সম্ভাবনাময় কফি চাষে ঝুঁকছেন সিলেটের কৃষকরা
দৈনিকসিলেট ডেস্ক :
চা অঞ্চল হিসেবে পরিচিত দেশের উত্তর-পূর্বের সিলেট বিভাগ। এ বিভাগের ৩ জেলা সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জের পাহাড়-টিলায় প্রায় ২০০ বছর ধরে চা চাষ করা হচ্ছে। সম্প্রতি এ অঞ্চলের কৃষকরা চায়ের বিকল্প হিসেবে সম্ভাবনাময় কফি চাষে ঝুঁকছেন। সিলেট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ জেলায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কফি চাষ শুরু হয় ২০২১ সালে। জেলার গোলাপগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, বিয়ানীবাজার ও জৈন্তাপুর উপজেলার ২০ হেক্টর জমিতে অ্যারাবিকা ও রোবাস্তা কফি চাষাবাদ করা হচ্ছে। গোলাপগঞ্জ উপজেলার আমুড়া ইউনিয়নের কদমরসুল গ্রামে প্রায় ৫০ বিঘা জমিতে সাড়ে তিন হাজার গাছ নিয়ে কফি গার্ডেন নামে একটি বাগান গড়ে তুলেছেন ওই এলাকার যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী সৈয়দ মাছুম আহমদ।
বাগানসংশ্লিষ্টরা জানান, গত বছর অনাবাদি টিলা চাষের আওতায় এনে সেগুলোতে আনারস গাছের মধ্যেই কফির চারা লাগানো হয়েছে।
কফি গার্ডেনের ব্যবস্থাপক আবু সুফিয়ান জানান, ব্যক্তি উদ্যোগে উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতায় দুই হাজার কফির চারা সংগ্রহ করে বাগান শুরু করেছেন। শুধু কফি চাষ নয়, লেকের পাশে গড়ে তুলছেন কফি হাউস। ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার মাইজগাঁও ইউনিয়নের হাঁটুভাঙ্গা গ্রামে দ্য হিল এগ্রো পার্কের স্বত্বাধিকারী আজহারুল ইসলাম জানান, ফেঞ্চুগঞ্জ কৃষি অফিসের সহযোগিতায় তাঁর নিজস্ব অনাবাদি ৩০ বিঘা জমিতে তিন মাস আগে আড়াইশ কফি চারা রোপণ করেছেন। একই ইউনিয়নের ফকিরপাড়া গ্রামের মোয়াজ্জেম হোসেন সাহেদ তাঁর বাড়ির পাশের টিলায় ১৫০টি চারা রোপণ করেছেন। কয়েছ ও সাহেদ তাদের কফিবাগান থেকে চার বছর পর ফলন আশা করছেন।
এদিকে কফি চাষে সিলেটের বিভিন্ন উপজেলার উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ করায় বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো কফি প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা নির্মাণে এগিয়ে এসেছেন গোলাপগঞ্জের আমনিয়া গ্রামের উদ্যোক্তা আবুল কালাম চৌধুরী। তিনি জানান, ২০২২ সালে কারখানা নির্মাণের কাজ শুরু করেছেন। এ জন্য তাঁর ৬ কোটি টাকা প্রয়োজন। ইতোমধ্যে সাড়ে ৩ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। কফি চাষাবাদে অনেকে এগিয়ে এসেছেন অথচ এখানে কোনো কফি প্রক্রিয়াকরণ কারখানা নেই। তাই কারখানা নির্মাণে উদ্যোগী হয়েছেন তিনি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সিলেটের বিভাগীয় পরিচালক মোশারফ হোসেন খান জানান, সিলেটের টিলাগুলোয় শুধু চা বাগান ছিল। সম্প্রতি টিলায় আনারস, কাজুবাদাম ও কফির চাষ শুরু হয়েছে। চায়ের বিকল্প হিসেবে কফি চাষে এখানকার কৃষকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। একসময় যেসব অনাবাদি টিলা ছিল, সেগুলোতে কফি চাষ হচ্ছে। আগামী দুই বছরের মধ্যে এসব কফি বাজারজাতের প্রস্তুতি নিচ্ছেন স্থানীয় কৃষকরা।
প্রবাসী ও স্থানীয় উদ্যোক্তারা তাদের পতিত জমিতে শখের বসে কফি চাষে উদ্যোগী হলেও ধীরে ধীরে বাণিজ্যিকভাবে কফি চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর স্থানীয় কৃষকদের সহযোগিতা করছে। সিলেট কফি চাষের জন্য একটি সম্ভাবনাময় অঞ্চল। কফিগাছে আড়াই থেকে তিন বছরের মধ্যে ফলন আসে। একেকটি গাছ ৫০ থেকে ৬০ বছর পর্যন্ত ফলন দেয়। প্রতিটি কফিগাছ থেকে ৫-৬ কেজি করে কফি উৎপাদিত হয়।