দীর্ঘায়ুর রহস্য জানালেন পৃথিবীর প্রবীণতম মানুষ
![](https://dainiksylhet.com/images/icon.jpg)
দৈনিকসিলেটডেস্ক
১৯০৭ সালে জন্ম। এরপর দুটি মহামারি, দুটি বিশ্বযুদ্ধ ও একটি গৃহযুদ্ধ দেখেছেন মারিয়া ব্র্যানিয়াস মোরেরা। গিনিজ বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের মতে, তিনিই এখন পৃথিবীর সবচেয়ে প্রবীণ মানুষ। দীর্ঘ জীবন লাভের রহস্য কি জানতে চাইলে তার উপদেশ- টক্সিক ও বিরক্তিকর মানুষ এড়িয়ে চলুন, ইতিবাচক চিন্তা করুন, বেশিদিন বাঁচতে পারবেন।
১১৫ বছর বয়সী মারিয়া ব্র্যানিয়াস টক্সিক মানুষ এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন
মারিয়া ব্র্যানিয়াস বলেন, নিয়ম-শৃঙ্খলা মেনে চলা, পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা, প্রকৃতির কাছাকাছি থাকা, মানসিক ও আবেগিক স্থিতিশীলতা, দুশ্চিন্তা ও আক্ষেপমুক্ত জীবনযাপন এবং টক্সিক মানুষ এড়িয়ে চলার কারণেই দীর্ঘ জীবন পেয়েছি বলে মনে করি।
তিনি বলেন, শান্ত ও নিয়মবদ্ধ জীবনযাপনই মূলকথা। কোনো আফসোস-আক্ষেপ রাখা যাবে না। বিরক্তকর ও টক্সিক মানুষ কাছে ঘেঁষতে দেওয়া যাবে না। এর বাইরে দীর্ঘায়ুর রহস্য বলতে কিছু থাকলে তা হলো ভাগ্য। বেশিদিন আয়ু আপনার ভাগ্যে থাকতে হবে। এছাড়া আপনার জিন ভালো হতে হবে।
ক্যালিফর্নিয়ার একটি স্পেনিশ পরিবারে মারিয়া ব্যানিয়াসের জন্ম। স্পেনিশ ফ্লু, প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, স্পেনের গৃহযুদ্ধ ও সাম্প্রতিক সময়ে কোভিড অতিমারির সাক্ষী হয়েছেন তিনি। দেশে ও বিশ্বে এত ঝঞ্জাটের মধ্যেও নিজের মতো করে মোটামুটি শান্ত্ব জীবন যাপন করেছেন এ শতবর্ষী।
বর্তমানে স্পেনে বসবাসকারী মারিয়া ব্র্যানিয়াস বৈশ্বিক প্রচারমাধ্যমের আলোতে পড়েন ২০২০ সালে। সে বছর মে মাসে তিনি কোভিডে আক্রান্ত হলে পৃথিবীর বহু দেশে তাকে নিয়ে খবর বেরোয়। ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের আগে স্পেনে বহু মানুষ কোভিডে প্রাণ হারায়।
কোভিড থেকে সেরে ওঠার পর মারিয়া ব্র্যানিয়াস হয়ে ওঠেন কোভিডের সবচেয়ে প্রবীণ সারভাইভার। তবে কিছুদিন পর ফ্রান্সের তুলন শহরের ১১৮ বছর বয়সী অধিবাসী লুসিল র্যান্ডন কোভিডে আক্রান্ত হন এবং সেরে ওঠেন। লুসিল র্যান্ডন গত ১৭ জানুয়ারি প্রয়াত হয়েছেন। এর ফলে মারিয়াই এখন বিশ্বের সবচেয়ে প্রবীণ মানুষ।
জীবনে বহু ঘাত-প্রতিঘাত দেখেছেন মারিয়া ব্র্যানিয়াস। ১৯০৭ সালে স্যান ফ্রান্সিসকোতে জন্ম। এর এক বছর আগে তার পরিবার স্পেন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দেয়। পরবর্তী আট বছরে পরিবারটি প্রথমে টেক্সাস ও পরে নিউ অরলিন্সে স্থানান্তর হয়।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে পরিবারটি স্পেনে ফেরার সিদ্ধান্ত নেয়। যুদ্ধের কারণে তখন কিউবা ও আজোরেস ঘুরে জাহাজ চলাচল করতে হতো। দীর্ঘ সমুদ্রযাত্রায় মারিয়ার বাবা যক্ষায় আক্রান্ত হয়ে জাহাজেই মারা যান।
স্পেনে আসার পরেই ১৯১৮ সালে স্পেনিশ ফ্লুর প্রকোপ শুরু হয় বিশ্বজুড়ে। এরপর মারিয়া ব্র্যানিয়াসের বয়স যখন ২৯, তখন স্পেনে শুরু হয় গৃহযুদ্ধ। সেটা থামার আগে শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ।
এরইমধ্যে চিকিৎসক হুয়ান মোরেতের সঙ্গে মারিয়ার বিয়ে ঠিক হয়। বিয়ের দিন গির্জায় অপেক্ষায় থাকা অবস্থায় তারা জানতে পারেন, বিয়েতে যার পৌরহিত্য করার কথা, সেই যাজক মারা গেছেন। গির্জায় কোনো টেলিফোন ছিল না। অগত্যা বর-কনে নিজেরাই গাড়ি নিয়ে নতুন যাজক খুঁজতে বের হন।
সেই থেকে প্রযুক্তিতে নিজেকে অভ্যস্ত করে নিয়েছেন মারিয়া ব্র্যানিয়াস। এখনও একটি ভয়েস-টু-টেক্সট ডিভাইসের সাহায্যে টুইটার ব্যবহার করেন তিনি, যাতে কাছের মানুষদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারেন।
নতুন বছরের শুরুতে এক টুইটে তিনি লিখেছেন, কেউই অনন্ত জীবন পাবে না। এই বয়সে এসে জীবনকে এক উপহার, একটি বিনীত উদযাপনের উপলক্ষ মনে হয়। আসুন এক সাথে জীবনকে উপভোগ করি।