নাশকতার আশঙ্কায়
বিশেষ ব্যবস্থায় বাহুবল থেকে পেট্রোলবাহী গাড়ি পৌঁছে দেয়া হয়
হবিগঞ্জ প্রতিনিধি
বিএনপির ডাকা অবরোধ আর নাশকতার আশঙ্কায় পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকায় জ্বালানি সঙ্কটে পড়েছে পেট্রোল পাম্পগুলো। আর এর প্রভাব পড়েছে পরিবহন সেক্টরে। জ্বালানি নির্ভর যানবাহনের ব্যবহারকারীরা পড়েছেন বিপাকে। এদিকে কামাইছড়া, রশিদপুর ৩টি ডিপোতে প্রতিদিন তেল সরবরাহ করা হংচ্ছে পুলিশ বিজিবির প্রহরায়। ডিপোগুলোত তেলের পর্যাপ্ত মজুদ থাকার পরও নাশকতার আশঙ্কায় পেটোল পাম্পের মালিকরা নিয়মিত তেল সংগ্রহ করতে পারছেন না। অন্যদিকে কিছু পাম্পে তেল থাকলেও যানবাহন চলাচল সীমিত হয়ে যাওয়ায় বিক্রিও কমে গেছে। বিএনপির দ্বিতীয় বার ডাকা অবরোধ ও নাশকতার কারণে বাহুবল ও শ্রীমঙ্গলের পদ্মা, মেঘনা ও যমুনার ৩টি ডিপোতে দেখা দিয়েছে জ্বালানি সঙ্কট।
অপরদিকে সড়কগুলোতে ট্রাক, ট্যাংক লরী চলাচলও সীমিত হয়ে পড়েছে। হাইওয়ে পুলিশ ও বিজিবি‘র প্রহরায় জ্বালানি তেল ডিপো থেকে সীমিত পরিমাণে ট্যাংক লরীর মাধ্যমে আনা হলেও সব পেট্রোল পাম্পগুলোতে সরবরাহ করা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় অধিকাংশ পাম্পে গিয়ে পেট্রোল না পেয়ে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন যানবাহন চালকরা। অন্যদিক অবরোধের এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে বেকার হয়ে পড়ার আশংকা দেখা দিয়েছে কর্মরত শত শত পরিবহন শ্রমিকরা। অপরদিকে অবরোধের কারণে ডিপো থেকে নিয়মিত তেল আনতে পারছেন না। ডিপোতে তেল পর্যাপ্ত মজুত থাকলেও অবরোধের কারণে দূরদূরান্ত থেকে পাম্প মালিক ও খুচরা ব্যবসায়ীর আসতে পাড়ছেন না। এদিকে হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার জেলার ৩টি ডিপোর আওতায় ৭টি উপজেলাসহ আশেপাশের জেলাগুলোতে মোট ৩৫টি পাম্পে গড়ে প্রতিদিন ৩ লাখ লিটার ডিজেল, ২ লাখ লিটার পেট্রলএবং অকটেনের চাহিদা রয়েছে। তেব বিপিসির আঞ্চলিক নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, কামাইছড়া, রশিদপুর ও চট্টগ্রাম থেকে ট্রাংক লরি পৌছতে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। তবে মৌলভীবাজার জেলার ডিপো থেকে মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জসহ পাশ্ববর্তী জেলার পেট্রোল পাম্পে জ্বালানি সরবরাহ করা হয়। এসব ডিপোয় পর্যাপ্ত জ্বালানি থাকার কথা তারা জানিয়েছেন।এদিকে জেলার পেট্রোল পাম্প ও জ্বালানি তেল সরবরাহে নিয়োজিত ট্রাংক লরি সমিতির নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন, অবরোধের কারণে ‘ডিপোতে নিয়মিত যানবাহন সরবরাহ দিতে ভয় পাচ্ছেন তারা। ট্যাংক লরীতে আগুন দেওয়ার ভয়ে ঝুঁকি নিয়ে তেল নিয়ে আসতে পারছে না গাড়ির মালিকরা। অপরদিকে অবরোধে নাশকতার কারণে বিরুপ প্রভাব পড়ছে। তবে হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলার আইনশৃংখলা ও জ্বালানী খ্যাতের সংকট কাটাতে প্রতিদিন সংশ্লিষ্ট থানা, হাইওয়ে পুলিশ ও বিজিবি‘র প্রহরায় জেলার ডিপো ও আশেপাশের পাম্পগুলোতে জ্বালানি তেল সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে চেষ্টা করা হচ্ছে জানিয়েছেন হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার এসএম মুরাদ আলি।
কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে সোমবার (৬ নভেম্বর) বিকেলে কামাইছড়া, বাহুবল, হবিগঞ্জস্থ কনডেনসেট ফ্র্যাকশনেশন প্লান্ট হতে উৎপাদিত জালানি ট্যাংকলরী ঢাকা সিলেট মহাসড়ক হয়ে চুনারুঘাট উপজেলার শায়েস্তাগঞ্জ নতুনব্রিজ গোল চত্বর পার হয় গাড়ির বহর।পরে গোদনাইল, ফতুয়া, বাঘাবাড়ী, রংপুর ও পার্বতীপুর) ট্যাংকলরীর মাধ্যমে (প্রতিদিন কমবেশি প্রায় ৭০-১০০ তেলবাহী গাড়ি গিয়ে পৌঁছায়। সংশ্লিষ্ট থানা, হাইওয়ে পুলিশ, বিজিবি সহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিশেষ নিরাপত্তা বলয়ে সড়ক পথে ওই তেলবাহী গাড়ি ডিপো থেকে নিয়ে আসা হয়। ফলে কোন ধরনের বাঁধাবিপত্তি ছাড়াই ওই গাড়ি গুলো পৌঁছানো হয়৷ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানায়, তেলবাহী গাড়ি বহনকারী যানবাহন চলাচলে যাহাতে সমস্যা তৈরি হতে না পারে এ কারণে মহাসড়কে বিজিবির পাশাপাশি হাইওয়ে পুলিশ বাহিনীর বিশেষ ফটো কলে গাড়ি পৌঁছে দেয়া হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রশিদপুর ডিপোর এক কর্মকর্তা বলেন,বিপিডি সিএফপি ইতোমধ্যে জ্বালানি বিভাগ ও জেলা প্রশাসকের কাছে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আমরাও স্থানীয় প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছি; যাতে স্থানীয় তেলের ডিপো, তেল পরিবহনকারী গাড়িগুলোর নিরাপত্তা দেওয়া হয়। অবরোধ-হরতালে প্রতিনিয়ত স্থানীয় থানার সঙ্গে যোগাযোগ রেখে কাজ করা হচ্ছে।
জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চিঠিতে বলা হয়েছে, সিলেট গ্যাস ফিল্ড লিমিটেডের বাহুবলের কামাইছড়া, রশিদপুর সহ বিভিন্ন ডিপো থেকে প্রতিনিয়ত ট্যাংকলরির মাধ্যমে জ্বালানি তেল বিভিন্ন পয়েন্টে তেলের জোগান নিশ্চিত করা হয়। বিশেষ করে বাহুবল ও রশিদপুর ডিপোগুলো থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় তেল পাঠানো হয়। তাই হরতাল-অবরোধে তেলবাহী গাড়ির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। এদিকে সিলেট গ্যাস ফিল্ড লিমিটেডের এক কর্মকর্তা বলেন, হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বরাবরে চিঠি দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার প্রতিটি থানা এলাকায় জ্বালানি তেলের ডিপো, তেল পরিবহনকারী গাড়ি ও জ্বালানি বিভাগের বিভিন্ন স্থাপনার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন।