প্রকল্পের নাম ভাঙিয়ে অবৈধ ড্রেজার দিয়ে চলছে বালু উত্তোলন

দৈনিকসিলেট ডেস্ক :
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ের মাত্র এক কিলোমিটারের ভেতরেই অবাধে চলছে অবৈধ ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের ব্যবসা। দিনেদুপুরে নদীর কিনার থেকে বালু তোলা হলেও নজর নেই প্রশাসনের। এমনকি অভিযোগ জানিয়েও প্রতিকার পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ গ্রামবাসীর।
সুনামগঞ্জ শহরের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে সুরমা নদী। নদীর এক পারে পৌর শহরের ওয়েজখালী এলাকা, অন্য পারে গৌরারং ইউনিয়নের লক্ষণশ্রী এলাকার দরিদ্র গুচ্ছ গ্রাম। এই গ্রামের মানুষ রাতে ঘুমাতে পারেন না। শিশু ও বয়োজ্যেষ্ঠরা ঘুমের মধ্যে আঁতকে ওঠেন। কারণ গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া সুরমা নদীতে দিনরাত সমানতালে বিকট শব্দে ড্রেজার মেশিন দিয়ে চলে বালু তোলার হিড়িক।
গ্রামের পাশ থেকে বালু তোলা অব্যাহত থাকায় ঘরবাড়ি বিলীন হওয়ার আশঙ্কায় গুচ্ছগ্রামে পুনর্বাসিত বাসিন্দাসহ স্থানীয়রা। বিষয়টি নিয়ে ইউএনওর কাছে অভিযোগ করলেও প্রতিকার মেলেনি বলে জানান এলাকাবাসী।
গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা গুলশানা বলেন, ‘বাচ্চারা ঘুম থেকে লাফ দিয়ে ওঠে এই বোমা মেশিনের শব্দে। বাচ্চারা কীভাবে ঘুমাবে, যেখানে আমরা বড়রাই ঘুমাতে পারি না।’ বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন গুলশানা জানান, নদী থেকে বালু তোলার কারণে যে কোনো দিন তাদের ঘরবাড়ি নদীতে চলে যাবে।
লক্ষণশ্রী গ্রামের সুভাষ বলেন, ‘নদীর পাড়ে আমাদের বাড়ি। দিনের পর দিন গ্রামের পাশ থেকে বালু তোলা হচ্ছে, এতে আমাদের ঘরবাড়ি, জমি সব ভেঙে যেতে পারে। একবার ভাঙন ধরলে আর কেউ ফেরাতে পারবে না।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বীর মুক্তিযোদ্ধা বলেন, ইউএনওর কাছে গিয়ে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধের দাবি জানিয়েছি আমরা। ইউএনও ব্যবস্থা নেবেন বলে আমাদের আশ্বস্ত করলেও এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
গুচ্ছগ্রাম সমিতির সভাপতি রইছ মিয়া বলেন, গ্রামের পক্ষ থেকে ইউএনওকে বলার পর তিনি ইউনিয়ন চেয়ারম্যান-মেম্বারকে দায়িত্ব দেন বন্ধ করার। অভিযোগ জানানোর পর বরং তৎপরতা বাড়িয়ে দিয়েছেন বালু ব্যবসায়ীরা। আগে দু-একটি নৌকায় (বাল্কহেড) বালু তোলা হলেও বর্তমানে প্রতিদিন অন্তত ২০টি নৌকায় বালু উত্তোলন হয়। স্থানীয় ইউপি সদস্য জানিয়েছেন, তাদের (বালু ব্যবসায়ী) ওপর মহলে হাত আছে, তাই নদী থেকে বালু তোলা বন্ধ করা যাবে না।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পে মাটি ভরাটের জন্য নদী থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু তোলার জন্য জেলা প্রশাসন থেকে একটি অনুমতি নেওয়া আছে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে কয়েকজন বালু ব্যবসায়ী নদী থেকে গত চার মাস ধরে নিয়মিত বালু তুলে অন্যত্র বিক্রি করছেন।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, একসঙ্গে তিনটি বাল্কহেডে ছয়টি বোমা বা ড্রেজার মেশিন দিয়ে নদী থেকে বালু-মাটি উত্তোলন চলছে। পাড়ে বাঁধা সিরিয়ালে থাকা আরও কয়েকটি বাল্কহেড। সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পরও দেদারসে বালু তুলছেন তারা। গ্রামের পাশ থেকে ড্রেজার দিয়ে এভাবে বালু তোলার অনুমতি কার কাছ থেকে পেয়েছেন জানতে চাইলে শ্রমিকরা জানান, সরকারি প্রকল্প ভরাটের কাজ করছেন তারা। কাগজপত্র দেখতে চাইলে কিছুই দেখাতে পারেননি তারা।
সদর উপজেলা ইউএনও সালমা পারভীন বলেন, আমরা এই জায়গায় কয়েকবার ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জরিমানা করেছি। কিন্তু আমরা চলে এলেই বালু ব্যবসায়ীরা বালু উত্তোলন করে। ২৪ ঘণ্টা সেখানে বসে থাকলে অফিসের অন্যান্য কাজ বন্ধ রাখতে হবে।
সুনামগঞ্জে জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী বললেন, সরকার এসব অবৈধ কাজ রোধের জন্য আইন করে দিয়েছে। তবে সেখানে সরকারি প্রকল্পে মাটি ভরাটের জন্য একটি অনুমতি দেওয়া আছে। এর বাইরে কোথাও বালু বিক্রি হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।