জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে যাদের নাম বলে গেছেন ছাত্রলীগকর্মী আরিফ

দৈনিকসিলেটডেস্ক
সিলেটে ছাত্রলীগকর্মী আরিফ মিয়ার (১৯) ওপর যখন হামলা হয় তখন তাকে বাঁচাতে তার মা আখি বেগম সেখানে ছুটে গিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি পৌঁছানোর আগেই সন্ত্রাসীরা আরিফকে কুপিয়ে জখম করে ফেলে পালিয়ে যান। এরপর স্থানীয়দের সহায়তায় হাসপাতালে নেওয়ার পথে আরিফ তার মা আখি বেগমকে জানিয়েছিলেন, ‘হিরণ মাহমুদ নিপু, রনি, মামুন, হেলালসহ ১৫-২০ জন মিলে তাকে কুপিয়েছে।’
গতকাল সোমবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে নগরীর বালুচর টিবিগেট এলাকায় বাড়ির পাশেই আরিফকে কুপিয়ে জখম করা হয়। আজ মঙ্গলবার বিকেলে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গ থেকে আরিফের মরদেহ মা আখি বেগমের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার জন্যই সন্ত্রাসীরা আমার ছেলেকে হত্যা করেছে অভিযোগ করে আখি বেগম বলেন, ‘গত ১৫ নভেম্বর রাতে বাড়ি ফেরার পথে আরিফের ওপর হামলা চালিয়ে তার একটি আঙুল কেটে ফেলে। গতকাল সোমবার নগরীর শাহপরাণ থানায় চারজনের নাম উল্লেখ করে অভিযোগ করে বাড়ি ফিরি। আমি বাড়ি ফিরলে আরিফ আমার থেকে টাকা নিয়ে বাইরে বের হয়। এরমধ্যেই আমার ছেলের ওপর ওরা হামলা চালায়।’
একই অভিযোগ করেন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল ইসলামও। তিনি বলেন, ‘সিলেটের বালুচর-টিবিগেট এলাকায় ছাত্রলীগের নামে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চলছে। পুলিশ এসব নিয়ন্ত্রণ না করায় মেধাবী ছাত্র আরিফ মিয়াকে প্রাণ হারাতে হয়েছে। পুলিশ আগের ঘটনায় ব্যবস্থা নিলে এমনটা ঘটত না। ছাত্রলীগের নামে অছাত্ররা এসব করছে। পুলিশ সঠিক ব্যবস্থা নিলে তারা এসব করতে পারত না। তারা একটি কিশোর গ্যাং গড়ে তুলেছে।’
আরিফের হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করা না হলে রাজপথে কর্মসূচি দেওয়া হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে হিরণ মাহমুদ নিপুকে ফোন করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এরপর তার বাসায় গিয়ে খোঁজ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এদিকে, নিহত আরিফের বাবা রিকশাচালক ফটিক মিয়া অসুস্থ হয়ে দীর্ঘদিন ধরে শয্যাশায়ী। ছেলের মৃত্যুর খবরে কাঁদতেও ভুলে গেছেন তিনি। কী হয়েছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি রাজনীতি বুঝি না। কারা যেন আমার ছেলেকে মেরে ফেলেছে। তার মা তার লাশ আনতে গেছে। আমার ছেলে কলেজে পড়ত। তাকে কারা মারল? কেন মারল?’
জানা গেছে, অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জের ধরে সিলেটের বালুচর-টিবিগেট এলাকায় প্রায়ই সংঘর্ষে জড়ায় সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম ও সাবেক সভাপতি হিরণ মাহমুদ নিপুর অনুসারীরা।
সিলেটের শাহপরান থানায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মারধরের ঘটনায় আরিফের মা আখি বেগমের দায়ের করা অভিযোগটি গতকাল সোমবার রাতেই মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়েছে। মামলায় ৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ১০-১২ জনকে আসামি করা হয়েছে। সেখানে উল্লেখ করা হয়, ১৫ নভেম্বর রাত ৯টার দিকে উত্তর বালুচর এলাকার ২ নম্বর মসজিদের সামনে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
এ বিষয়ে সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার আজবাহার আলী শেখ বলেন, ‘এ ঘটনায় রনি ও মামুন মজুমদার নামে দুইজনকে আটক করেছে পুলিশ। বাকিদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হবে। তবে রাত পর্যন্ত হত্যাকাণ্ডে কোনো অভিযোগ দায়ের হয়নি।’
থানায় অভিযোগ প্রসঙ্গে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘অভিযোগ দেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আবারও হামলার ঘটনা ঘটেছে। তবে পুলিশ দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে। এখনো এ বিষয়ে পুলিশ সক্রিয় রয়েছে।’
সূত্র: আমাদেরসময়