অগ্নিসন্ত্রাসীদের ক্ষমা নেই: সিলেটে শেখ হাসিনা
দৈনিকসিলেট প্রতিবেদক
যারা অগ্নিসন্ত্রাস করে তাদের ক্ষমা নেই বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, যারা অগ্নি সন্ত্রাস করছে, তাদের ক্ষমা নেই। তারা মানুষকে ভোট দিতে দিচ্ছে না। শান্তিতে থাকতে দিচ্ছে না। তারা আরো নিগৃহিত হবে। বিদেশে বসে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করে কোনো দিন সফল হতে পারবে না।
বুধবার দুপুরে সিলেটে পৌছে হযরত শাহজালাল (র.) মাজার জিয়ারত শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, আমার একটাই কথা, আওয়ামী লীগ সরকারে আসলে জনগণের কল্যাণ হয়। ২০০৯-২০১৮ সালে জনগণ আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছিল। আজকে সিলেটে এসেছি, এখানে কোনো ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষ নেই। প্রত্যেকটি মানুষকে ঘর করে দিয়েছি। মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করে যাচ্ছি। বাকিগুলো অচিরেই পূরণ করবো ইনশাহআল্লাহ, ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশের জনগণ যদি ভোট দেয়, আবার সরকার গঠন করতে পারি, তাহলে পুরো বাংলাদেশটাকেই আমরা উন্নত সমৃদ্ধ হিসেবে গড়তে পারবো। কোনো মানুষ ঠিকানাবিহীন থাকবে না। বাংলাদেশের দু:খী মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়ে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলবো। ইতিমধ্যে আমরা উন্নন বিশ্বের মর্যাদা পেয়েছি। ক্ষমতায় আসার পরেই সেটি কার্যকর করতে হবে।
তিনি বলেন, যারা নির্বাচন করবে না, আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারা, আগুন দিয়ে সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করা। এটা জনগণের সম্পত্তি। রেল লাইন এক্সিডেন্ট করিয়ে মানুষ হত্যা। এটা হচ্ছে জঙ্গীবাদি কাজ। এ সবগুলো সন্ত্রাসী জঙ্গীবাদি কাজ করে যাচ্ছে বিএনপি জামায়াত জোট। বিএনপির একটাই কাজ মানুষ পুড়িয়ে মারা। ২০১৩ ও ২০১৪ তেও দেখেছি তারা মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে। এটা কি ধরণের আন্দোলন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সবাই কাজ করি। জনগণ যাকে বেছে নেবে। অথছ রেলে আগুন দিল, একাটা মা-সন্তান পুড়িয়ে মরলো। এরচেয় কষ্টের কি হতে পারে? কি করে তারা মানুষ হত্যা করে। পুলিশ, সাংবাদিক, বিচারক, জনগণের উপর হামলা করে। এটা কি ধরণের খেলা। একজন লন্ডন বসে হুমুক দেয়। আর দেশে কিছু চ্যালা আছে আগুন দেয়। মানুষ মেরে ভীতি সৃষ্টি করে নির্বাচন বানচাল করতে চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, ভোট জনগণের অধিকার, সেই ভোটে বাধা দেওয়ার অধিকার কারো নেই। এটা কেই মানবে না। এটা যারা করবে, তাদের মানুষ উৎখাত করবে।
বুধবার দুপুরে শেখ হাসিনা হযরত শাহ জালাল মাজার জিয়ারত করেন।মাজারে নারীদের জন্য নির্ধারিত স্থানে শেখ হাসিনা বেশ কিছুক্ষণ অবস্থান করেন। সেখানে তিনি পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন এবং বিশেষ মোনাজাত করেন। হযরত শাহজালাল (র.) মাজার জিয়ারত শেষে বেরিয়ে শাহ পরান (র.) মাজার জিয়ারতে যান।
এরআগে বুধবার (২০ ডিসেম্বর) সকালে ১১টা ৩৩ মিনিটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি-৬০১ ফ্লাইট ময়ূরপঙ্খী যোগে সিলেট সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী।প্রধানমন্ত্রী সিলেট সফরসঙ্গী হয়েছেন তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা।এছাড়া বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এরপর বিমানবন্দরে স্বস্ত্রীক প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানান সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আনোয়ারুামান চৌধুরী, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নাসির উদ্দিন খান।
এরপর প্রধা্নমন্ত্রী বিমান থেকে নেমে ভিআইপি লাউঞ্জে অবস্থান করেন। সেখানে অযু করে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করেন।
বিমানবন্দরে আগে থেকে উপস্থিত ছিলেন সিলেট-আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, সিলেট-৪ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ, মৌলভীবাজার-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বন ও পরিবেশ মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন আহমদসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
দুপুর ১২টা ০৭ মিনিটের দিকে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী গাড়ি বহর সিলেট ওসমানী বিমানবন্দর থেকে হযরত শাহজালাল (র.) মাজারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়।
দলীয় সূত্র জানায়, হযরত শাহজালাল (র.) ও হযরত শাহপরান (র.) মাজার জিয়ারত শেষে সার্কিট হাউসে অবস্থান করবেন প্রধানমন্ত্রী। পরে বিকেল ৩ টার দিকে তিনি সিলেট নগরের আলীয়া মাদরাসা ময়দানে জেলা ও মহানগর আয়োজিত জনসভায় উপস্থিত হবেন।
প্রধানমন্ত্রীর ভাষনের জন্য আলীয়া মাদরাসা ময়দানে প্রস্তুত রয়েছে সভামঞ্চ। ইতিমধ্যে সিলেট বিভাগের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মানুষজন সমাবেশে যোগ দিতে আসতে শুরু করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর সমাবেশে অন্তত ৪শ’ অতিথির জন্য মঞ্চ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এর মধ্যে সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি, সম্পাদক ছাড়াও জেলা-উপজেলা ও পৌরসভার জনপ্রতিনিধি এবং বর্তমান সংসদ সদস্য প্রার্থীরা অবস্থান করবেন। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও থাকছেন বলে দলীয় একাধিক সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
প্রধানমন্ত্রীর আগমন ঘিরে কোনো স্তর নয়, পুরো সিলেটে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সরকারের অন্তত ২৫টি ইউনিটের সদস্যরা নিরাপত্তায় দায়িত্বে রয়েছেন।প্রায় চার হাজারের অধিক পুলিশ ফোর্স মোতায়েন রয়েছে জানিয়েছেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের নবাগত কমিশনার মো. জাকির হোসেন খান।