ওয়্যারিং পরিদর্শক সায়েমের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ
![](https://dainiksylhet.com/images/icon.jpg)
নুর উদ্দিন সুমন, হবিগঞ্জ
হবিগঞ্জ পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির বাহুবল সাব-জোনাল অফিসের ওয়্যারিং পরিদর্শক এ এসএম সায়েমের বিরুদ্ধে সেচের লাইন নির্মাণে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এঘটনাটি ঘটেছে বাহুবল উপজেলার সাতকাপন ইউনিয়নের মহব্বতপুর গ্রামে।
জানা যায়, উপজেলার মহব্বতপুর গ্রামের তাজুল ইসলাম নামে এক কৃষক সেচ পাম্পের বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য হবিগঞ্জ পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির বাহুবল সাব-জোনাল অফিসে আবেদন করেন। তার আবেদনের প্রেক্ষিতে বাহুবল সাব-জোনালের সহকারী জেনারেল ম্যানেজার মো: শহীদ উল্ল্যাহ হবিগঞ্জ পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির এ এসএম সায়েমকে সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেন। এরই প্রেক্ষিতে ওয়্যারিং পরিদর্শক সায়েম ওই সেচ প্রত্যাশী গ্রাহককে দুটি বৈদ্যুতিক কুটি স্থাপন করে সেচ সংযোগ নেয়ার জন্য ডিজাইন ম্যাপ করে হবিগঞ্জ পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির সদর দপ্তরে প্রেরণ করেন। তার ওই প্রতিবেদনের আলোকে হবিগঞ্জ পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি চলতি বছরের গত ৫ এপ্রিল দুই কুটি সহ লাইন নির্মাণ বাবদ ৯৬ হাজার টাকা জমা দিতে ওই গ্রাহককে ডি ডব্লিউ ৫২০/২৩ নং লডে অন্তর্ভূক্ত করে ই এন্ডসি বিভাগ ওই গ্রাহকের আবেদন অনুমোদন করেন । কিন্তু ওয়্যারিং পরিদর্শক এ এসএম সায়েম অনৈতিক সুবিধা নিয়ে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ওই গ্রাহকের সাথে গোপনে আতাত করেন। পরে প্রথম আবেদনের ৯৬ হাজার টাকা জমা না নিয়ে তথ্য গোপন করে ৩ মাস পর তাজুল ইসলামের নিকট থেকে পূনরায় দ্বিতীয় বার আবেদন গ্রহন করেন। শেষে নিজেই ডিজাইন ম্যাপ তৈরী করে আরেকটি প্রতিবেদন দাখিল করেন। ওই প্রতিবেদনে তিনি এক কুটি ও তার খরচ কমিয়ে সেচ পাম্পের লাইন নির্মাণ বাবদ ৯৬ হাজার টাকার পরিবর্তে ৪৮ হাজার টাকা জমা দেয়ার চাহিদা ইস্টিমিট করেন। পরে গত ৩০ আগস্ট ডি ডব্লিউ ১০২০/২৩ নং লডে অন্তর্ভূক্ত করে ইএন্ডসি বিভাগ ওই গ্রাহকের আবেদন অনুমোদন করেন। এরই ধারবাহিকতায় ওই গ্রাহক অফিসে ৪৮ হাজার টাকা জমা দেন। টাকা জমা দেয়ার কিছুদিন পর ঠিকাদার মামুন ওয়্যারিং পরিদর্শক এ এসএম সায়েমের ডিজাইন অনুযায়ী একটি সেচ ট্রান্সফরমার কুটি স্থাপন করে ৫কেভি ট্রান্সফরমার উত্তোলন করেন। যা ট্রান্সফরমার কুটি থেকে ১৩০ ফুট সার্ভিস ড্রপ ওই গ্রাহকের আবাসিক ঘরে ঝুলিয়ে রাখেন। সরেজমিনে দেখা যায়, তাজুল ইসলামের ওই আবাসিক ঘর থেকে তার সেচ বড়িংটি আরও ১০০ ফুট দূরে বিদ্যমান। যাহা সেচ সংযোগ ট্রান্সফরমার কুটি থেকে প্রায় ২৩০ ফুট দূরে অবস্থিত। সরকারি নিয়মে ১৩০ ফুটের বাহিরে সেচ সংযোগের নিয়ম না থাকলেও ওয়্যারিং পরিদর্শক এ এসএম সায়েম নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে সেচ সংযোগ থেকে ১৩০ফুটের স্থলে প্রায় ২৩০ ফুট দূরে স্থাপনের ক্যাচ ম্যাপ প্রদান করেন।
এ বিষয়ে হবিগঞ্জ পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী সুজিত কুমার বিশ্বাস সেচ অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেচ ট্রান্সফরমার কুটি থেকে সেচ বড়িং ১৩০ ফুট নয় বরং কোন সময়ে ২৩০ফুটে কুটি স্থাপন করা থাকলেও সরকারী নিয়মের আওতায় পড়বে।
হবিগঞ্জ পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির একাধিক সাধারণ কৃষক গ্রাহকরা জানান, ১৩০ ফুটের উপরে দুরুত্ব থাকলে প্রায় ৪৮হাজার টাকা দিয়ে কুটি ক্রয় করতে হয়। অভিযুক্ত এ এসএম সায়েমের সাথে মুঠোফোনে আলাপ করলে তিনি প্রথমে অনিয়মের বিষয়টি অস্বীকার করেন।
পরে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ওই সেচ প্রত্যাশী গ্রাহক তার কুটির ব্যয় কমাতে রিইস্টিমিট করার জন্য আবেদন করেন। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে পুনরায় তদন্ত করে ৯৬ হাজার টাকার পরিবর্তে এক কুটি সহ লাইন নির্মাণ ব্যয় ৪৮ হাজার টাকা জমা দেয়ার জন্য চিঠি প্রদান করি। তবে বাস্তবে পুর্বের আবেদনটি সেচ প্রত্যাশি গ্রাহক তাজুল ইসলাম ৩ এইচপি সেচ পাম্পের বিদ্যুত সংযোগের জন্য আবেদন করেন। তাছাড়া দ্বিতীয় আবেদনটি ওই গ্রাহক তথ্য গোপন করে পরিদর্শক সায়েমের মাধ্যমে ৫ এইচপি সেচ পাম্পের বিদ্যুত সংযোগের জন্য নতুন আবেদন করেন। বাস্তবে তিনি রিইস্টিমিটের জন্য আবেদন করেছেন বলে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। এবিষয়ে ঠিকাদার মামুন বলেন, ওয়্যারিং পরিদর্শক এ এসএম সায়েমের ডিজাইন অনুযায়ী আমি কাজ করেছি । তবে ১৩০ ফুটের মধ্যে সেচ বড়িং না থাকায় আমি ১৩০ফুট সার্ভিস ড্রপ তাজুল ইসলামের ঘরে ঝুলিয়ে রেখেছি ।
মহব্বতপুর গ্রামের আরেক সেচ গ্রাহক হারুনুর রশিদ অভিযোগ করে বলেন, ওয়্যারিং পরিদর্শক এ এসএম সায়েমের অনিয়মের কারণে সেচ সংযোগের জন্য ২৪শ টাকার পরিবর্তে ৩২ হাজার ৪শ টাকা জমা দিতে হয়েছে। তিনি আরও বলেন, পরিদর্শক সায়েম হুমকি দিয়ে বলেন, তার বাহিরে কথা বললে সেচ সংযোগ দেয়া হবেনা। এমন হুমকীতে সেচ সংযোগ না পাওয়ার ভয়ে অনেক গ্রাহকরাই তার বিরুদ্ধে কথা বলতে সাহস পাচ্ছেননা। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন এলাকায় নানা অভিযোগ রয়েছে। ২০২২/২৩৮ অর্থবছরের সবকটি সেচ সংযোগের সঠিক তদন্ত করলে তার অনিয়ম দুর্নীতির তথ্য বেরিয়ে আসবে বলে ভুক্তভোগী গ্রাহকদের দাবী ।