ঘূর্ণিঝড় মিধিলি’র প্রভাবে শ্রীমঙ্গলে রোপা আমন ধানের ক্ষতি
শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি
ঘূর্ণিঝড় মিধিলি’র প্রভাবে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে রোপা আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পাশাপাশি শাকসবজিসহ বিভিন্ন ধরনের রবিশস্যের বেশিরভাগ ক্ষেতই নষ্ট হয়ে গেছে।
১৭ নভেম্বর শুক্রবার সকার থেকে রাত পর্যন্ত এক টানা বৃষ্টি হয়েছে। সঙ্গে ছিল হিমেল হাওয়া। বৃষ্টির কারণে মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারেনি। ক্ষতি হয়েছে শাকসবজিসহ বিভিন্ন ধরনের রবিশস্যের। বাতাসে নষ্ট হয়েছে মাঠের পাঁকা আমন ধানের।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে আমন ধানের তেমন ক্ষতি হয়নি। এতে উৎপাদনের উপর কোনো প্রভাব পড়বে না। তবে ক্ষতি হয়েছে রবি সবজির বীজ তলায়, সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে আলু চাষিদের অন্তত(ত্রিশ) হেক্টর জমির।
উপজেলা কৃষি অফিস থেকে জানা যায়, চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় ১৫ হাজার ৩৬৫ হেক্টর জমিতে আমন ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। কিন্তু আবাদ হয়েছে ১৫ হাজার ৩৭৫ হেক্টর। এর মধ্য পাঁচ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড জাতের বারি হাইব্রিড-৬, হীরা-১০, এজেড-৭০০৬ ও সুবর্ণ-৮ চাষ করা হয়। ১৫ হাজার ১২০ হেক্টর জমিতে উচ্চ ফলনশীল জাতের বিআর-১১, ১২, ব্রি ধান-৩২, ৩৪, ৪৯, ৫১, ৭১, ৭৫, ৮৭, ৯৩, ৯৪, ৯৫, বিনা-৭, ১১, ১৬, ও ১৭ এছাড়া ২৫০ হেক্টর জমিতে স্থানীয় জাতের বিরুইন, বালাম, কালিজিরা ও চিনিগুড়া ধান চাষ করা হয়। আর উৎপাদন লক্ষামাত্র ধরা হয় ৪৫ হাজার ৬৩৪ মে.টন (চাল)। উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্য আমন মৌসুমে ১১৫০ জন কৃষককে সরকারি প্রনোদনা (বীজ ও সার) দেয়া হয়েছে।
আশীদ্রোন ইউনিয়নের খোশবাস গ্রামের আব্দুস সালাম জিতু বলেন, চলতি মৌসুমে আমি ১২ কেদার জমিতে তিন জাতের আমন ধান রোপন করি। প্রথম দিকে পাঁকায় ধান গাছের ক্ষতি করলে পরে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় রোপা আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছিল। কয়েকদিন ধান কাটা শুরু করার কথা ছিল। প্রবল বাতাসে পাকা ধান নুয়ে পড়ছে এবং ঝরে পড়েছে অনেক ধান। এছাড়া পাকা ধান ক্ষেতে পানি জমে গেছে। এখন ধান কাটা যেমন কষ্টের তেমনি ধান কাটা শ্রমিকদের দিতে হবে দিগুণ মজুরি। প্রচুর ধান নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ফসল নিয়ে এখন দুশ্চিন্তায় আছি।
শ্রীমঙ্গল ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামের কৃষক সুমন বৈদ্য জানান, তিনি ৫ কেদার জমিতে আমন ধান চাষ করেছিল। ঢানা বৃষ্টি ও বাতাসে ধান ক্ষেতে পরে গেছে। ধান এখন পানির নিচে। বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এবার অনেক ভালো ফলন হয়। কিন্তু দুই দিনের বৃষ্টির কারণে কাঙ্খিত ফসল ঘরে তোলা নিয়ে তিনি চিন্তিত।
সিন্দুনখান ইউনিয়নের আলু চাষি মো. রোশন মিয়া বলেন, পাঁচ ছয় দিন আগে আমি বেশ কিছু জমিতে আলুর বীজ রোপন করি। এখনও চারা উঠেনি। বৃষ্টির কারনে সব বীজ নষ্টে হয়েগেছে। নতুন করে আবারও আলু বীজ রোপন করতে হবে।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মাকসুদুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে আমন ধানের তেমন ক্ষতির সম্ববনা নেই। এখন মুঠামুঠো জমির সব ধানই পাঁকা। যেসব ধান জমিতে পড়ে গেছে, রুদ্র উঠলে ধানি জমির পানি কমেলে ধান কাটলে কোনো ক্ষতি হবে না।
শ্রীীমঙ্গল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মহিউদ্দিন বলেন, ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলির’ প্রভাবে আমনের তেমন একটা ক্ষতি হয়নি। চলতি মৌসুসে আবাদ হয়েছে ১৫ হাজার ৩৭৫ হেক্টর, তার মধ্যে ৮০% ধান পেকেছে, কৃষক কর্তন শুরু করেছে। কিন্তু আকস্মিক বৃষ্টির কারণে রবি সবজির বীজ তলার ক্ষতি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে আলু চাষিদের।