সিলেটে থামছেনা চিনি চোরাচালান, দুদিনে ৩৬৮ বস্তা উদ্ধার
দৈনিকসিলেট ডটকম
সিলেটের কোনোভাবেই থামছে না ভারতীয় চোরাই চিনির সয়লাব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর অভিযানে প্রতিদিনই অভিযানে ধরা পড়ছে চিনির চালান। এরপরও থেমে নেই চিনি পাচার। গত দুদিনে সিলেটে প্রায় ৪ শ বস্তা চোরাই চিনি উদ্ধার করেছে পুলিশ। এসময় একাধিক চোরকারবারিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
জানা গেছে, সিলেটের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা দিয়ে অবৈধভাবে প্রতিনিয়তই আসছে ভারতীয় চিনিসহ বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রতিনিয়ত অভিযান চালিয়ে চোরাকারবারিদের গ্রেফতার করলেও তা বন্ধ হচ্ছে না। সিলেটের সঙ্গে ভারতের দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। বেশির ভাগ সীমান্তই দুর্গম এলাকায়। ফলে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর টহলও কম। এই সুযোগে চোরাকারবারীরা অবাধে চিনিসহ বিভিন্ন ভারতীয় পন্য দেশে নিয়ে এসে বিক্রি করছে।
পুলিশ বলছে, প্রতিদিন জেলার বিভিন্নস্থান থেকে চোরাচালান উদ্ধারসহ অভিযান চালিয়ে জড়িতদের আটক করছে।
জানা যায়, পুলিশের পৃথক দুটি অভিযানে সিলেটের তিনটি থানায় প্রায় ৩৬৮ বস্তা ভারতীয় চিনি জব্দ করে পুলিশ। থানাগুলো হলো- গোয়াইনঘাট, গোলাপগঞ্জ ও জৈন্তাপুর।
রোববার (১ অক্টোবর) গোয়াইনঘাটে ৫০ কেজি ওজনের ১৪২ বস্তা ভারতীয় চিনি জব্দ করেছে পুলিশ। উপজেলার পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের পান্তুমাই গ্রাম থেকে ভারতীয় এসব চিনি জব্দ করা হয়। এসময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে চোরাকারবারিরা পালিয়ে যায়।
এ ঘটনায় এসআই পিন্টু সরকার বাদী হয়ে গোয়াইনঘাট থানায় চোরাচালান আইনে একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় পলাতক আসামী ডালিম মিয়া (২২), শাকিল (১৮), সালেহ আহমেদ (২২), জুয়েল (২২), আব্দুল মজিদ (৪২), সিদ্দিককে (৫০) আসামি করা হয়েছে।
এব্যাপারে গোয়াইনঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ কেএম নজরুল বলেন, সব ধরনের অপরাধমুক্ত করতে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এই অভিযান ও ভারতীয় চিনি উদ্ধার তারই ধারাবাহিকতার অংশ। যেকোন মূল্যে অপরাধমুক্ত থানা এলাকা গড়ে তুলতে পুলিশ বিভাগ কাজ করে আসছে।
এরআগে শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে গোলাপগঞ্জ উপজেলা থেকে ১৮৬ বস্তা চিনি জব্দ করে গোলাপগঞ্জ মডেল থানা পুলিশ। এসময় দুই চোরাকারবারিকে আটক করা হয়।
আটককৃতরা হলেন – সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ উপজেলার মুজাফফরপুর গ্রামের মোহাম্মদ হাসন আলী শেখ এর ছেলে মো. সবুর আলী শেখ (৩৫) ও একই গ্রামের মোহাম্মদ হোসেন আলী শেখ এর ছেলে মোহাম্মদ কাউসার আলী শেখ (২৫)।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামীরা জানায়, পলাতক আসামি আব্দুল হক ও আলমের মাধ্যমে শুল্ক ও কর ফাঁকি দিয়ে ভারতীয় চিনি সংগ্রহ করিয়া সিলেট শহরের বিভিন্ন স্থানে বাজারজাত করে। এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে এসআই ফায়াজ উদ্দিন ফয়েজ বাদী হয়ে গোলাপগঞ্জ মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেন গোলাপগঞ্জ মডেল থানার মিডিয়া অফিসার এসআই পার্থ সারথী দাস।
একইভাবে শনিবার (৩০সেপ্টেম্বর) রাত আড়াইটায় জৈন্তাপুর থানা পুলিশের অভিযানে আলুবাগান মোকামবাড়ি এলাকার তারা মিয়ার বসতঘর থেকে ৪০ বস্তা ভারতীয় চিনি উদ্ধার করা হয়। এসময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে আসামিরা পালিয়ে যান।
এ ব্যাপারে সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস্) শেখ মোঃ সেলিম সোমবার রাতে বলেন, শুধু চিনি নয়, যে কোন ধরনের চোরাই মাল উদ্ধার এবং সীমান্তে চোরাচালান রোধ ও জড়িত অপরাধীদের চিহ্নিতকরণ এবং গ্রেফতারে জেলা পুলিশ গুরুত্বের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুনের পক্ষ থেকে সুষ্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে যদি কোন পুলিশ সদস্য জেনেও চোরাইল মাল উদ্ধার না করেন তাহলে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। তাই জেলা পুলিশ চোরাই মাল উদ্ধারে অভিযান জোরদার করেছে। সেটা অব্যাহত রয়েছে।