চিনি না কেনো?
দৈনিকসিলেটডেস্ক
চিনি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে অনেকদিন ধরেই। বেশিরভাগেরই বক্তব্য চিনি শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এটিকে হোয়াইট পয়জন হিসাবেও ব্যাখ্যা করা হয়। চলুন জেনে নিই চিনি শরীরের জন্য কেমন ক্ষতিকর, আর কী কী ভাবে আমরা চিনি গ্রহণ করছি।
ছয় মাস বয়স থেকে বাচ্চাকে বাইরের খাবার দেওয়ার নিয়ম, অর্থাৎ এই বয়স থেকে শিশু বিভিন্ন ধরনের খাবারের স্বাদ গ্রহণ করবে এবং প্রতিটা স্বাদ চিনতে শুরু করবে। ঠিক এই সময়টাতেই আমরা যেই ভুলটা করে ফেলি সেটা হল, বাচ্চার দুধে মিশিয়ে দেই চিনি, সূজিতে চিনি, পানিও অনেক সময় হাল্কা চিনি মিশিয়ে দিয়ে ফেলি। এর ফলে খাবারের প্রকৃত স্বাদ তারা পায় না। এতে একদিকে সব খাবার মিষ্টি স্বাদের খেতে খেতে মিষ্টিতেই অভ্যস্ত হয়ে পড়ে বাচ্চা। যা চরম ক্ষতিকর, কারণ চিনিতে নেই কোনো পুষ্টিগুণ, উল্টো রয়েছে ক্ষতিকর দিক।
শিশু বয়স থেকে একবার চিনিতে অভ্যস্ত হয়ে গেলে ওইসব শিশুদের আর এই চিনি থেকে ফেরানো সম্ভব হয় না। কারণ চিনি এক ধরনের মাদকতা সৃষ্টি করে। বড়রা যেমন এলকোহলে আসক্ত হয় তেমনি শিশুরা চিনিতে আসক্ত হয়। মাদক শরীরের জন্য যতটা ক্ষতিকর, চিনিও ঠিক ততটাই ক্ষতিকর।
কী ক্ষতি করে চিনি?
অতিরিক্ত চিনির কারণে আমাদের শরীরে পুষ্টি এবং প্রোটিনের অভাব হয়ে থাকে। অনেক বেশি চিনি জাতীয় খাবার দেহের বিশেষ করে মস্তিষ্কের প্রোটিন এবং পুষ্টির শোষণ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। যে কারণে মস্তিষ্কের নিউরন এবং কোষ বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায়, মস্তিষ্কের উন্নতি হয় না। এতে আমাদের মস্তিষ্কে ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে।
চিনি পাকস্থলীতে গিয়ে দুটি উপাদানে ভাগ হয়ে যায়, একটি গ্লুকোজ ও ফ্রুকটোজ। গ্লুকোজ শরীরে রক্তের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং কর্মচাঞ্চল্য বজায় রাখে। আর ফ্রুকটোজ সরাসরি চলে যায় লিভারে। অতিরিক্ত চিনি খাওয়ার ফলে লিভারে অতিরিক্ত ফ্রুকটোজ চলে যায়। লিভারকে যখন বেশি মাত্রায় ফ্রুকটোজ প্রসেস করতে হয় তখন ওই এনার্জিকে ফ্যাটে রুপান্তর ছাড়া আর কোনো আর কিছুই করার থাকেনা। আর এই ফ্যাটি লিভারই হল, যাবতীয় রোগের কারণ।
চিনি বললে, সাধারণত আমাদের চোখে ভেসে ওঠে ছোট ছোট সাদা দানা, যার স্বাদ মিষ্টি। কিন্তু এই চিনি আর চিনি থেকে তৈরি খাবারই শুধু ক্ষতিকর নয়, প্রসেসড খাবারে ব্যবহৃত চিনি শরীরের জন্য আরও ক্ষতিকর।
এমন অনেক প্রসেড খাবার আমরা খাই যাতে চিনি যে রয়েছে এটাই আমরা জানিনা অথবা খেয়াল করিনা। যেমন, চিপস, বিস্কিট, সস ইত্যাদি। টক, ঝাল স্বাদের যেকোনো প্রসেসড খাবারকেই অতিমাত্রায় চিনি দিয়ে তার স্বাদ ব্যালেন্স করা হয়। অর্থাৎ না জেনে এই প্রসেসড চিনিও আমরা হরহামেশায় খাচ্ছি।
তাহলে কি চিনি খাওয়া বাদ দিবেন?
মোটেও না, শরীরের স্বাভাবিক ক্রিয়া বজায় রাখতে চিনি অর্থাৎ শর্করারও প্রয়োজন রয়েছে। তবে প্রয়োজনীয় শর্করা নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে তাজা ফল ও শাক সবজি থেকে। ফলে যে মিষ্টি অর্থাৎ শর্করা থাকে তা শরীরের জন্য উপকারী।
অথচ বাজার থেকে কেনা চিনি বা চিনি দিয়ে তৈরি প্রসেসড খাবারে নেই কোনো পুষ্টিগুণ।
অতিরিক্ত চিনি বাদ দিবো কীভাবে?
প্রথমেই খেয়াল করতে হবে দিনে কতটুকু র চিনি আপনি খান, চা, সূজি, সেমাই, পায়েশ, মিষ্টি জাতীয় খাবারে চিনি খান আপনি, তাহলে প্রথমেই এই খাবার গুলো থেকে চিনি বাদ দিন। এরপর দিনভর কী কী প্রসেসড ফুড খান সেটি শনাক্ত করুন এবং খাদ্য তালিকা থেকে প্রসেসড ফুড একেবারেই বাদ দিন। এতে খারাপ বৈ ভালো কিছু নেই। এরপর চেষ্টা করুন ফ্রেশ শাক সবজি ও ফলমূলের ওপর নির্ভর করতে। শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় চিনি বা শর্করা এ থেকেও পূরণ হবে।
চিনি সকল রোগের কারণ, এটিকে হোয়াইট পয়জন হিসাবেও ব্যাখ্যা করা হয়। তবে আবার এটিও সত্য যে শুধু চিনি খাওয়া বাদ দিলেই সুস্থ থাকা সম্ভব নয়। আপনি চিনি বাদ দিয়ে যদি অন্য অতিরিক্ত ক্যালোরিযুক্ত খাবার খাওয়া বাড়িয়ে দেন তাহলে কিন্তু কোনই লাভ নেই, সেই স্থুলতা, বিষন্নতা ও অন্য রোগ আপনার শরীরে বাসা বাধবেই।
অর্থাৎ ব্যালেন্সড ডায়েট মেইনটেইন করতে হবে। শরীরের প্রয়োজন অনুযায়ী খাবার গ্রহণ করতে হবে। আবার প্রয়োজন অনুযায়ী সেটি ক্ষয় করতে হবে পরিশ্রম করে।