স্থপতি রাজন দাশের বিরুদ্ধে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ
দৈনিকসিলেটডটকম
প্রকাশিত মিথ্যা ও মানহানিকর সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়েছেন লিডিং ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক স্থপতি রাজন দাস। সোমবার (১৬ অক্টোবর) ২০২৩ ইং তারিখে সিলেটের স্থানীয় দৈনিক সিলেটের ডাক এর শেষ পাতায় ‘লিডিং ইউনিভার্সিটির অর্থ আত্মসাৎ ও পেশাগত অসদাচারণের দায়ে রাজন দাস চাকুরীচ্যুত’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের বিপরীতে তিনি এই প্রতিবাদ জানান। পত্রিকার সম্পাদক বরাবরে লিখিত প্রতিবাদে তিনি প্রকাশিত সংবাদকে মিথ্যা,মনগড়া,উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও মানহানিকর উল্লেখ করেন এবং একই সাথে প্রতিবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে বিভ্রান্তির অবসান ঘটনানোর অনুরোধ করেন।
প্রতিবাদ লিপিতে তিনি উল্লেখ করেন, প্রকাশিত সংবাদে যে তথ্যগুলো দেওয়া হয়েছে তা ব্যক্তি আক্রমণ বৈ আর কিছু নয়। প্রতিবেদনে অনুমোদনহীনভাবে ক্যাম্পাসে অনুপস্থিত থেকে কাজে ফাঁকি, পেশগত অসদাচারণ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণকাজের বিপরীতে বিপুল অর্থ আত্মসাৎ, লিডিং ইউনিভার্সিটির স্থাপত্য বিভাগ বন্ধের হুমকি প্রদানসহ প্রায় অর্ধডজন মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে। সেই সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগদান করার ১৬ বছর পর আমার শিক্ষাজীবন নিয়ে মনগড়া তথ্যও দেওয়া হয়েছে।
তাছাড়া, বঙ্গবন্ধু চত্বরসহ জাতির পিতার ম্যুরালের কাজ, শহিদ মিনারের কাজ সিডিসির অনুমোদনক্রমে হোমল্যান্ড এন্টারপ্রাইজকে পুরনো চুক্তির আওতায় প্রদান করা হয়েছিলো। এসব কাজে ডিজাইনার হিসেবে কোনো পারিশ্রমিক ছাড়াই আমি যুক্ত ছিলাম। এ বিষয়ে গত ১২ মার্চ ২০২৩ তারিখে বর্তমান বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সচিব মো. লুৎফুর রহমান হোমল্যান্ড এন্টারপ্রাইজের মালিক ও ম্যানেজার এবং চৌধুরী সামস ওয়াহিদ (তৎকালীন বিভাগীয় প্রধান, সিভিল এবং ডেপুাটি ইঞ্জিনিয়ার লিডিং ইউনিভার্সিটি), আমি রাজন দাস, রজত চক্রবর্তী (তৎকালীন ডেপুটি ডিরেক্টর, হিসাব রক্ষণ বিভাগ) এবং মেজর অব: শায়খুল হক চৌধুরীকে একটি ডাক মারফত চিঠি পাঠান, যেখানে বলা হয় লিডিং ইউনিভার্সিটিতে এ যাবৎকালে যত কনস্ট্রাকশন হয়েছে তাতে ১১,৪৯,৭৩,১৬০ টাকা বেশি ব্যয় হয়েছে এবং তাতে উপরোক্ত ব্যক্তিবর্গ জড়িত বিধায় ১৪ দিনের মধ্যে সে টাকা ফেরত দিতে হবে, অন্যথায় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাতে আরো উল্লেখ করা হয়, এই অতিরিক্ত ব্যয় একটি ৭ সদস্য বিশিষ্ট এসেসমেন্ট কমিটির মাধ্যমে নিরুপন করা হয়েছে। উক্ত এসেসমেন্ট কমিটির সদস্যরা হলেন অমিত চক্রবর্তী (কমিটির কনভেনার ও সহকারী অধ্যাপক, সিভিল), চৌধুরী সামস ওয়াহিদ (তৎকালীন বিভাগীয় প্রধান, সিভিল এবং ডেপুাটি ইঞ্জিনিয়ার লিডিং ইউনিভার্সিটি), মো. কবির আহমদ (হেড অব অডিট এন্ড একাউন্টস), মো. লুৎফুর রহমান (বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সচিব), সুমিত চক্রবর্তী (সহকারী প্রকৌশলী, বিদ্যুৎ), মো. শহীদুল ইসলাম (সহকারী ডিরেক্টর, হিসাব শাখা) এবং অরবিন্দ চক্রবর্তী (সদস্য সচিব, সহকারী প্রকৌশলী, সিভিল)।
ক্যাম্পাসে অনুপস্থিতি ও বিধি বিধান না মানা সম্পর্কে যেসব তথ্য প্রদান করা হয়েছে তাও মিথ্যা ও মনগড়া্ । বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের ১৬ বছর পর আমার পরীক্ষার ফলাফল সম্পর্কিত তৃতীয় বিভাগ নিয়ে যে তথ্য প্রকাশিত হয়েছে তা নিছক মূর্খতার সামিল। সিজিপিএ কত পেলে কোন বিভাগ হয় সেটিই প্রতিবেদকের অজানা। আমি এরও তীব্র নিন্দা জানাই।
শিক্ষাগত তথ্যের মিথ্যাচার বিষয়ে রাজন দাস লিখেন, আমি ১৯৯৪ সালে এসএসসি পরীক্ষায় কুমিল্লা বোর্ডে সম্মিলিত মেধাতালিকায় ২০তম স্থান অধিকার করি, এইচএসসিতে স্টারমার্কস (৭৯১) পাই, বুয়েটের আর্কিটেকচারের ভর্তি পরীক্ষায় মেধাতালিকায় দ্বিতীয় স্থান লাভ করি এবং সিজিপিএ ২.৬৮ (৪ এর মধ্যে) ৫৭% মার্কস পেয়ে ব্যাচেলর অব আর্কিটেকচার ডিগ্রি অর্জন করি যা মানদন্ড অনুযায়ী দ্বিতীয় বিভাগ সমমানের ।
এছাড়াও আমার অন্যান্য অর্জনসমুহ হলো (১) কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার “সূর্যালোকে বর্ণমালা”র জন্য স্থাপত্য ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পদক আই এ বি এওয়ার্ড ২০২০, (২) সুইস আর্কিটেকচার মিউজিয়ামের উদ্যোগে “Bengal stream : the vibrant architectural scene of Bangladesh ” নামক এক্সিবিশনে ২০১৭ সালে সুনামগঞ্জের ধর্মপাশায় নির্মিত স্মৃতিসৌধ ” সবকটা জানালা খুলে দাও না ” স্থান পায়, যা বাংলাদেশ থেকে বাছাই করা ৬০টি প্রকল্পের মধ্যে একটি, (৩) ২০১০ সালে ইন্টেরিয়র ডিজাইন প্রতিযোগিতা Ice Today- Aqua paint interior design award, এ রেস্টুরেন্ট ক্যাটাগরিতে প্রথম স্থান লাভ করে উন্দাল রেস্টুরেন্ট, (৪) রাজন দাস বিভাগীয় প্রধান থাকা অবস্থায় লিডিং ইউনিভার্সিটির স্থাপত্য বিভাগ Institute of Architects Bangladesh (IAB) এর accreditation লাভ করে, যা ঢাকার বাইরে অবস্থিত প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম । এ পর্যন্ত বাংলাদেশে মোট ১৩ টি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগ এটি অর্জন করেছে। কিন্তু এ তথ্যগুলো প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি। এমনকি লিডিং ইউনিভার্সিটির ব্যতিক্রমধর্মী শহিদ মিনার ‘মা: অবাক আলোর লিপি’ নকশা তৈরির জন্য আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা ও স্মারক প্রদান করা হয়। যা সিলেটের ডাকসহ অন্যান্য জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় গুরুত্ব সহকারে প্রকাশিত হয়।
আমি ২০০৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে যথাযথ প্রক্রিয়ায় স্থাপত্য বিভাগের প্রভাষক হিসেবে যোগদান করি । তারপর দুই মেয়াদে প্রায় ৮ বছর বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করি। আমার প্রতিটি পদোন্নতি যথাযথ বোর্ডের মাধ্যমে অনুমোদিত হয়। আমি আই.কিউ.এ.সি (ইনস্টিউশনাল কোয়ালিটি এস্যুরেন্স সেল) এর এডিশনাল ডিরেক্টর হিসেবে ২০১৫ সালে নিযুক্ত হই এবং ৪ বছর দায়িত্ব পালন করি। বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়নে স্থপতি হিসেবে আমি যে অবদান রেখেছি তার জন্য কোনো পারিশ্রমিক গ্রহণ করিনি। আমার বিভাগের স্থাপত্য শিক্ষার অনুকুল পরিবেশ নির্মাণে আমার ভূমিকা শুধু বিভাগের শিক্ষক ছাত্রছাত্রীরাই নয় দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্যকলার শিক্ষকদের প্রশংসা কুড়িয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য্ ড. কাজী আজিজুল মওলা ইউজিসির অনুমোদন নিয়ে গত ৪ অক্টোবর একটি আন্তর্জাতিক সেমিনারে যোগ দিতে ১৫ দিনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টনে যান। তিনি কাউকে দায়িত্ব না দিয়ে গেলেও ট্রেজারার বনমালী ভৌমিক ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যের দায়িত্ব নিয়ে এখতিয়ার বহির্ভূত কর্মকান্ডের মাধ্যমে এবং বেআইনিভাবে আমাকে ১১ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে পরদিনই বরখাস্ত করেন। যদিও যুক্তরাষ্ট থেকে ইমেইলের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য ড. কাজী আজিজুল মাওলা বরখাস্তের চিঠিটি খারিজ করে দেন। তাই প্রকাশিত সংবাদটি পুরোপুরি একতরফা এবং সাংবাদিকতার কোনো নীতিমালাই প্রকাশিত সংবাদে মানা হয়নি ।