সমবায় ভবন মার্কেট রক্ষা ও অবৈধ উচ্ছেদ’র প্রতিবাদে মানববন্ধন

দৈনিকসিলেটডটকম
ভূমি খেকোদের হাত থেকে সমবায় ভবন মার্কেট রক্ষা ও অবৈধ উচ্ছেদ এর প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করা হয়েছে।
সোমবার (৩০ অক্টোবর) সকাল ১১টায় সিলেট নগরীর সমবায় ভবন মার্কেটের সামনে সমবায় ভবন দোকান মালিক ও ব্যবসায়ী সমিতির উদ্যোগে এ মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করা হয়।
সমবায় ভবন দোকান মালিক ও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি নজরুল ইসলাম লস্করের সভাপতিত্বে ও মো. মখলিছুর রহমানের পরিচালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন ফারুক আহমদ, সিসিকের ১৫নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মুজিবুর রহমান শওকত, আব্দুছ ছালাম, শফিকুল ইসলাম, এডভোকেট শফিকুর রহমান, আনোয়ার রশীদ, সিরাজুল ইসলাম, পল্টন রয়, হুমায়ুন কবির, আবু নওশাদ, মো. বাদল হোসেনসহ সমবায় ভবন দোকান মালিক ও ব্যবসায়ী সমিতির অন্যান্য সদস্যরা।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, আমাদের কোন পূর্ব নোটিশ না দিয়েই গত ১৩ অক্টোবর ২০২৩ ইং তারিখে সিলেট সিটি কর্পোরেশন মাত্র ৩ দিনের মধ্যে আমাদের সকল দোকান মালিক ও ব্যবসায়ীকে একসাথে নিজেদের মালামাল সরিয়ে নিতে পত্রিকায় একটি গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন যা জানার পর প্রতিটি ব্যবসায়ী, দোকান মালিক, কর্মচারী এবং পরিবারের সদস্য সহ আমরা সবাই নিজ নিজ ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ি। ১৯৯৫-৯৬ সনে নির্মিত উক্ত ৪র্থ ভবনটির মাটি পরীক্ষা করেন তৎকালীন সিভিল প্রকৌশলী (বি এস সি) আর কে দাশ এবং ভবনটির প্লান এস্টিমেট করেন গণপূর্ত অধিদপ্তরের সিলেট সার্কেলের তৎকালীন উপ সহকারী প্রকৌশলী এবং উক্ত প্লান ডিজাইন পৌরসভার তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী কর্তৃক বিগত ০২/১২/১৯৯৫ তারিখে এবং পৌরসভার তৎকালীন চেয়ারম্যান কর্তৃক বিগত ০৭/১২/১৯৯৫ তারিখে ৫১৮নং স্বারকে অনুমোদন প্রদান করেন। বিগত ১৭/০৩/২০০৮ তারিখে সিলেট সিটি কর্পোরেশন বরাবর শুধুমাত্র প্রথম ভবনটি উল্লখ করে এই ৫২টি দোকান বিশিষ্ট ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ কিনা তা নির্দিষ্ট অনুসন্ধান সাপেক্ষে প্রতিবেদন প্রকাশ করার জন্য অনুরোধ করলে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের তৎকালীন প্রকৌশলীবৃন্দ ও অনুসন্ধান দল পরিদর্শন কালে “এটি এমন কোন ঝুঁকিপূর্ণ নয়, বরঞ্চ একটু কাজ করালেই ঠিক হয়ে যাবে” বলেন। বিগত ১৭/০৯/২০০৮ সালে তাদের নিজ প্রতিবেদনে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে রায় দিলেও তাদের নিজ মন্তব্যের সাথে মিল রেখে পরবর্তীতে ০২/০৬/২০২১ তারিখে ৪৬.০৭.০০০০.০১৮.৯৯.০৫৫২১-১৬৮৭ নং স্বারকে সিটি কর্পোরেশন থেকে ভূমির মালিক বরাবর ১ মাসের মধ্যে প্রথম ভবনটিকে “রেট্রফিট” পদ্ধতিতে ভবনের স্থায়িত্ব বৃদ্ধি করার নির্দেশ প্রদান করেন।
বক্তারা আরো বলেন, পরিস্থিতি আনুধাবন করে আমরা দোকান মালিক ও ব্যবসায়ীবৃন্দ ভূমির মালিককে বারংবার একটিবার আমাদের সাথে বসে আমাদের ন্যায্যও অধিকার ঠিক রেখে সুন্দর করে পরামর্শ করে তাদের পরিকল্পনা এগিয়ে নেওয়ার অনুরোধ করলেও তারা কেউই আমাদেরকে কোনভাবেই আজ অবধি পাত্তা দেননি। আমাদের সকলের আত্মপক্ষ সমর্থন ছাড়া তারা মহামান্য আদালতকে ৪টি বিল্ডিংকে পুরো একটি বিল্ডিং বুঝাতে সক্ষম হলে অতঃপর বিগত ১১/০৫/২০১৩ ইং তারিখে সুপ্রিম কোর্টের রিট পিটিশন নং ২৮৩৮ (২০১৬) এর রায়ে মাননীয় সুপ্রিম কোর্ট সমবায় ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষনা করলে আমরা অতিসত্বর সকল দোকান মালিকগণ এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে আমাদের আবেদন গৃহীত হয় এবং এই রায় পুনর্বিবেচনার শুনানির জন্য মাননীয় সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার জজ বিচারপতি মো. এনায়েতুর রহিম এর বেঞ্চে সিভিল পিটিশন লিভ টু আপীল নং ৩০০১ (২০২৩) আপীল মামলা আগামী ২০শে নভেম্বর ২০২৩ ইং তারিখে শুনানির জন্য ধার্য্য করা রয়েছে। গত ২৬/১০/২০২৩ তারিখে সিলেট সিটি কর্পোরেশন প্রধান প্রকৌশলীর কাছ থেকে একটি নোটিসের মাধ্যমে মার্কেট কমিটিকে ডেকে পাঠালে অতঃপর একই তারিখে সন্ধ্যা ৭ টায় মেয়রের নেতৃত্বে সমবায় ভবন মার্কেটের পক্ষে ৪ জন ব্যবসায়ী প্রতিনিধি, ভূমির মালিকের পক্ষে তাদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, সিটি কর্পোরেশনের পক্ষে মেয়র, প্রধান প্রকৌশলী, একজন ম্যাজিস্ট্রেট এবং কিছু অধস্তন কর্মকর্তা এবং একজন মার্কেট নির্মাতা ঠিকাদার নিয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় মেয়র আমাদেরকে অবহিত করেন যে ইতিমধ্যে এই জায়গায় ১৬ তলা বিশিষ্ট একটি মার্কেট কমপ্লেক্স এর নকশা সহ অনুমোদন নেয়া আছে এবং এমনকি তিনি বিল্ডিং নির্মাতাকে আমাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। ঘটনার আকস্মিকতায় আমরা হতবাক হই কেননা ভূমির সম্পূর্ণ জায়গায় ৪ ইঞ্চি ঘন পাকা মেঝে সহ বিল্ডিং আছে যেখানে কক্ষনো কোন মাটি পরীক্ষা হয়নি। মাটি পরীক্ষা করতে হলে জায়গা খালি করতে হবে যা আদৌ সম্ভব নয়। মাটি পরীক্ষা ছাড়া কিভাবে নকশা অনুমোদন হল আমরা সাথে সাথে মেয়রকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি আমাদেরকে বলেন, “এটি তোমাদের দেখার বিষয় নয়!”। আমরা মেয়র মহোদয়কে আমাদের আপীল শুনানির তারিখের পূর্ব পর্যন্ত সময় প্রদান করার জন্য অনুরোধ করলে তিনি তাতে অসম্মত হন এবং আমাদেরকে আবারো ৩ দিনের ভিতর দোকান কোঠা খালি করার জন্য হুঙ্কার ছুড়েন। বলা বাহুল্য বরেণ্য আইনজ্ঞের পরামর্শের ভিত্তিতে আমরা জানতে পেরেছি আপীলের তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা আইনত কোন সাংঘর্ষিক বিষয় নয় বরঞ্চ এটি কাম্য।
বক্তরা বলেন, সুপ্রিম কোর্টের রায়ে আমাদের প্রথমে বিকল্প জায়গায় পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে অতঃপর রায়ের অন্য অংশ কার্যকর করার নির্দেশ থাকলেও আমাদের সাথে এখনো কেউ কোন আলোচনা করেন নি এবং আমরা এখনো কারো কাছ থেকে কোন সহযোগিতা পাইনি। সর্বশেষ, আমরা সবাই জানি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় অথবা শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এর নিজস্ব গবেষণা ব্যবস্থা আছে যেখানে একটি ভবন ঝুঁকিপূর্ণ কিনা তা জানা যায় এবং সারা বাংলাদেশে তা স্বীকৃত। এরই প্রেক্ষিতে আমরা স্বীকৃত এই পন্থায় গত ২৪/১০/২০২৩ তারিখে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সি. আর. টি. সি. সি. ই. ই. বিভাগ বরাবর আমরা সমবায় ভবন দোকান মালিক ও ব্যবসায়ীগণের পক্ষ থেকে আমাদের ৪টি ভবনকে অনুসন্ধান করে প্রথম ভবনটি কি এখনো “রেট্রফিট” পদ্ধতিতে মেরামরত করা যাবে কি না নাকি তা ভেঙ্গে ফেলা জরুরী এবং বাকী ৩টি ভবনের বিস্তারিত বিজ্ঞানভিত্তিক প্রতিবেদন প্রকাশ করার জন্য আবেদন করলে তা গৃহীত হয়।
বক্তারা তাদের ১৫৫টি দোকানের মালিক কর্মচারীসহ প্রায় ৫০০টি পরিবারের জীবিকা নির্বাহের এই সম্বল সমবায় ভবন মার্কেটের সকল জনগণের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট মহল সরকারি ব্যাক্তিত্ব ও প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি ব্যাক্তিত্ব ও প্রতিষ্ঠান, সাংবাদিক মহল, বুদ্ধিজীবী মহল, জনপ্রতিনিধিসহ সবাইকে বিষয়টি ন্যায়সঙ্গতভাবে দেখার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জনান।