নিবন্ধন বাতিলের রায় বহাল থাকায় যা বললো জামায়াত

দৈনিকসিলেটডেস্ক
জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ বলে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল খারিজ করে দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। রোববার জামায়াতের পক্ষে কোনো আইনজীবী না থাকায় প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন। এর ফলে হাইকোর্টের রায়ই বহাল থাকবে।
আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর ও অ্যাডভোকেট আহসানুল করিম। শুনানির শুরুতে জামায়াতের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এ জে মোহাম্মদ আলীর পক্ষে সময় প্রার্থনা করেন অ্যাডভোকেট জিয়াউর রহমান। তখন আপিল বিভাগ বলেন, আপনাদের সময় আবেদন খারিজ। একই সঙ্গে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল ডিসমিস ফর ডিফল্ট ঘোষণা করছি।
মূল মামলার আপিল খারিজ হয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন নিয়ে চলা মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত দলটির মিছিল-সমাবেশসহ সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন ও জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আবেদন গ্রহণ করেননি সর্বোচ্চ আদালত।
এর আগে গত ১২ই নভেম্বর ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে আপিল বিভাগে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী সময় চেয়েছেন। তার পক্ষে অ্যাডভোকেট জিয়াউর রহমান আবেদন করেন।
২০০৮ সালের ৪ঠা নভেম্বর জামায়াতে ইসলামীকে সাময়িক নিবন্ধন দেয়া হয়। পরের বছর বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের তৎকালীন সেক্রেটারি জেনারেল সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী, জাকের পার্টির তৎকালীন মহাসচিব মুন্সি আবদুল লতিফ, সম্মিলিত ইসলামী জোটের প্রেসিডেন্ট মাওলানা জিয়াউল হাসানসহ ২৫ জন জামায়াতের নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ রিট করেন।
রিটে জামায়াতের তৎকালীন আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, নির্বাচন কমিশনসহ চারজনকে বিবাদী করা হয়। তারা জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের আরজি জানান।
এদিকে আপিল বিভাগে দলের নিবন্ধন বাতিলের রায় বহাল প্রসঙ্গে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেছেন, এটি একটি ন্যায়ভ্রষ্ট রায়। আমরা এ রায় প্রত্যাখ্যান করছি। আইনজীবীরা আইন অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। আমরা মনে করি, জনগণের আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার ঘৃণ্য উদ্দেশ্যে এ ন্যায়ভ্রষ্ট রায় প্রদান করা হয়েছে।
রোববার রাতে সুপ্রিম কোর্টে জামায়াতের নিবন্ধন মামলায় প্রদত্ত রায়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেন তিনি।
মুজিবুর রহমান বলেন, জামায়াতের মত একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের বক্তব্য না শুনে জামায়াতের আইনজীবীর এ্যাজর্নমেন্ট বা মূলতবি পিটিশনটি খারিজ করে দিয়ে ‘পিটিশন ডিসমিস ফর ডিফল্ট’ হিসেবে আপিল মামলাটি খারিজ করে দেয়ায় জামায়াত ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এটি একটি ন্যায়ভ্রষ্ট রায়। আমরা এ রায় প্রত্যাখ্যান করছি। আইনজীবীরা আইন অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। আমরা মনে করি, জনগণের আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার ঘৃণ্য উদ্দেশ্যে এ ন্যায়ভ্রষ্ট রায় প্রদান করা হয়েছে। এ রায়ের মাধ্যমে মূলত সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে। আমরা জামায়াতের সর্বস্তরের জনশক্তি, সুধীমহল ও সকল গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবে এই স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে চলমান গণআন্দোলনকে আরো বেগবান করে সরকারের পতন নিশ্চিত করার আহ্বান জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, দেশে চলছে হরতাল ও অবরোধের কর্মসূচি।
এই পরিস্থিতিতে আদালত জামায়াতের নিবন্ধন মামলার শুনানির জন্য ১৯ নভেম্বর সময় নির্ধারণ করেন। রেওয়াজ অনুযায়ী হরতাল বা রাজনৈতিক কর্মসূচির দিন সিনিয়র আইনজীবীরা আদালতের কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন না। জামায়াতের নিবন্ধন মামলার সিনিয়র আইনজীবী নিবন্ধন মামলার শুনানি মূলতবি রাখার জন্য সময় আবেদন করেন। আদালত তা নামঞ্জুর করেন। সেই সঙ্গে ‘পিটিশন ডিসমিস ফর ডিফল্ট’ হিসেবে আপিল মামলাটি খারিজ করে দেন।
ভারপ্রাপ্ত আমীর বলেন, জামায়াতে ইসলামী ২০০৮ সালের ৪ নভেম্বর নির্বাচন কমিশন থেকে নিবন্ধন লাভ করেছিল। নিবন্ধনের বিরুদ্ধে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করা হয়। ২০১৩ সালের ১ আগস্ট সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে হাইকোর্ট রিটের নিষ্পত্তি করে রায় প্রদান করেন, যেখানে জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করা হয়। জামায়াত ঐ রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে। ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে দুই মাসের মধ্যে আপিলের সার-সংক্ষেপ জমা দেয়ার সময় সীমা বেঁধে দেয়া হয়। ডিফল্টার হলে জামায়াতের আপিল খারিজ হয়ে যাবে বলেও উল্লেখ করা হয়। জামায়াত নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বেই আদালতে সার-সংক্ষেপ জমা দেয়।
তিনি আরো বলেন, এবছরের ১০ জুন জামায়াতের শান্তিপূর্ণ সমাবেশ দেখে ঈর্ষান্বিত হয়ে জামায়াতের রাজনৈতিক তৎপরতার উপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে ও জামায়াত নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ এনে দুটো পিটিশন দায়ের করা হয়। ঐ পিটিশন শুনানির জন্য আদালত দিন-তারিখ ধার্য করেন। পরবর্তীতে ৬ নভেম্বর আপিল শুনানির বিষয়ে আদালত আদেশ প্রদান করেন।