ইট পাটকেলের বদলে ফিলিস্তিনিদের হাতে রকেট-ক্ষেপণাস্ত্র তুলে দিলেন যিনি
![](https://dainiksylhet.com/images/icon.jpg)
দৈনিকসিলেটডেস্ক
দশকের পর দশক ফিলিস্তিনি তরুণদের প্রতিরোধ অস্ত্র ছিল ইট পাটকেলে বা পাথরের টুকরো। কিন্তু গেল ৭ অক্টোবর তারা ইসরায়েলের অভ্যন্তরে যে অভিযান চালিয়েছে, সেখানে দেখা গেল ভিন্ন এক রূপ। অভিযানে রকেট, ক্ষেপণাস্ত্র ও আধুনিক সব অস্ত্র ব্যবহার করে ফিলিস্তিনিরা। যাতে তাসের ঘরের মতোই ভেঙে পড়ে ইসরায়েলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ফলে, প্রশ্ন ওঠে- ইটের টুকরোর পরিবর্তে কে তাদের হাতে রকেট-ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনের মতো অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সমরাস্ত্র তুলে দিল?
এতদিন বলা হতো ইসরায়েলের আকাশ অজেয়। যুদ্ধে তারা কেবল মারতে শিখেছে। ফিলিস্তিনিরা নয়, এই মিথ ধ্বংস করেছেন একজন ইরানি শিল্প প্রকৌশলী। যিনি মোটর অপারেটর হিসেবে শুরু করেছিলেন দেশসেবা। যাকে বলা হয় ইরানের ‘মিসাইল প্রযুক্তির জনক’। তিনি- হাসান তেহরানি।
এই তেহরানির জন্যই ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের নাগরিকেরা বিশ্বাস করতে শিখেছেন- আগের মতো আর তারা নিরাপদ নন। ইরানের একজন প্রযুক্তিবিদ তাদের নিরাপত্তা ছিনতাই করে নিয়েছেন। এমনকি ১৭ জন সহযোগীসহ তাকে হত্যার পরও অবস্থার অবনতি থামানো যায়নি।
২০১১ সালের ১২ নভেম্বর তেহরানের কাছে এক রহস্যময় বিস্ফোরণে হাসান তেহরানি মারা যান। মৃত্যুর আগে বলে গিয়েছিলেন, তার কবরের ফলকে যেন লেখা থাকে- এখানে এমন একজন শুয়ে আছেন, যিনি ইসরায়েলকে ধ্বংস করতে চাইতেন।
তেহরানি কখনো ইসরায়েলে হামলা চালাননি। তার কৌশল ছিল ভিন্ন। দুটো কাজ করেছেন তিনি- মিসাইল প্রযুক্তির উন্নয়ন এবং সেই জ্ঞান ইসরায়েলবিরোধী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছেন। ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা গাজায় যেসব অস্ত্র দিয়ে ইসরায়েলকে ঘায়েল করেছেন, তার চেয়ে বেশি কার্যকর অস্ত্র রয়েছে লেবানের ইসরায়েলবিরোধী গোষ্ঠীর হাতে। যে কারণে তাদের এতটা ভয় পায় নেতানিয়াহুর দেশ।
তেহরানির একটি বিখ্যাত উক্তি রয়েছে- জ্ঞানকে বোমা মেরে ধ্বংস করা যাবে না। যার মাধ্যমে তিনি বুঝিয়েছেন, ইসরায়েলবিরোধী ইরানি-মিত্রদের অস্ত্র দেওয়ার চেয়ে, প্রযুক্তি ভাগাভাগি ও প্রশিক্ষণ দেওয়া ভালো। তাতে খরচ কম, ঝুঁকি কম, সফলতা বেশি। ঠিক সেই কাজটিই করে দেখিয়েছেন ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা।
লেবানন, গাজা ও ইয়েমেনকে হাসান তেহরানির মিসাইল প্রযুক্তির তিন পরীক্ষাগার বলা হয়। তেহরান সরাসরি যুদ্ধ ময়দানে না থেকেও, ওই তিন জায়গা থেকে ওয়াশিংটন ও তেলআবিবকে যুদ্ধে জড়িয়ে ফেলেছে।
৭ অক্টোবরের হামলায় মাত্র ২০ মিনিটে ইসরায়েলে ৫ হাজার রকেট ছোঁড়ে ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা। যার একেকটি বানাতে খরচ হয়েছে মাত্র কয়েকশ ডলার। অথচ আইরন ডোম দিয়ে সেগুলোর একেকটি ধ্বংস করতে ইসরায়েলের খরচ ৫০ হাজার ডলার করে।
মাত্র ২৩ বছর বয়সে ইরানের মিসাইল ল্যাব গড়ে তোলার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পেয়েছিলেন তেহরানিসহ কয়েকজন প্রকৌশলী। নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে প্রথমে ৬০ মাইল পাল্লার ‘নাজিয়াত’ সিরিজের রকেট বানান তারা। এরপর ‘শাহাব’ সিরিজ। সমর খাতে ইরানের প্রযুক্তিগত বিকাশ ইসরায়েলের নজর এড়ায়নি।
তেহরানি গুপ্তহত্যার শিকারের পর বর্তমানে ইরানের মিসাইল কর্মসূচির অভিভাবক আমির আলী। এই দল এ বছর ‘ফাত্তাহ’ নামে হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক মিসাইল প্রদর্শন করেছে। ইরানের দাবি, এটা ইসরায়েলের মিসাইল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ফাঁকি দিতে সক্ষম এবং এক হাজার চারশ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যে আঘাত হানতে পারবে।
আমির আলীদের দাবি সত্য হলে তেহরান থেকে তেলআবিব পৌঁছাতে এই মিসাইলের মাত্র কয়েক মিনিট লাগবে। ইসরায়েলের উদ্বেগ- ইরান এই প্রযুক্তি ফিলিস্তিনি বা লেবাননের হাতে তুলে দিলে, অস্তিত্ব সংকটে পড়ে যাবে তারা।