বিশ্বনাথে ফেইক আইডি দিয়ে স্কুল কমিটির সদস্যের পরিবারের মানহানি
বিশ্বনাথ প্রতিনিধি
সিলেটের বিশ্বনাথে ফেসবুকের ফেইক আইডি দিয়ে সাধারণ মানুষ থেকে নামীদামি মানুষের বিরুদ্ধে বারংবার মানহানিকর পোস্ট করার প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ নিয়ে একাধিক ডাইরি থানায় জমা পড়ে আছে। ইদানিং এমন একটি ফেইক আইডির পোস্ট নিয়ে উপজেলার উত্তর বিশ্বনাথ এলাকায় থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। অনেকেই বলছেন প্রশাসনের নিকট ইতিপূর্বে ভুক্তভোগীরা প্রতিকার চেয়ে উপযুক্ত সাড়া না পাওয়া বা কঠিন প্রদক্ষেপের অভাবে বারবার এ ধরনের কাজ করতে সাহস পাচ্ছে সাইবার অপরাধীরা। মূলত থানা পুলিশ বিভিন্ন বাধ্যবাদকতার অযুহাত দেখিয়ে নালিশ কারিদের সহায়তা না করায় দিনদিন এর মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে সচেতন মহলের ভাষ্য।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে নাম পরিচয়হীন আইডি খোলে নানান ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়াচ্ছে বেশির ভাগ কিশোর ও যুব সম্প্রদায়। পারিবারিক ও সামাজিক শিক্ষার অবক্ষয়ের ছোবলে বিভিন্ন শ্রেণির পেশার মানুষের মান সম্মান ও সহায় সম্পদ নিয়ে সমাজে হেয় প্রতিপন্ন হচ্ছেন দিন দিন তাদের এমন অপকর্মের কারণে। এ থেকে মুক্তির কি উপায় বা সমাধান তা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ভাবতে ও যথাযথ প্রদক্ষেপ নিতে দাবী দিনদিন জোরালো হচ্ছে।
সম্প্রতি বিশ্বনাথ উপজেলার খাজাঞ্চি ইউনিয়নের পাহাড় পুর গ্রামের ঐতিহ্যবাহী হাজী তেরা মিয়ার পরিবারের সামাজিক সম্মান নষ্ট করতে একটি ফেইক আইডি দিয়ে নানান অপমানজনিত পোস্টের বিষয় নিয়ে স্যোসাল মিডিয়া সহ এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। যে কোনো সময় ফেইক আইডির হোতা চিহ্নিত হলে বিষয়টি সংঘাতে বা আইন বিঘ্ন হওয়ার মত পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। ঘটতে পারে আইনশৃঙ্খলার অবনতি।
কয়েক দিন ধরে হাজী তেরা মিয়ার ছেলে শামীম আহমদ কে কেন্দ্র করে উত্তর বিশ্বনাথ উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি গঠন নিয়ে রহস্যজনক কারণে রায়হান আহমদ নামক ফেইসবুক আইডি থেকে অসংলগ্ন কতাবার্তা পোস্ট করে যাচ্ছে কে বা কারা। এ নিয়ে এলাকার গণ্য মান্য ব্যাক্তিবর্গ শামীম আহমদের পরিবারের পক্ষ নিয়ে বিস্তর প্রতিবাদ করে যাচ্ছেন। তাতেও অপকর্মের সাথে জড়িতরা থামছে না। এ নিয়ে শামীম আহমদ এর পরিবার আইনের দারস্থ হওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন বলেও জানা গেছে।
উত্তর বিশ্বনাথ দ্বি-প্রাক্ষিক উচ্চ বিদ্যালয়ের সদ্য নব গঠিত কমিটি নিয়ে অপপ্রচারের মুল ঘটনায় যা জানা যায় তাতে কমিটি নিয়ে এলাকাবাসীর কোন অভিযোগ অসন্তোষ নেই।
শামীম আহমদ নিয়ে সরজমিনে জানা গেছে তাঁর দাদা, বাবার শ্রম আর ঘাম মিশে আছে উত্তর বিশ্বনাথ উচ্চ বিদ্যালয়ে। দাদার বাড়িতে প্রাথমিকভাবে ১৯৭২ সালে জুনিয়র হাইস্কুল নামে শিক্ষাঙ্গনটির সূচনা ঘটে! ম্যানেজিং কমিটিতে ছিলেন বাবা ও চাচা। এখন সেই কমিটিতে গণতান্ত্রিক নিয়মে নির্বাচিত হয়ে স্থান করেছেন হাজী তেরা মিয়ার ছেলে শামীম আহমদ। কিন্তু এতে ক্ষুব্ধ কুচক্রি মহল। একটি পক্ষ কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না বিদ্যায়লের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচিত ওই সদস্যকে। তারা প্রকাশ্যে বিরোধীতা না করলেও সেই সদস্যের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চালাচ্ছে নানা অপপ্রচার। অপপ্রচারে বিভ্রান্ত ভুক্তভোগীর পরিবার ও স্বজনেরা। এ ঘটনায় ক্ষুদ্ধ বিদ্যালয়ের পুরো ম্যানেজিং কমিটিও। কমিটির দায়িত্বশীলরা বলছেন, কে বা কারা এসব করছে তা বোধগম্য হচ্ছে না! তবে নিঃসন্দেহে এটি নোংরামি ও অপপ্রচার!
স্থানীয় সূত্র থেকে জানা যায় , দেশ স্বাধীনের আগে ও পরে উত্তর বিশ্বনাথে তেমন কোনো উচ্চ বিদ্যালয় ছিলো না। সূত্র মতে, দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালে এলাকায় শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে বেশ কয়েকজন শিক্ষাবিদ বারবার বৈঠক করে একটি হাইস্কুল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। তখন পুরো দেশের মতো যুদ্ধ বিধ্বস্ত ছিলো বিশ্বনাথও। তাই কোথাও উপযুক্ত স্থান ও ভূমিদাতা পাওয়া যাচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত উপজেলার খাজাঞ্চি ইউনিয়নের পাহাড়পুরে শহর উল্লাহর আন্তরিকতায় তাঁর বাড়িতেই ১৯৭২ সালে অস্থায়ীভাবে স্কুলের কার্যক্রম শুরু হয়। ১৯৭৪ সালে বিদ্যালয়টিকে পুর্ণাঙ্গরূপ দিতে পাহাড়পুর থেকে নদীর পশ্চিম পারে অ্যাডভোকেট ছাদ উদ্দিন খান ও স্কুলের বর্তমান ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি জসিম উদ্দিন খানদের অনুদানের জায়গায় স্থাপিত হয় উত্তর বিশ্বনাথ উচ্চ বিদ্যালয়।
প্রতিষ্ঠালগ্নে অনেকেই স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন বিনা বেতনে। এদের মধ্যে একজন কমর উদ্দিন খান। অন্যান্য শিক্ষকেরা প্রয়াত।
দীর্ঘদিন থেকে বিদ্যালয়টি সুন্দরভাবে পরিচালনা করে আসছে স্কুল কমিটি। এই কমিটিতে প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম এবং যে বাড়িতে স্কুলের সূচনা হয়েছিল সেই বাড়ির শহর উল্লাহর ছেলে তেরা মিয়া ও চাচা মরহুম লিলু মিয়ার উত্তরসূরী শামীম আহমদ নিয়মতান্ত্রিকভাবে ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনে তিনবার সদস্য নির্বাচিত হন। কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন শিক্ষানুরাগী ও কবি জসীম উদ্দিন খান। রহস্যজনক কারণে রায়হান আহমদ নামক ফেইসবুক আইডি থেকে কমিটির সদস্য শামীম আহমদকে নিয়ে অসংলগ্ন বার্তা পোস্ট করা হচ্ছে। যা পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে এবং শামীম আহমদ এর পরিবারের সদস্যরা এ ঘটনায় সামাজিক ভাবে হেয় প্রতিপন্ন হচ্ছেন।
এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র, যুক্তরাজ্য প্রবাসী ও রাজনীতিবিদ সেলিম আহমদ জানান, আমার ভাইয়ের যদি কোনো অপরাধ থেকে থাকে কিংবা তিনি কোনো অনিয়মতান্ত্রিক কাজে লিপ্ত থাকেন তবে বিষয়টি কমিটিকে অবহিত করলে ব্যবস্থ গ্রহণের এখতিয়ার রয়েছে। কিন্তু অকারণে একজন সনামধন্য পরিবারের সদস্যকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার করে মানহানি করা আইনগত অপরাধ। যা কোনো বিবেকবান রুচিশীল মানুষের কাজ হতে পারে না। তিনি এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি, এলাকাবাসী সহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন যারা এ অপরাধে অভিযুক্ত তাদের শনাক্ত করে আইনি ব্যবস্থা যেন গ্রহণ করা হয়। তিনি আরো বলেন, এছাড়া খুব শীঘ্রই আমরা এ ঘটনায় আইনি প্রদক্ষেপ নিতে যাচ্ছি। যেসকল আইডি থেকে আমার ভাই ও পরিবারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে আমার বিশ্বাস সেই সকল ব্যক্তিকে প্রশাসন আইনের আওতায় নিয়ে আসবে।
এ বিযয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি জসিম উদ্দিন ও স্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রভাংশু শেখর তালুকদার জানান, আগামী ১ জানুয়ারী ম্যানেজিং কমিটির সভা আহবান করা হয়েছে। আলোচনায় সিদ্ধান্ত নির্ধারণ করা হবে।
বিশ্বনাথ থানা পুলিশের কাছে জানতে চাইলে এসআই জয়ন্ত সরকার জানান, এখন পর্যন্ত কোন অভিযোগ পাননি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবেন। এছাড়া ফেইক আইডি সংক্রান্ত থানায় করা একাধিক অভিযোগগুলো নিয়ে পুলিশ নিরলস ভাবে কাজ করছে এবং প্রতিনিয়ত অগ্রগতি হচ্ছে।