ফেঞ্চুগঞ্জে দোকানের কর্মচারী হত্যা মামলায় দুই আসামির যাবজ্জীবন

দৈনিকসিলেটডেস্ক
ফেঞ্চুগঞ্জের মুদি দোকানের কর্মচারী সজল বিশ্বাস পটল হত্যা মামলায় আসামি শাকিল ও সুমনকে বয়স বিবেচনায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) সকাল ১১টায় সিলেটের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মশিউর রহমান চৌধুরী দায়রা ৫২০/২৩ মামলায় এ রায় ঘোষণা করেন।
চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলায় মোট ১৯ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য প্রদান করেছেন। বাদীর আইনজীবী এ রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
এ মামলায় আসামিদের ২৮২ ধারায় ২ বছর ও ৪৪৯ ধারায় ৫ বছরের কারাদণ্ডেরও আদেশ দেওয়া হয়েছে।
দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা থানার ভোলারকান্দি গ্রামের মৃত দছির আলীর ছেলে শাকিল (২০) ও মিয়াধন মিয়ার ছেলে সুমন আহমেদ (২২)। এ মামলার আরও তিনজন আসামির বিচার শিশু আদালতে চলমান রয়েছে। শিশু আদালতে (মামলা নং ১৫৭/২৩ ) তাদের বিচারিক কার্যক্রম বর্তমানে শুরুর পর্যায়ে রয়েছে।
মামলার রায় দেওয়ার সময় আদালত তার পর্যবেক্ষণে বলেন, প্রসিকিউশন পক্ষ সর্বতোভাবে মামলাটি প্রমাণে সক্ষম হয়েছেন। মামলার আসামিদের বয়স যেহেতু খুবই কম সে কারণে তাদেরকে মৃত্যুদণ্ড না দিয়ে তাদেরকে সংশোধনের সুযোগ হিসেবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে।
মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট দেবব্রত চৌধুরী লিটন জানান, স্থানীয় তিন শিশু প্রায়ই ঋষিকেশদের মুদি দোকানে আসতো। নিহত সজল বিশ্বাস ২০ বছরে ধরে এ দোকানে কাজ করে আসছিল। আসামিরা সজলের কাছ থেকে বাকিতে জিনিসপত্র নিত। তবে বকেয়া টাকা পরিশোধ না করে নতুন করে বাকিতে মালামাল দেওয়ার জন্য সজলকে চাপাচাপি করত তারা। এ নিয়ে ভিক্টিম সজলের সঙ্গে তাদের মনোমালিন্যের সৃষ্টি হয়। এরই জের ধরে ২০২২ সালের ২০ জুলাই রাতে স্থানীয় ৩ শিশুর সঙ্গে ঐ এলাকায় বেড়াতে আসা আসামি শাকিল ও সুমনসহ সর্বমোট পাঁচ জন একত্রিত হয়ে সজলকে হত্যার পরিকল্পনা করে। ঘটনার দিন নিহত সজল প্রতিদিনের মতো রাতের খাবার শেষে দোকানে রাতযাপনের উদ্দেশ্যে বের হয়। সজল দোকানে গেলেপূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী আসামিরা সজলের গলায় গামছা পেছিয়ে একে অপরের সহায়তায় শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। সজল হত্যাকাণ্ড নিশ্চিত করার পর আসামিরা দোকানের ক্যাশে থাকা নগদ ৩ হাজার নিয়ে লাশ ফেলে চলে যায়।
খবর পেয়ে ফেঞ্চুগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে স্থানীয়দের সহায়তায় ঘিলাছড়া আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকা থেকে শাকিল ও সুমনসহ ৪ জনকে আটক করে। তাৎক্ষণিকই তারা স্থানীয়দের সামনে সজল হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী পরবর্তীতে হত্যাকাণ্ডে জড়িত অপর এক শিশুকে আটক করে পুলিশ।
সজল হত্যার ঘটনার পরদিন দোকান মালিক ঋষিকেশদে বাদী হয়ে ফেঞ্চুগঞ্জ থানায় ৫ আসামির নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
হত্যাকাণ্ডে নিজেদের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে এক শিশুসহ ৩ জন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করেন। এ মামলায় মোট ৩১ সাক্ষীর মধ্যে মোট ১৯ জন সাক্ষী আদালতে তাদের সাক্ষ্য প্রদান করেন।
রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন সিলেটের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মো. নিজাম উদ্দিন। এ মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ পাওয়া দুই আসামির আইনজীবী হিসেবে হিসেবে ছিলেন মো. জয়নাল আবেদীন।