কিশোরীর স্পর্শকাতর স্থানে চিকিৎসকের হাত, মামলা দায়ের
দৈনিকসিলেটডেস্ক
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) মেডিকেল সেন্টারের চিকিৎসক মো. রাজু আহমেদের বিরুদ্ধে এক কিশোরীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় রাজশাহী নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
অভিযুক্ত মো. রাজু আহমেদ রাবি মেডিকেল সেন্টারের উপ-প্রধান চিকিৎসক। তার বাড়ি নাটোর জেলায়। ভুক্তভোগী কিশোরীর বয়স ১৩ বছর।
মামলার এজাহারে বলা হয়, গতকাল সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তালাইমারী আমেনা ক্লিনিকের নীচতলায় বিবাদীর চেম্বারে তার মেয়ের দাঁতের চিকিৎসা করানোর জন্য যান বাদী। একপর্যায়ে মোবাইল ফোনে কল আসলে তিনি কথা বলার জন্য বিবাদীর চেম্বার থেকে বাইরে বের হন। এমন সময় বিবাদী তার মেয়ের দাঁতের চিকিৎসা করাকালে ডেন্টাল চেয়ারে শোয়া অবস্থায় মেয়েটির শরীরের বিভিন্ন স্থানে হাত দেন।
এজাহারে আরও বলা হয়, এতে বিব্রতবোধ করে ওই কিশোরী। বিবাদী কোনো কথা না শুনে পুনরায় কিশোরীর জামার ভিতর দিয়ে স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেন। এতে কিশোরী ভয়ে চিৎকার করে ওঠে। চিৎকার শুনে বাদী চেম্বারের ভিতরে প্রবেশ করলে তার মেয়েকে কান্নারত অবস্থায় পান। তিনি মেয়ের মুখে ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত শোনেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নিজের মেয়েকে যৌন নিপীড়নের এই ঘটনায় তার মা ক্ষুব্ধ হয়ে ডা. রাজু আহমেদকে মারতে শুরু করেন। ঘটনার পর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে রামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিলে চিকিৎসক ৪ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তির নির্দেশ দেন।
চিকিৎসকের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি:
ওই চিকিৎসকের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতকরণ এবং স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুতির দাবিতে মানববন্ধন করেছেন শিক্ষকরা। আজ দুপুর ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে ফলিত রসায়ন ও রসায়ন প্রকৌশল বিভাগের ব্যানারে মানববন্ধন করেন তারা।
কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের দুই শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী অংশ নেন। মানববন্ধন শেষে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করে অভিযুক্তের যথাযথ শাস্তির দাবি জানান।
মানববন্ধনে সংহতি জানিয়ে সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক জান্নাতুল ফেরদৌস জানান, এর আগেও ডা. রাজু আহমেদের বিরুদ্ধে নারীদের শ্লীলতাহানি করার অভিযোগ উঠেছিল। তিনি নিজেকে সংযত রাখতে পারেন না। তার শুধু চাকরি নয়, চিকিৎসার সনদ বাতিল করা দরকার। এ বিষয়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
অভিযুক্তকে দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোবাররা সিদ্দিকা বলেন, ‘আমাদের একই দাবিতে বারবার রাস্তায় দাঁড়াতে হচ্ছে। আমরা সহকর্মী, শিক্ষক ও নারী হিসেবে কোথাও নিরাপদ নই। এটি অত্যন্ত দুঃখের নাকি লজ্জার বিষয়, কী বলব, বুঝতে পারছি না।’
মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন আইন বিভাগের অধ্যাপক আবদুল আলিম, রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক লায়লা আরজুমান বানু, জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির পরিচালক দিল সেতারা চুনি প্রমুখ। এ ছাড়া কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন ফলিত রসায়ন ও রসায়ন প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক রিজাউল করিম শেখ, তৌফিক আলম, সৈয়দ এম এ ছালাম, এ নাঈম ফারুকী, ছাইফুল ইসলাম, খাইরুল ইসলাম প্রমুখ।
মামলার বিষয়ে বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহরাওয়ার্দী হোসেন বলেন, ‘ভুক্তভোগীর মা বাদী হয়ে আজ মঙ্গলবার সকালে একটি মামলা করেছেন। ঘটনাটি তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, ‘ভুক্তভোগীর পরিবার এসে দেখা করেছেন। একটি লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। অভিযোগ তদন্ত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। তাছাড়া যেহেতু একটি মামলা করা হয়েছে, মামলাটি রাষ্ট্রীয় আইনি প্রক্রিয়ায় চলমান থাকবে।’
সূত্র:আমাদেরসময়