাদ করা যায়।আগে মানুষ শীতকালে নিজেদের জন্য অল্প জমিতে লালশাক চাষ করতো। কোন ধরনের রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করতেন না, তাই সুস্বাদু ছিল।
মাটির গুনগত মান ঠিক থাকলে ও সঠিক মাত্রায় জৈবসার ব্যবহার করলে এবং রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার না করলে উন্নত জাতের লালশাকের স্বাদও দেশীয় জাতের লালশাকের মতোই হবে।