শহিদুল আলমের পোস্টকে ‘ইহুদিবিদ্বেষপূর্ণ’ বলে জার্মানিতে প্রদর্শনী বাতিল

দৈনিকসিলেটডেস্ক
জার্মানভিত্তিক সমসাময়িক আলোকচিত্রের প্রদর্শনী ‘বিয়েনালে ফিও অ্যাকতুয়ালে ফটোগ্রাফি’ বাতিল করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রদর্শনীর একজন কিউরেটর ইহুদিবিদ্বেষপূর্ণ পোস্ট করেছেন—এমন অভিযোগে এটি বাতিল হয়েছে। আমেরিকান ম্যাগাজিক আর্ট নিউজের এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
লন্ডন ও নিউ ইয়র্ক ভিত্তিক আর্ট নিউজপেপার বিষয়টি নিয়ে প্রথমে প্রতিবেদন প্রকাশ করে জানায়, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মতে, বাংলাদেশের ফটোসাংবাদিক ও প্রদর্শনীটির সহকিউরেটর শহিদুল আলম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন পোস্ট করেছেন, যা ইহুদিবিদ্বেষপূর্ণ বিষয়বস্তু হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
তার পোস্টে উত্তর গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানকে হলোকাস্টের সঙ্গে তুলনার পাশাপাশি ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলকে গণহত্যার জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছে।
জার্মান শহর ম্যানহেইম, লুডভিগশাফেন ও হাইডেলবার্গে আগামী বছরের মার্চে প্রদর্শনীটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। তিনটি শহরের কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে বলেছে, শহিদুল আলমের পোস্টের পর তার সঙ্গে তাদের ‘বিশ্বাসের সম্পর্ক গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে’।
প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, আয়োজকরা আলোচনার জন্য শহিদুল আলমের পাশাপাশি তার দুই সহকিউরেটর—তানজিম ওয়াহাব ও মুনেম ওয়াসিফের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছিলেন।
আয়োজকরা ‘ইসরায়েল ও তার অস্তিত্বের অধিকার নিয়ে জার্মানির বিশেষ ঐতিহাসিক দায়িত্ব সম্পর্কে কিউরেটরদের সংবেদনশীল করতে’ চেয়েছিলেন।
কিন্তু শহিদুল আলম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার মত প্রকাশ অব্যাহত রেখেছেন জানিয়ে আয়োজকরা বলেছেন, ‘(তিনি) নিজেকে একজন অ্যাক্টিভিস্ট হিসেবে দেখেন এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতার দাবি করেন।’ তাকে প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করতে বাধা দিলে ওয়াহাব ও ওয়াসিফ—দুজনই কাজ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।
আয়োজকরা বলেছেন, প্রদর্শনী ও আয়োজক দলের জন্য এ আয়োজন বাতিল করার পরিণতি সুদূরপ্রসারী।
পুরো আয়োজনের ভবিষ্যত বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন তারা।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, তিনটি শহর এবং প্রদর্শনীর বোর্ড সদস্যরা আমন্ত্রিত শিল্পী, কিউরেটর ও উপদেষ্টাদের সঙ্গে লক্ষ্যভিত্তিক সমাধান খোঁজার প্রচেষ্টায় আলোচনা করছে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, এর আগে চলতি মাসের শুরুর দিকে প্রদর্শনীটির বাছাই কমিটির সব সদস্য পদত্যাগ করেছেন। একটি বিবৃতিতে তাঁরা বলেছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে তাঁরা বিশ্বাস করেন না যে, জার্মানিতে এমন কোনো জায়গা আছে, যেখানে তাদের কাজের উন্মুক্ত বিনিময় এবং জটিল ও সংক্ষিপ্ত শৈল্পিক পদ্ধতির বিকাশ সম্ভব, যা শিল্পী ও কিউরেটরদের প্রাপ্য।
এর আগে চলতি বছরের শুরুতে জার্মান রাসায়নিক কম্পানি বিএএসএফ আয়োজনের পৃষ্ঠপোষকতা তুলে নেবে বলে ঘোষণার ফলে বিয়েনালের ভবিষ্যত আরো হুমকির মুখে পড়েছে।
এদিকে প্রদর্শনী বাতিলের বিষয়ে ফটোসাংবাদিক শহিদুল আলমের বক্তব্য জানতে শনিবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে তার মুঠোফোনে ফোন করা হয়। তবে তিনি তা রিসিভ করেননি। এরপর রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।