সুনামগঞ্জ-১ : প্রচারে ব্যস্ত আ.লীগ, অপেক্ষায় বিএনপি
![](https://dainiksylhet.com/images/icon.jpg)
দৈনিকসিলেটডেস্ক
বিশাল আয়তন ও অধিক ভোটারের আসন সুনামগঞ্জ-১। তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা ও মধ্যনগর উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসন। জেলার পাঁচটি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বেশি মনোনয়নপ্রত্যাশী এ আসনে। প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর, জলমহাল, বালু-পাথর মহাল ও তিনটি শুল্ক স্টেশন থাকায় এটি আকর্ষণীয় সংসদীয় এলাকা। খসড়া ভোটার তালিকা অনুযায়ী সুনামগঞ্জ-১ আসনে মোট ভোটার ৫ লাখ ১১ হাজার ৯০০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৬৪ হাজার ২৫৩ এবং নারী ২ লাখ ৪৭ হাজার ৬৪১ জন।
এ আসনে আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতন। তিনবার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। তবে এবার মনোনয়নপ্রত্যাশীদের কেউ কেউ কৌশলে এমপি রতনের বিতর্কিত কর্মকাণ্ড সামনে নিয়ে আসছেন। তাদের ভাষ্য ‘অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন, দুদকের মামলা, অন্যের জমি দখলসহ নানা বিষয়ে এবার দলীয় হাইকমান্ড রতনের ওপর ক্ষুব্ধ। তাই এবার এ আসনে প্রার্থী পরিবর্তন করবে আওয়ামী লীগ।’
এমপি রতনের নিজ এলাকা ধর্মপাশা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমদ মুরাদ বলেন, ‘সুনামগঞ্জ-১ আসন আওয়ামী লীগের ঘাঁটি। তবে নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে বর্তমান এমিপি রতন দলের অভ্যন্তরে ও সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করছে দুদক। তাই আগামী নির্বাচনে সৎ, যোগ্য ও ত্যাগী কাউকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানাই।’
এসব অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতন বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাকে তিনবার মনোনয়ন দিয়েছেন। এটাই প্রমাণ করে সাধারণ মানুষ ও নেতাকর্মীদের সঙ্গে আমার কেমন সম্পর্ক। আমি আওয়ামী লীগের ৪৫টি অফিস করেছি। সাধ্যমতো কাজ করছি জনগণের উন্নয়নের। আমি মনে করি, জননেত্রী অবশ্যই এসব বিবেচনা করবেন।
অবৈধ সম্পদ অর্জন, দুদকে অভিযোগ ও অন্যের জমি দখলের বিষয়ে এমপি বলেন, ‘এসবের কি কোনো প্রমাণ আছে? কোনো কাগজপত্র আছে? প্রতিপক্ষরা অপপ্রচারের জন্য এসব বলে। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা আমার সঙ্গেই আছেন। প্রতিটি কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগের নেতাকর্মীরা অংশ নেন। যারা বিভিন্ন সময়ে অন্যায়, অত্যাচার করছে, মানুষের ওপর নির্যাতন করছে ওদের আমি ছেড়ে দিয়েছি। এদের কারণেই আমাদের সমস্যার সৃষ্টি হয়।’
এমপি রতন ছাড়াও এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে মাঠে সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন সুনামগঞ্জ-সিলেট সংরক্ষিত আসনের এমপি অ্যাডভোকেট শামীমা আক্তার খানম। তিনি এলাকায় নিয়মিত সভা-সমাবেশ, গণসংযোগ ও উঠান বৈঠক করছেন। নারী ভোটারদের কাছে তার ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। তিনি বলেন, আমি ছাত্রজীবন থেকে ছাত্রলীগে যুক্ত হয়ে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার কর্মী হিসেবে নৌকার পক্ষে কাজ করছি। আমি উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ছিলাম। প্রধানমন্ত্রী আমাকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত করেছেন।
আমি সবসময় হাওর অঞ্চলের মানুষের পাশে ছিলাম, আছি। বন্যায়, করোনায়, বোরো ফসল রক্ষায় সাধারণ মানুষের পাশে থেকে কাজ করেছি। সরকারের উন্নয়ন প্রচারে গ্রামে গ্রামে উঠান বৈঠক করেছি। আমি বিশ^াস করি নেত্রী সবকিছু জানেন। আমাকে মনোনয়ন দিলে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করব।
সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য অ্যাডভোকেট রনজিত সরকার মনোনয়নের প্রত্যাশায় প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় সভা-সমাবেশ করছেন। তিনি বলেন, পরিবর্তনের হাওয়া বইছে এবং এটার কোনো বিকল্প নেই। আমি দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় কাজ করছি। আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে আমি আশাবাদী।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য সুনামগঞ্জ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও জেলা শ্রমিক লীগের সাবেক সভাপতি মো. সেলিম আহমদ মাঠপর্যায়ে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড প্রচারে নিয়মিত গণসংযোগ ও সভা-সমাবেশ করছেন। ব্যক্তিগত তহবিল থেকে তিনি বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে সহযোগিতা দিচ্ছেন। তিনি বলেন, হাওরাঞ্চলের প্রয়াত সংসদ সদস্যগণ সততা ও আদর্শের সঙ্গে তৃণমূল ও প্রান্তিক মানুষের কল্যাণে কাজ করে গেছেন। কিন্তু বর্তমান নেতৃত্ব জননেত্রী শেখ হাসিনার আস্থার প্রতিফলনে ব্যর্থ হয়েছেন। তাই অতীতের ধারাবাহিকতায় ও গণমানুষের স্বার্থে আগামী নির্বাচনে সৎ, গণমুখী ও সৃজনশীল নেতৃত্বের প্রয়োজন। আমি বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার তৃণমূলের একজন কর্মী ও আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছি।
জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান করুনা সিন্ধু চৌধুরী বাবুলও নৌকার মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে এলাকায় গণসংযোগ ও প্রচার চালাচ্ছেন। তিনি বলেন, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, দুর্নীতিবাজ, লুটেরামুক্ত আধুনিক ও স্মার্ট হাওর অঞ্চল সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী নিশ্চয়ই এ বছর আমাকে বিবেচনা করবেন। আশা করি তিনি জনগণের প্রত্যাশা পূরণে এবার স্মার্ট প্রার্থী দেবেন।
সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রচারসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে সক্রিয় রয়েছেন আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য ও সাবেক যুগ্ম সচিব বিনয় ভূষণ তালুকদার ভানু। তিনি বলেন, একজন সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মাঠ পর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছি। প্রতিটি এলাকায় সরকারের উন্নয়ন প্রচার, সভা-সমাবেশ করছি। দলীয় মনোনয়নের বিষয়ে দলের সভাপতি নেত্রী যে সিদ্ধান্ত নেবেন, সেটাই মেনে নেব। যিনি নৌকা পাবেন তার পক্ষেই থাকব।
এ ছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হায়দার চৌধুরী লিটন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের জেলা আহ্বায়ক ড. রফিকুল ইসলাম চৌধুরী, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট আখতারুজ্জামান সেলিম আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেতে গণসংযোগ করছেন। যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য অ্যাডভোকেট গোলাম কিবরিয়াও মনোনয়ন পেলে নির্বাচনের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
এদিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলনরত বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার বিষয়ে এখনো অস্পষ্ট। প্রকাশ্যে নির্বাচনী প্রচারে নেই দলের কোনো নেতাকর্মী। তবে দলটির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের অনেকেই নীরবে কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা।
বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে দলের স্থানীয় নেতাকর্মীদের কাছ থেকে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন সাবেক এমপি নজির হোসেন, জেলা কৃষক দলের সভাপতি ও তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আনিসুল হক, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল, জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও ধর্মপাশা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মোতালিব খান। বিএনপি নির্বাচনে এলে মনোনয়নপ্রত্যাশী সবাই দলের মনোনয়ন চাইবেন বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুজ্জামান কামরুল মোবাইল ফোন রিসিভ না করায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।
জেলা কৃষক দলের সভাপতি আনিসুল হক বলেন, আমি বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাব না। নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন চাই, এ লক্ষ্যে আমাদের আন্দোলন চলছে, চলবে। আগে মানুষের অধিকার আদায় করব, তারপর নির্বাচন।
সাবেক এমপি নজির হোসেন বলেন, নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য আমরা প্রতিনিয়ত আন্দোলন সংগ্রাম করে যাচ্ছি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া আমরা নির্বাচনে অংশ নেব না।
বিকল্পধারার প্রেসিডিয়াম সদস্য ডা. রফিক চৌধুরী বললেন, আমি ২০১৮ সালে এ আসনে সংসদ নির্বাচন করেছি। আগামী নির্বাচনেও অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে। তৃণমূলের মানুষের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রাখছি। এ ছাড়া এ আসনে জাতীয় পার্টির নেতা সাধনচন্দ্র ভৌমিক, আবদুল মান্নান তালুকদার ও আবু তাহের মোহম্মদ বাচ্চু দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী বলে জানিয়েছেন জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক এমপি অ্যাডভোকেট পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ।
সূত্র: দৈনিক আমাদেরসময়