পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পেলেন মার্কিন তিন বিজ্ঞানী
দৈনিকসিলেট ডেস্ক :
চলতি বছর তিন বিজ্ঞানী পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পেয়েছেন- মার্কিন বিজ্ঞানী পিয়েরে অগাস্তিনি, হাঙ্গেরিয়ান বিজ্ঞানী ফ্রেঙ্ক ক্রাউজ ও ফরাসি বিজ্ঞানী অ্যান লুইলিয়ে। ইলেকট্রনের আলোক শোষণের ঘটনাকে অ্যাটোসেকেন্ড স্কেলে পরিমাপ করার পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন তাঁরা।
ব্যাপারটা এভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। ইলেকট্রন বাস্তব জগতে কোনো ঘটনা ঘটতে অনেক সময় লাগে।
কিন্তু অণু-পরমাণুর জগতে, যেখানে ইলেকট্রনের মতো অতি ক্ষুদ্র কণার বাস, সেখানে কোনো ঘটনা ঘটতে অতটা সময় লাগে না। ক্ষুদে কণাদের জগৎ যতটা ক্ষুদ্র সেখানকার ঘটনাগুলোও ঘটে তত দ্রুত। কিন্তু সেই ক্ষুদ্রতম সময়টা কি আমাদের বাস্তব জগতের কোনো পরিমাপক দিয়ে কী মাপতে পারি? ব্যাপারটা অত্যন্ত কঠিন। কারণ, অত ক্ষুদ্র সময় মাপার ঘড়ি নেই।
অ্যাটোমিক ঘড়ি আছে। সেটা খুব নিঁখুত ভাবে সময় মাপতে পারে। কিন্তু তার প্রক্রিয়া কী? ফোটন বা আলো এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা নিতে পারে। পরমাণুর ভেতরে যেসব ইলেকট্রন বাস করে, সেগুলো আলো শোষণ করে বা আলোর সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ায় জড়ায়।
ইলেকট্রনের দ্বারা শোষিত বা বর্জিত আলোর স্পন্দনের সময় যদি মাপা যায়, তাহলে সেখানকার ঘটনাগুলোর পরিধি সম্পর্কেও ধারণা লাভ করা যাবে।
আগেও ইলেকট্র দ্বারা শোষিত আলোর স্পন্দনের সময় সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল। কিন্তু তাঁদের সেই ধারণার চেয়ে দ্রুততম সময়ে আলো স্পন্দিত হতে পারে- সেই গবেষণাই করেছেন অগাস্তিনি, ক্রাউজ আর লুইলিয়ে। তারা এমন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন, যার সাহায্যে আলোর স্পন্দন পাওয়া গেছে অ্যাটোসেকেন্ডে। এক অ্যাটো সেকেন্ডে হলো খুব ক্ষুদ্র সময়।
১ সেকেন্ডেকে ১,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০ দিয়ে ভাগ করলে যে ক্ষুদ্র সময়টা পাওয়া যাবে (১০-১৮ সেকেন্ড) তার সমান।
আলোর স্পন্দনের এই ক্ষুদ্র সময় পরিমাপ করে কী লাভ হলো? পরমাণুর ভেতরের জগতে কোনো কোনো ঘটনা ঘটে অ্যাটোসেকেন্ডের দশভাগের একভাগ বা তারচেয়েও কম সময়ে। সেসব ক্ষুদ্রতম সময়ের ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আলোক স্পন্দনের এই অ্যাটেসেকেন্ড স্পন্দন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। অর্থাৎ পরমাণুর ভেতরকার কার্যকলাপ সম্পর্কে একটা স্পষ্ট চিত্র তৈরি করতে পারবেন বিজ্ঞানীরা।
১৯৮৭ সালে অ্যান লুইলিয়ে একটা পরীক্ষা চালিয়েছিলেন। তিনি নিষ্ক্রিয় গ্যাসের ভেতর দিয়ে ইনফ্রারেড লেজার রশ্মি প্রবাহিত করেছিলেন। এর ফলে আলোর বেশকিছু ভিন্ন দশা তৈরি হয়েছিল। প্রতিটা দশায় ভিন্ন ভিন্ন সংখ্যক পূর্ণ চক্রের কম্পন দেখা দিয়েছিল সেই লেজার রশ্মিতে। এসব দশা তৈরি হয়েছিল গ্যাসের পরমাণুর সঙ্গে লেজার রশ্মির মিথস্ক্রিয়ার ফলে। এই মিথস্ক্রিয়ায় পরামাণুর কিছু কিছু ইলেকট্রন বাড়তি শক্তি লাভ করে। সেই শক্তিই আবার আলোক রশ্মি হিসেবে দেখা দেয়। অ্যান লুইলিয়ের এই গবেষণা পরে অগাস্তিনি ও ক্রাউজের গবেষণায় সাহায্য করে।
২০০১ সালে অগাস্তিনি আরেকটি গবেষণা করেন। তিনি আলোর স্পন্দনের একটি সিরিজ তৈরি করেন। সেই সিরিজের প্রতিটা স্পন্দনের স্থায়ীত্ব ছিল মাত্র ২৫০ অ্যাটোসেকেন্ড। একই সময় ফ্রেঙ্ক ক্রাউজ আরেকটা গবেষণা করছিলেন। তাঁর গবেষণায় আলোর স্পন্দনের স্থায়ীত্ব ছিল ৬৫০ অ্যাটোসেকেন্ড। অথচ এর আগে বিজ্ঞানীরা জানতেন আলোর স্পন্দন আরও দীর্ঘস্থায়ী।
তাঁদের এই গবেষণা আসলে কী দেবে বিজ্ঞানকে? এ বিষয়ে সুইডিশ নোবেল কমিটির পদার্থবিদ্যার চেয়ার ইভা ওলসন বলেন, ‘আমাদের কাছে এখন ইলেকট্রন জগতের দরজা খুলে দিয়েছে। জন্ম দিয়েছে অ্যাটেসেকেন্ড পদার্থবিদ্যার। এই পদার্থবিদ্যা ইলেকট্রননির্ভর বিজ্ঞানের বিভিন্ন ব্যাপারগুলো বুঝতে সাহায্য করবে।’
অ্যাটোসেকেন্ড পদার্থবিদ্যা সবচেয়ে বড় সুফল নিয়ে আসবে ইলেকট্রনিক জগতে, যেখানে সবকিছু চলে ইলেকট্রোডাইনামিকস বা ইলেকট্রন গতিবিদ্যার সাহায্যে। এছাড়া পারমাণবিক পদার্থবিজ্ঞানেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এই পদার্থবিজ্ঞান।
এখনকার চিকিৎসা বিজ্ঞানে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসায় পারমাণবিক পদার্থবিজ্ঞান সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখছে। সেখানে ইলেকট্রোডাইমিক্সের ব্যবহার হচ্ছে অহরহ। তাই চিকিৎসা বিজ্ঞানেও এই অ্যাটোসেকেন্ড প্রযুক্তি বড়সড় সুফল নিয়ে আসতে চলেছে। তাই এক কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, বিজ্ঞানী পিয়েরে অগাস্তিনি, ফ্রেঙ্ক ক্রাউজ ও অ্যান লুইলিয়ের নোবেল পুরস্কার পাওয়াটা সময়ের দাবি ছিল। সেই দাবি এবার মেটাল সুইডিশ নোবেল একাডেমি।
এ তিন নোবেলজয়ী নোবেল পদকের পাশাপাশি পাবেন একটি সনদপত্র, মোট ১১ মিলিয়ন সুইডিশ ক্রোনা বা ১১ কোটি ১৩ লাখ টাকা। সূত্র : নোবেল প্রাইজ ডট অর্গ