দুই বছরেও শেষ হয়নি বিজনা নদী খননের কাজ
দৈনিকসিলেট ডটকম
দুই বছরেও শেষ হয়নি হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলাধীন বিজনা নদী খননের কাজ। তবে কাজ মন্থর গতিতে চললেও অনিয়ম আর দুর্নীতি চলছে দারুণ গতিতে। এমনটাই অভিযোগ পাওয়া গেছে বিভিন্ন মহল থেকে।
বর্ষা মৌসুমে এই নদী খননের নামে হয়েছে নয়ছয়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বাসিন্দাদের দাবি, পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) প্রায় ২০ কোটি টাকার খনন কাজের সিংহভাগ বরাদ্দই লুটপাটের চেষ্টা চলছে। অন্যদিকে খনন কাজ যথাযথভাবে না হওয়ায় নদী-তীরবর্তী মানুষের দুর্ভোগ আরও চরম আকার ধারণ করেছে।
২০২১-২২ অর্থবছরে ৬৪টি জেলার ছোট নদী, খাল এবং জলাশয় পুনঃখনন প্রকল্পের (প্রথম পর্যায়) আওতায় বিজনা নদীর মোট ৩৭ কিলোমিটার অংশের খনন কাজ শুরু হয়। এতে ব্যয় ধরা হয় প্রায় ২০ কোটি টাকা। কোহিনুর এন্টারপ্রাইজ ও মেসার্স মিজানুর রহমান শামীম এন্টারপ্রাইজ এই কাজ পায়। ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে শুরু হওয়া এই কাজ বাস্তবায়নের জন্য নবীগঞ্জ অংশের ১৫ কিলোমিটার কাজের দায়িত্ব পায় হবিগঞ্জের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স মিজানুর রহমান শামীম। ব্যয় ধরা হয় ৫ কোটি টাকা। ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে নদী খননের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা এখন পর্যন্ত সম্পন্ন করা হয়নি। নদী খনন কাজে অর্থ লুট ও অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয়রা। এ ব্যাপারে ইউএনও বরাবর লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন গজনাইপুর ইউপি সদস্য পারভীন বেগম। অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, নদী থেকে মাটি খনন করে নদীতীরে এলোমেলোভাবে ফেলে রাখে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়া নদীর মাটি বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে বিক্রি করা হয়েছে। রাস্তার পাশ খাড়াভাবে খনন করায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। প্রকল্পের কাজের নামে কেটে নেওয়া হয়েছে তীরবর্তী গাছপালা। স্থানীয় এই জনপ্রতিনিধির দাবি, ৫ কোটি টাকার প্রকল্পে ঠিকাদার সর্বোচ্চ ৫০-৬০ লাখ টাকার কাজ করেছেন। এলাকার একটি কবরস্থানকে ভেঙে ফেলা হয়েছে কোনো প্রকার নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই। এ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। ১৫ কিলোমিটারের মধ্যে কাজ হয়েছে মাত্র ৩-৪ কিলোমিটারের। চর দিয়ে নদী খনন করার কথা থাকলেও মানুষের ব্যক্তিমালিকানাধীন জায়গা ও স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত করে করা হয়েছে খনন কাজ।
ইউপি সদস্য পারভীন বেগম জানান, সরকারি অর্থের সঠিক ব্যবহারের পরামর্শ দিলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তা মানেনি। অনিয়ম রেখেই কাজ শেষ করে চলে যায়। তারা নদী-তীরবর্তী বাসিন্দাদের বসতবাড়ির সামনে খনন করা মাটি না রেখে উঁচু টিলার মতো করে রাখে। প্রজেক্টের লোক প্রকল্পের মাটি অন্যত্র বিক্রি করেন। প্রকল্পের সিংহভাগ টাকা লুটপাটের চেষ্টা চলছে। আয়রাঘাট এলাকার আবদুর রহিম জানান, তাঁর বাড়িঘর, গাছপালা কেটে নেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে ইউএনওর কাছে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। আবুল কাশেম ও শফিক উল্লাহও জানান, তাদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথা। তারা বলেন, তাদের আমগাছ, কাঁঠালগাছসহ মালিকানাধীন জমি কেটে নেওয়া হয়েছে। অথচ নদীর চর দিয়ে এক টুকরো মাটিও কাটা হয়নি। এতে ভয়াবহ ভাঙনের শঙ্কায় ফেলা হয়েছে স্থানীয়দের।
সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ১১ নম্বর গজনাইপুর ইউপির ৭ নম্বর ওয়ার্ডের গণ্ডাপাড়া থেকে ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মুড়াউড়া পর্যন্ত নদী খনন করা হচ্ছে। এই দুই এলাকায় প্রায় ১০-১৫ হাজার মানুষের বসবাস। বিজনা নদীর দক্ষিণ-পূর্ব পাড় দিয়ে পানিউমদা ও গজনাইপুর ইউনিয়নের জনসাধারণ উপজেলা সদরে যাতায়াত করেন। নদী-তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দারা জানান, যে কাজ হচ্ছে, তাতে সাধারণের বিপত্তি বেড়েছে। নদী খননের পর সুবিধার চেয়ে জনদুর্ভোগই বেশি সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগের ব্যাপারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক শামীম জানান, এ প্রকল্পের কাজ চলমান। কাজে কোনো অনিয়ম হয়নি। এখন পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার নদী এলাকা খনন করা হয়েছে। বর্ষা শুরুর আগেই নদী খননের কাজ শেষ হবে। হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম হোসাইন মাহমুদ জানান, অভিযোগ পেয়েছি। স্থানীয় বাসিন্দাদের টাকায় মাটি ড্রেজিং করার কথা নয় এবং প্রকল্পের মাটি অন্যত্র বিক্রি করারও সুযোগ নেই। এমন অনিয়ম হয়ে থাকলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে এর দায় নিতে হবে। যেসব স্থানের কাজে ভাঙন সমস্যা ও অনিয়মের অভিযোগ উঠছে, সেগুলো খতিয়ে দেখে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।