পশু-পাখি কীটপতঙ্গসহ যেসব প্রাণীর বর্ণনা কোরআনে রয়েছে
দৈনিকসিলেট ডেস্ক :
সব প্রাণী ও সৃষ্টিকে আল্লাহ তাআলা একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছেন এবং সেই উদ্দেশ্য অনুযায়ী তিনি সেগুলোকে সাজিয়েছেন। কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে প্রাণিজগতের প্রসঙ্গ এসেছে। বিভিন্ন প্রাণীর নামে অনেক সুরারও নামকরণ হয়েছে। নিম্নে পবিত্র কোরআনে গবাদি পশুর বিভাজনের অধীনে পশুসংক্রান্ত আয়াতগুলো উল্লেখ করা হলো :
১. গবাদি পশু
আল্লাহ তাআলা বলেন : ‘এবং এগুলো গবাদি পশুর অন্তর্ভুক্ত। (সুরা : আনআম, আয়াত ১৪২)
গাভি (বাকার)
গাভির নাম অনুকরণে কোরআনে একটি স্বতন্ত্র সুরা ‘বাকারাহ’ নাজিল হয়েছে।
বাছুর (গোশাবক)
ইরশাদ হয়েছে, ‘অতঃপর তোমরা তাঁর [মুসা (আ.)-এর] প্রস্থানের পর (নিজেদের ওপর) জুলুম করে বাছুরকে মাবুদ বানালে।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত ৫১)
ছাগল
ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ (গবাদি পশুর) মোট আট প্রকার (সৃষ্টি করেছেন)। দুই প্রকার (নর ও মাদি) ভেড়ায় ও দুই প্রকার ছাগলে।
(সুরা : আনআম, আয়াত ১৪৩)
দুম্বা
ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং গরু ও দুম্বা থেকে তাদের (ইহুদিদের) জন্য হারাম করেছিলাম তাদের চর্বি।’ (সুরা : আনআম, আয়াত ১৪৬)
ভেড়া
ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ (গবাদি পশুর) মোট আট প্রকার (সৃষ্টি করেছেন)। দুই প্রকার (নর ও মাদি) ভেড়ায় ও দুই প্রকার ছাগলে।’ (সুরা : আনআম, আয়াত ১৪৩)
মাদি প্রসূতি ভেড়া বা ছাগল
ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ তাআলা মাদি প্রসূতি ভেড়া ও ছাগলকে শরিয়তসিদ্ধ করেননি।’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত ১০৩)
উট (উষ্ট্র)
ইরশাদ হয়েছে, ‘এমনিভাবে (আল্লাহ তাআলা) উটেরও দুটি প্রকার (নর ও মাদি) সৃষ্টি করেছেন এবং গরুরও দুটি।’ (সুরা : আনআম, আয়াত ১৪৪)
অন্য আয়াতে এসেছে, ‘এবং তারা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, যতক্ষণ না সুঁইয়ের ছিদ্র দিয়ে উট প্রবেশ করে।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৪০)
২. ভারবাহী বা আরোহী পশু
ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং তিনি চতুষ্পদ জন্তু থেকে কিছু মাল ও বোঝা বহনকারী (সৃষ্টি করেছেন)।’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ১৪২)
অশ্ব ও অশ্বতর
ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং তোমাদের আরোহণের জন্য ও শোভার জন্য তিনি ঘোড়া, খচ্চর ও গাধা সৃষ্টি করেছেন।’ (সুরা : নাহল, আয়াত ৮)
গাধা
ইরশাদ হয়েছে, ‘এবার চেয়ে দেখো নিজের খাবার ও পানীয়ের দিকে, সেগুলো পচে যায়নি এবং দেখ নিজের গাধাটির দিকে।(সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ২৫৯)
৩. বন্য পশু
ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং যখন বন্য পশুসমূহ একত্র করা হবে।’ (সুরা : তাকভির, আয়াত ৫)
শিকারি পশু
ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের জন্য সব উপাদেয় জিনিস হালাল করা হয়েছে। আর যেই শিকারি পশুকে তোমরা আল্লাহর পন্থায় শিখিয়ে শিখিয়ে (শিকার করার জন্য) প্রশিক্ষিত করে তুলেছ, তারা যে জন্তু (শিকার করে) তোমাদের জন্য ধরে আনে, তা থেকে তোমরা খেতে পারো।’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত ৪)
ঘোড়া
ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা তাদের (কাফিরদের) মোকাবেলার জন্য যথাসাধ্য শক্তি ও অশ্ব বাহিনী প্রস্তুত রাখবে।’ (সুরা : আনফাল, আয়াত : ৩০)
কুকুর
ইরশাদ হয়েছে, ‘তাদের কুকুর ছিল সামনের পা দুটি গুহাদ্বারে প্রসারিত করে।’ (সুরা : কাহফ, আয়াত ১৮)
শূকর
ইরশাদ হয়েছে, ‘অথবা শূকরের গোশত—তা অপবিত্র বা অবৈধ (তথা হারাম)।’ (সুরা : আনআম, আয়াত ১৪৫)
বানর
ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি তাদের বলেছিলাম, তোমরা ধিকৃত বানরে পরিণত হও।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ৬৫)
হাতি
ইরশাদ হয়েছে, ‘তুমি কি দেখনি, তোমার পালনকর্তা হস্তী বাহিনীর সঙ্গে কিরূপ ব্যবহার করেছেন?’ (সুরা : ফিল, আয়াত ১)
সিংহ
ইরশাদ হয়েছে, ‘যে সিংহের ভয়ে পলায়ন করে।’ (সুরা : মুদ্দাচ্ছির, আয়াত ৫১)
নেকড়ে বাঘ
ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং আমার এই ভয়ও আছে যে কখনো তার [ইউসুফ (আ.)] প্রতি তোমরা অমনোযোগী হলে নেকড়ে বাঘ তাকে খেয়ে ফেলবে।’ (সুরা : ইউসুফ, আয়াত ১৩)
৪. সরীসৃপ
ইরশাদ হয়েছে, ‘এমন কোনো জীবজন্তু (সরীসৃপ) নাই, যে তাঁর (আল্লাহর) পূর্ণ আয়ত্তাধীন নয়।’ (সুরা : হুদ, আয়াত ৫৬)
সাপ
ইরশাদ হয়েছে, ‘অতঃপর তিনি [মুসা (আ.)] তা (লাঠি) নিক্ষেপ করলেন, অমনি তা সাপ হয়ে ছোটাছুটি করতে লাগল।’ (সুরা : ত্বহা, আয়াত ২০)
ব্যাঙ
ইরশাদ হয়েছে, ‘সুতরাং আমি তাদের ওপর পাঠিয়ে দিলাম প্লাবন, পঙ্গপাল, উকুন, ব্যাঙ ও রক্ত প্রভৃতি বহুবিধ নিদর্শন একের পর এক।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত ১৩৩)
৫. পাখপাখালি
ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনি তাদের বিরুদ্ধে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি প্রেরণ করেছিলেন।’ (সুরা : ফিল, আয়াত ৩)
হুদহুদ
ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং সুলায়মান (আ.) পাখিদের খোঁজ নিলেন, অতঃপর বলেন, কী হলো, হুদহুদকে দেখছি না কেন? নাকি সে অনুপস্থিত?’ (সুরা : নামল, আয়াত ২০)
কাক
ইরশাদ হয়েছে, ‘অতঃপর আল্লাহ তাআলা একটি কাক পাঠালেন। সে মাটি খনন করছিল, যাতে তাকে শিক্ষা দেয় যে আপন ভ্রাতার মৃতদেহ কিভাবে আবৃত করবে।’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত ৩১)
৬. পোকামাকড় ও কীটপতঙ্গ
ইরশাদ হয়েছে, ‘অতঃপর আমি যখন সুলায়মানের মৃত্যুর সিদ্ধান্ত নিলাম, তখন জিনদের তার মৃত্যু বিষয়ে জানাল কেবল মাটির পোকা, যারা তার লাঠি খাচ্ছিল।’ (সুরা : সাবা, আয়াত ১৪)
পঙ্গপাল
ইরশাদ হয়েছে, ‘সুতরাং আমি তাদের পর পাঠিয়ে দিলাম প্লাবন, পঙ্গপাল, উকুন, ব্যাঙ ও রক্ত প্রভৃতি বহুবিধ নিদর্শন একের পর এক।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত ১৩৩)
উকুন
ইরশাদ হয়েছে, ‘সুতরাং আমি তাদের ওপর পাঠিয়ে দিলাম প্লাবন, পঙ্গপাল, উকুন, ব্যাঙ ও রক্ত প্রভৃতি বহুবিধ নিদর্শন একের পর এক।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত ১৩৩)
মৌমাছি
ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমার রব মৌমাছির অন্তরে এই নির্দেশ সঞ্চার করেন যে পাহাড়ে, গাছে এবং মানুষ যে মাচান তৈরি করে তাতে নিজ ঘর তৈরি করো।’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ৬৮)
মৌমাছির নাম অনুকরণে কোরআনে একটি স্বতন্ত্র সুরা ‘নাহল’ নাজিল হয়েছে।
মাছি
ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের পূজা করো, তারা একটি মাছিও সৃষ্টি করতে পারবে না, যদিও তারা সবাই একত্রিত হয়।’ (সুরা : হজ, আয়াত ৭৩)
মশা
ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ তাআলা মশা কিংবা তদাপেক্ষা ক্ষুদ্র কোনো বস্তুর উপমা দিতে সংকোচবোধ করেন না।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত ২৬)
পিঁপড়া
ইরশাদ হয়েছে, ‘একদিন যখন তারা পিঁপড়ার উপত্যকায় পৌঁছল, তখন এক পিঁপড়া বলল, ওহে পিঁপড়ারা! নিজ ঘরে ঢুকে পড়ো, অন্যথায় সুলায়মান ও তার বাহিনী অজ্ঞাতসারে তোমাদেরকে পিষ্ট করে ফেলবে।’ (সুরা : নামল, আয়াত ১৮)
পিঁপড়ার নাম অনুকরণে কোরআনে একটি স্বতন্ত্র সুরা ‘নামল’ নাজিল হয়েছে।
উইপোকা বা ঘুণপোকা
ইরশাদ হয়েছে, ‘অতঃপর আমি যখন সুলায়মানের মৃত্যুর সিদ্ধান্ত নিলাম তখন জিনদের তার মৃত্যুর বিষয়ে জানাল কেবল উইপোকা, যারা তার লাঠি খাচ্ছিল।’ (সুরা : সাবা, আয়াত ১৪)
মাকড়সা
ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা আল্লাহর পরিবর্তে অপরকে সাহায্যকারীরূপে গ্রহণ করে তাদের দৃষ্টান্ত হলো মাকড়সা। সে ঘর বানায়। আর নিশ্চয়ই সব ঘরের মধ্যে মাকড়সার ঘর বেশি দুর্বল।’ (সুরা : আনকাবুত, আয়াত ৪১)
মাকড়সার নাম অনুকরণে কোরআনে একটি স্বতন্ত্র সুরা ‘আনকাবুত’ নাজিল হয়েছে।