শিশুর সকালের খাবারে কী দেবেন
দৈনিকসিলেটডেস্ক
এসেছে নতুন বছর। নতুন বছর আসতে না আসতেই শুরু হয় শিশুর স্কুলে ভর্তির প্রক্রিয়া। আর স্কুল বলতেই বাবা-মায়ের চিন্তায় প্রথম আসে স্কুলের টিফিনে শিশুকে কী দেবেন! যেসব শিশুর সকালের শিফটে স্কুল থাকে, সেসব শিশুর ক্ষেত্রে অনেক মা–বাবা বাসায় তৈরি টিফিন দিতে পারেন না। ফলে এসব পরিবারের অনেকেই নির্ভর করেন বাইরের তৈরি ফাস্টফুড বা বেকারির তৈরি বিভিন্ন খাবারের উপর। কিন্তু অনেকেই হয়ত জানেন না, এ সকল খাবার কী কী উপাদানে তৈরি। ফলে অনেক সময় অসচেতনতার কারণে শিশুদের বিভিন্ন রকমের স্বাস্থ্যঝুঁকি দেখা দিতে পারে।
প্রতিদিন দিনের শুরুটা সব সময় স্বাস্থ্যকর ও সুষম খাবার দিয়ে শুরু করা জরুরি। শিশুদের ক্ষেত্রে বিষয়টা আরও অনেক বেশি জরুরি। কারণ শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ একটি চলমান ক্রমবর্ধমান প্রক্রিয়া। তাই দিনের শুরুতে খাবারে অনিয়ম হলে শিশুর পুষ্টির ঘাটতি দেখা দিতে পারে। ফলে শিশুদের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও বিকাশ ব্যাহত হতে পারে। তাছাড়া যে সকল শিশু সকালের নাস্তা না করে বা পুষ্টিকর খাবার না খেয়ে স্কুলে যায়, তাদের মধ্যে ক্লান্তিভাব বেশি দেখা যায়। তাই তারা পড়ালেখাতেও মনোযোগ দিতে পারে না। এমনকি খেলাধুলাসহ অন্যান্য কার্যক্রমে তাদের উপস্থিতি দেখা যায় না বললেই চলে।
যে সকল শিশুরা সকালে নাস্তা করে না, তাদের ক্ষেত্রে বাইরে থেকে অস্বাস্থ্যকর খাবার কিনে খাওয়ার প্রবণতা অনেক বেশি দেখা যায়। স্কুলের সামনে অনেক সময় অস্বাস্থ্যকর খাবার বিক্রি হয়। যা খেয়ে অনেক সময় শিশুর ডায়রিয়া,বমি, টাইফয়েড, জন্ডিস, অ্যাসিডিটি, পেটব্যথাসহ বিভিন্ন রোগ দেখা দিতে পারে। অনেক সময় অস্বাস্থ্যকর খাবারের কারণে শিশুর দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যঝুঁকি দেখা দেয়।
তাই শত ব্যস্ততার মধ্যেও শিশুর সকালের নাস্তায় ভালো টিফিন তৈরি করে দেওয়া প্রত্যেক পরিবারের দায়িত্ব। তবে সকালের নাস্তা বা টিফিনটি দিলেই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। বরং খাবারটি সুষম কিনা, সে বিষয়টিও খেয়াল রাখতে হবে। সুষম বলতে খাবারে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট – এই তিনটি উপাদান খাবারে উপস্থিত থাকতে হবে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, রুটি দিয়ে ডিম, সবজি একটি সুষম খাবারের বিন্যাস। কিন্তু রুটি দিয়ে আলু ভাজি অথবা রুটি–সুজি সুষম খাবার বিন্যাস নয়। রুটি, আলু ভাজি বা রুটি–সুজির মতো খাবারে প্রোটিন থাকে না। কিন্তু আবার দুধ–রুটি বা দুধ–সুজি খেলে পুনরায় খাবারে সুষম খাবারের বিন্যাস বজায় থাকে।
শিশুর সকালের খাবার বা স্কুলে নাস্তা হিসাবে যেসব সুষম খাবার দেওয়া যায়:
১. সবজি খিচুড়ি সঙ্গে ডিম বা চিকেন।
২. ডিম বা চিকেন ও ভেজিটেবল দিয়ে শর্মা বা স্যান্ডউইচ।
৩. চিড়ার সঙ্গে দুধ বা দই ও ফল, কর্নফ্লেক্স দুধ ও ফল, ওটস এর সঙ্গে দুধ বা দই ও ফল।
৪. নুডলসের সঙ্গে ডিম বা চিকেন ও সবজি, ডিম টোস্ট ও ফল, ডিম পরোটা, সবজি ইত্যাদি।
প্রতিটি খাবারে উপাদানের বৈচিত্র্যের কারণে ক্যালোরির পরিমাণ বা খাবারের গুণগতমানের তারতম্য দেখা দিতে পারে। তাছাড়া আপনার শিশু কী পরিমাণ খাবার খাবে, তা নির্ভর করে তার বয়স, ওজন, উচ্চতা, শারীরিক পরিশ্রমের মাত্রাসহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর। তাই যে কোনো খাবার ও খাবারের উপাদান সম্পর্কে সঠিকভাবে জেনে শিশুর খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এতে শিশুর সঠিক পুষ্টি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
একটি বিষয় মনে রাখা প্রয়োজন। যেহেতু আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ, তাই শিশুদের সঠিক নিয়মে বেড়ে ওঠা ভবিষ্যতের জন্য অত্যাবশ্যকীয়।
লেখক: নিউট্রিশন অফিসার, ন্যাশনাল হেলথকেয়ার নেটওয়ার্ক, বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি