ড. মোমেন অন্যন্য নজির স্থাপন করলেন: এই সংস্কৃতি ছড়িয়ে পড়ুক সবখানে
দৈনিকসিলেটডটকম
- বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় একটি সমস্যা হলো রাজনৈতিক সম্প্রীতির অভাব। জাতীয় এবং রাজনৈতিক সমস্যা পারিবারিক অনুষ্ঠান ইত্যাদিতে সরকার এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি অবস্থান দেখা যায়না। কেউ কারো মুখ দেখতেও নারাজ। এমনি এক সংস্কৃতির মধ্যে থেকেও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এমপি এক অনন্য নজির সৃষ্টি করলেন।আর এমনটি করারই কথা কারণ তিনি সিলেটের কৃতি সন্তান। সিলেটে সকল রাজনৈতিক দলের রয়েছে সহাবস্থান। যে কোন প্রয়োজনে এবং সামাজিক অনুষ্ঠানে সিলেটে সরকার এবং বিরোধীদলের নেতা কর্মীরা এক সাথে বসতে পারে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার এপিএস সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারী
শনিবার সকালে নিউ ইয়র্কের বাঙ্গালীপাড়া জ্যাকসন হাইটসের নবান্ন রেস্তোঁরায় বসেছিলেন সকালের নাশতা খেতে।
হঠাৎ সেই রেস্টুরেন্টে সস্ত্রীক হাজির হন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। কেউ একজন এ সময় সাংবাদিক মুশফিকুলের কথা তাঁকে বলেন। সঙ্গে সঙ্গেই মুশফিকুলের টেবিলের কাছে এগিয়ে গিয়ে কুশল জানতে চান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। চেয়ার টেনে বসে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলেন। এ সময় স্ত্রী সেলিনা মোমেন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা ছিলেন তাঁর সঙ্গে।
মুশফিকুল ফজল আনসারী বর্তমানে বিএনপির ভাবমূর্তি আর্ন্তজাতিক পর্যায়ে তুলে ধরতে অনন্য ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন।হোয়াইট হাউস, মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর ও জাতিসংঘের প্রেস ব্রিফিংগুলোতে নিয়মিত বাংলাদেশ প্রসঙ্গ উত্থাপন তিনি করে থাকেন। তবে সরকার-সমর্থকরা যে তাঁর প্রতি বিরূপ সেটাও গোপন নয়। খোদ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বিভিন্ন সময় মুশফিকুলের নাম নিয়ে নানা মন্তব্য করেছেন। অভিযোগ করে বলেছেন, তিনি আমেরিকানদের কাছে বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক চিত্র তুলে ধরেন।
এতো সব ভুলে প্রতিপক্ষের কাছে এভাবে যাওয়াকে এক অনন্য নজির হিসেবে দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সরকারের একজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী তার চরম বিরোধী পক্ষের সাথে এমন সৌজন্যতা দেখাবেন এটা চিন্তাও করা যায়না।
পরাষ্ট্রমন্ত্রী সোজা মুশফিকুলের টেবিলের সামনে গিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেন। কুশল বিনিময় শেষে নিজের আমেরিকান জীবনের নানা অধ্যায়ের গল্প করেন। উত্তর আমেরিকায় বাংলাদেশীদের সবচেয়ে বড় সংগঠন ফোবানা গঠনের ক্ষেত্রে নিজের ভূমিকার কথা বলেন। আমেরিকার সঙ্গে তাঁর যে অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক সে কথাও স্মরণ করিয়ে দেন।
এক পর্যায়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী উঠে গিয়ে স্ত্রী ও সঙ্গীদের নিয়ে অন্য একটি টেবিলে বসেন। এ সময় তিনি মুশফিকের কাছে জানতে চান- ‘কী খাবেন, কিছু অর্ডার করবো আপনার জন্য?’ জবাবে মুশফিক বলেন, আমি তো নাশতা করছিই। আপনিই বরং আমাদের সাথে যোগ দেন’।
এরপর মুশফিকুল ফজল আনসারী তার স্বাভাব সুলভ ভঙ্গিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনকে রাজনৈতিক প্রশ্ন করেন। মন্ত্রীও অত্যন্ত আন্তরিকভাবে তাঁর প্রশ্নের জবাব দেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মতো একজন বয়োজৈষ্ঠ নেতা তাঁর বিরোধী পক্ষের একজন তরুণ নেতার প্রতি যে সৌজন্যতা দেখিয়েছেন এটা সত্যি ইতিবাচক। আমরা আশা করি জাতীয় জীবনে এর প্রভাব এবং এই সংস্কৃতি ছড়িয়ে পড়ুক সবখানে।