জোর করে দেশে পাঠানো হতে পারে, আতংকে তুরস্কের আফগান শরণার্থীরা
দৈনিকসিলেটডেস্ক
ইদরিস নিয়াজি কাবুলে সরকারী কর্মচারী হিসেবে “স্বাভাবিক জীবনযাপন” করছিলেন, কিন্তু ২০২১ সালে তালিবান ক্ষমতা দখল করার পর তার “জীবন ওলটপালট” হয়ে যায়।
নিয়াজি (৩২) এখন তুরস্কের কায়সেরি প্রদেশে ঢালাইকারী হিসেবে কাজ করছেন এবং তার “কোনো ভবিষ্যৎ নেই।“ তিনি সারাক্ষণ আতংকে থাকেন, কখন তাকে আবারও আফগানিস্তানে ফেরত পাঠানো হবে।
জাতিসংঘ বলছে ২০২১ এর আগস্ট থেকে শুরু করে ১৬ লাখেরও বেশি আফগান নাগরিক দেশটি ছেড়ে পালিয়েছে। যার ফলে প্রতিবেশী দেশগুলোতে আফগান শরণার্থীর সংখ্যা ৮২ লাখে পৌঁছেছে।
৩ লাখেরও বেশি আফগান শরণার্থী তুরস্কে বসবাস করছেন। তাদের অনেকেই নিয়াজির মতো তৃতীয় কোনো দেশে আশ্রয় পাওয়ার আশায় আছেন।
“তুরস্কে কেউ স্থায়ীভাবে থাকতে চাইবে না”, বলেন নিয়াজি। যেসব শরণার্থী ইউরোপে যাওয়ার আশা করছেন, তাদের কাছে “তুরস্ক হচ্ছে সংযোগ সেতুর মতো”।
তুরস্কে বসবাসরত অনেক আফগান পরিবার তৃতীয় কোনো দেশে আশ্রয় পাওয়ার অপেক্ষায় আছেন।
২০১৬ সালে তুরস্কে পালিয়ে আসেন মুনির মানসুরি। তিনি এখনো তৃতীয় কোনো দেশে আশ্রয় পাওয়ার অপেক্ষায় আছেন।
তিনি বলেন,“তুরস্কে আমরা আমাদের নিজেদের পেশার কাজ করতে পারি না। আমরা এখানে জীবিকা উপার্জন করতে পারি না। এটি ভিন্ন এক দেশ, যাদের রয়েছে ভিন্ন সংস্কৃতি ও ভাষা”।
তিনি জানান, তাকে জোর করে কাবুলে ফেরত পাঠানো হতে পারে, এ বিষয়টি নিয়ে তিনি ভীত, কারণ আফগানিস্তানে তার প্রাণ বিপন্ন হতে পারে।
তিনি আরও বলেন,“আমি ফিরে যাওয়ার ভয়ে ভীত। আমি তুরস্কে আসার আগে আফগানিস্তানে একটি সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলাম, যার কারণে আমাকে হুমকি দেওয়া হয়”।
আফগান শরণার্থী সংহতি সংস্থার সহ-প্রতিষ্ঠাতা আলি হিকমত ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, নভেম্বরের এক সপ্তাহেই কর্তৃপক্ষ “তুরস্কের পূর্বাঞ্চল থেকে ৮২০ জন আফগান নাগরিককে গ্রেপ্তার করে উড়োজাহাজে করে তাদেরকে কাবুলে ফেরত পাঠায়”।
গত বছর মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) জানিয়েছিল, তুরস্ক “নিয়মিত” হাজার হাজার আফগান শরণার্থীকে ইরানে বা আফগানিস্তানে ফেরত পাঠাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে “তাদের আন্তর্জাতিক সুরক্ষা পাওয়ার দাবির ব্যাপারে ন্যুনতম যাচাই-বাছাইও করা হচ্ছে না বললেই চলে”।
তুরস্ক কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এইচআরডব্লিউ জানিয়েছে, তুরস্ক ২০২২ এর প্রথম ৮ মাসে ৪৪ হাজার ৭৬৮জন আফগান নাগরিককে উড়োজাহাজে করে কাবুল ফেরত পাঠিয়েছে।
সূত্র: ভয়েস অব আমেরিকা