পেঁয়াজের ঝাঁজে নাকাল নগরবাসী!
দৈনিকসিলেটডটকম
বাংলাদেশ বনাম নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার দ্বিতীয় টেস্ট ম্যাচে কোনো দলের ইনিংস ডাবল সেঞ্চুরি স্পর্শ করতে না পারলেও দেশি-বিদেশি পেঁয়াজের দাম সকাল সকাল ডাবল সেঞ্চুরি ছুঁয়ে ফেলেছে! মিরপুরে যে পিচে খেলা হয়েছে তাতে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে সর্বনাশ করবে-একথা বাদ দিয়ে বরং জাতির নাভিশ্বাস নিয়ে আলাপ-সালাপ করি! ব্যবসায়ীরা সহজে জান্নাত লাভ করবে-বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা এই শর্তের অধীন কি-না সে ব্যাপারে রাষ্ট্রীয় ফতোয়া দরকার! সব ব্যবসায়ীদের আপাতত ছাড় দিলেও পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের মাফ করার সুযোগ নাই! আবারও মজাক বাদ দিয়ে একটু দুঃখের কথা বলি! একবেলায় পেঁয়াজ ক্রেতার চোখের ঝাঁজ বের করে হাওয়া হয়ে গেছে! বাজারে পেঁয়াজ নাই! পেঁয়াজের ঝাঁজে দিনভর নাকাল নগরবাসী! এ ঝাঁজ কতোদিন চলবে কে জানে!
ভারত ৩১ মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রফতানি করবে না-ঘোষণা হতেই পেঁয়াজের বাজারে আগুন লেগেছে! বাইরে ধোঁয়া দেখা যায়নি কিন্তু কলিজা তো পুড়ছে! ক্রেতার পকেট তো কাটছে! ঘাড় তো ঘামছে! খুচরা বাজারে গতকালের ১১০ টাকার পেঁয়াজ আজ ২০০ টাকাতেও পাওয়া যাচ্ছে না। বাজারে পেঁয়াজের ঘাটতি আছে? মোটেই না! বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের কাছে যে পরিমান পেঁয়াজ মজুদ আছে তাতে আগামী ১৫-২০ দিন অনায়াসে বাজারে স্বাভাবিক সরবরাহ থাকার কথা! এর মধ্যে বিকল্প উৎস থেকে সরকার আমদানির ব্যবস্থা করতে পারত! নির্বাচনের বছর সরকারি মদদপুষ্ট ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজের বাজার ইস্যূতে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার পাঁয়তারা করছে। বিরোধীপক্ষের ষড়যন্ত্র তো অব্যাহত। এ দৌরাত্ম্যের ছেদ ঘটানো উচিত। বেকায়দায় পড়ে মরে তো জনতা! ছোটখাট নেতা-কর্মীরাও তো জনতার হাটে বাজার করে! তাদেরও নিশ্চয়ই পোড়ে!
মূলত ব্যবসায়ীদের সাথে সরকার পেরে উঠছে না! জনগণ তো দূর কী বাত! সরকারের যে অংশ ব্যবসায়ী সে অংশ আরও বেপরোয়া! ডিম-পেঁয়াজ-মরিচের দাম এরা রাতারাতি কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিতে পারে! অতীতের আচরণ সে কথাই বলে। সে দুঃখও থাক! নগরের প্রত্যেকটা মুদি দোকানে কয়েক ঘন্টা আগেও পর্যাপ্ত পেঁয়াজের যোগান ছিল। আরও বেশি মুনাফার আশায় সব পেঁয়াজ গর্তে/গোপনে সরিয়ে রেখেছে। নিত্য প্রয়োজনীয় ব্যবহার্য পণ্যের দাম সিন্ডিকেট করে বাড়িয়ে দেয়া অসাধু ব্যবসায়ীদের জাতীয় চরিত্রে পরিণত হয়েছে। অসাধু মুনাফাখোরদের কাছে জিম্মি গোটা জনপদ। নয়তো আজ পেঁয়াজের দাম বাড়ার কথা না।
এছাড়াও পেঁয়াজের দাম ইস্যূ ভুলিয়ে দেয়ার জন্য আদা-ডাল-রসুন-চিনির দাম বৃদ্ধি করার নাটক বেশ পুরানো। দেশি-বিদেশি চক্রান্তের মাধ্যমে যে দুর্ভিক্ষের শঙ্কা সম্প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রকাশ করেছেন সেটার পূর্বলক্ষণ বাজারমূ্ল্যের সীমাহীন ঊর্ধ্বগতিতেত ছায়া ফেলছে। জীবনযাত্রার ব্যয় মানুষের আয়কে রোজ ছাড়িয়ে যাচ্ছে। সমগ্র দেশের চোরদের পাহাড়া দেয়ার মত পর্যাপ্ত চৌকিদার না থাকায় পেঁয়াজের দামের ঝাঁজে জনতা কান্দে জারেজার অবস্থা! পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন সংকটে যে ঈমান দেখিয়েছে তাতে দোজখের দরজা তাদের জন্য উম্মুক্ত হলে-সেটা কোন আউলিয়া/দরবেশ বন্ধ করবে! মৃত্যু ভয়, জাহান্নাম-জান্নাত কিছুই ব্যবসায়ীদের আটকাতে পারছে না। নীতিহীন গোড়া সদর্পে দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে।
ভোক্তারও দোষ আছে! যারা মাসেও এককেজি পেঁয়াজ কিনত না তারা দাম বাড়ার খবর শুনে সকাল সকাল ০৫ কেজি কিনে রেখেছে! সেই নুনের দামের গুজবে বাজারের লবণ খালি করা, আলুর দাম বেড়ে গেলে আলু বাড়িয়ে কেনা, পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেলে দো-পেঁয়াজিতে ব্যঞ্জণ না রাঁধলে তাদের আহার যেনো সুস্বাদু হয়ে ওঠে না। কোন জিনিসের দাম বাড়ালে সরকারকে গালি দিতে দিতে অতিরিক্ত পাঁচসের কেনা জাতির অভ্যাসে পরিণত হয়েছে!
পেঁয়াজ একটি উচ্চপঁচনশীল দ্রব্য। মাত্র এক সপ্তাহ পেঁয়াজ কেনা থেকে বিরত থাকলে অসাধু ব্যবসায়ীদের কপালে হাত উঠবে। আমাদের সে সংযমটুকু নাই। যে পণ্যের দাম বাড়ানো হয় আমরা তার ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়ি! অন্যান্য দিনের চেয়ে আজ সারাদিনে ৫/৭ গুন বেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে। ভোক্তার চাহিদা দেখে গ্রামের মুদি দোকানদারও তার ইচ্ছামত দাম নিয়েছে। উপজেলা পর্যায়ে প্রশাসন কিছু কিছু অভিযান পরিচালনা করাতে ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ গায়েব করে দিয়েছে। ক্রেতাদের উচিত তাদের পেঁয়াজ কেনার ইচ্ছাটাকেও আপাতত গায়েব করে রাখা। ১০ দিনের ব্যবধানে হুজুর হুজুর করে আবার পূর্বের দামে পেঁয়াজ দিতে বাধ্য হবে।
বিগত কয়েক বছর ধরে ভারত পেঁয়াজ রফতানি নিয়ে নাটক করছে! দ্বি-পাক্ষিক ব্যবসার শর্ত অনৈতিকভাবেই তারা লঙ্ঘন করছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাংলাদেশের মানুষ! এরপরেও তাদের ক্রিকেট দলের পরাজয়ে বাংলাদেশের কেউ কেউ উৎসব করলে তাতে ভারত বিদ্বেষীতার অপবাদ দেবে! অথচ আমরাও বাংলাদেশ বিদ্বেষীতার অভিযোগ তুলতে পারি! বাংলাদেশ সরকারের উচিত, বিকল্প উৎসগুলোর সাথে ব্যবসায়িক বন্ধন শক্ত করা। ভারতের পণ্যের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতায় আমাদেরকে বিভিন্ন সময়ে কম খেসারত দিতে হয়নি! একসময় গরু নিয়ে ভারত নাটক করাতে বাংলাদেশ গরু উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। আশা করি, কৃষি বিপ্লবের মাধ্যমে পেঁয়াজ-মরিচের সংকট থেকেও বাংলার কৃষক জাতিকে স্বস্তি দেবে। আমাদের সোনার মাটি আছে । কিছু সোনার মানুষ চাই। আর সবকিছুর ওপরে চাই দেশপ্রেমিক ও দেশের কল্যাণভাবুক কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছা।