জামাই মেলায় মাছের বাহার
দৈনিকসিলেট ডেস্ক :
১২৫ কেজি ওজনের পাংখা, ৪৫ কেজি ওজনের কাতল, ৩৫ কেজির বোয়াল ও ১২ কেজি ওজনের রুই! এমনই হরেক পদের আর বিশাল আকারের মাছ উঠেছিল গতকাল সোমবার কালীগঞ্জের বিনিরাইল গ্রামের জামাই মেলায়। মেলায় আরো দেখা যায় বাঘাইড়, আইড়, বোয়াল, কালিবাউশ, গলদা চিংড়িসহ নানা প্রজাতির ছোট-বড় মাছ। পাংখা ছাড়া অন্যান্য সামুদ্রিক মাছের মধ্যে ছিল চিতল, কোরাল, বাইম, কাইক্কা ও রূপচাঁদা। মাছ ছাড়াও মেলায় আসবাব, খেলনা, মিষ্টি ইত্যাদির দোকানও ছিল অনেক।
মেলা বলে কথা!
প্রথম কবে এই মেলা শুরু হয়েছিল, তা সঠিকভাবে জানা যায় না। তবে আয়োজকদের দাবি এই মেলার বয়স ২৬০ বছরের বেশি। স্থানীয় প্রবীণদের কেউ কেউ অন্তত একাধিক প্রজন্ম ধরে মেলাটি দেখার কথা বলেছেন। প্রতিবছর শীতে মাঘ মাসের প্রথম দিন বসে বিশাল এ মেলা।
গাজীপুর ছাড়াও আশপাশের জেলা থেকে হাজার হাজার মানুষ আসেন মেলায়। সকাল থেকে শুরু হয়ে মেলা চলে গভীর রাত পর্যন্ত।
নাম থেকেই স্পষ্ট, এলাকার জামাইদের কেন্দ্র করেই এ মাছের মেলা। বিনিরাইল ও এর আশপাশের গ্রামে যারা বিয়ে করেছেন সেসব পুরুষ এখানকার মাছের মূল ক্রেতা।
জামাইদের চেষ্টা থাকে সবচেয়ে বড় মাছটি কিনে শ্বশুরবাড়ি নিয়ে যেতে। আবার শ্বশুরদের মধ্যেও প্রতিযোগিতা হয় সবচেয়ে বড় মাছটি কিনে নিয়ে জামাইকে আপ্যায়ন করতে। দিনটির জন্য সারা বছর অপেক্ষায় থাকে উপজেলার মানুষ।
গতকাল মেলা ঘুরে দেখা গেছে, গাজীপুর মহানগরীর চান্দনা চৌরাস্তার মাছ ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলামের দোকান ঘিরে জামাইদের বিরাট ভিড়। ২০ থেকে ৪৫ কেজি ওজনের কাতল, ১৭ কেজির চিতল, ৪২ কেজির কোরাল, ২৫ কেজির বোয়াল, বড় বড় আইড়সহ নানা প্রজাতির মাছে ঠাসা ছিল তাঁর দোকান।
এই দোকানে সবার নজর কাড়ে অন্তত আট ফুট লম্বা শতাধিক কেজি ওজনের সামুদ্রিক পাংখা মাছ। রফিকুল ইসলাম অদ্ভুত চেহারার মাছটির দাম হাঁকেন দেড় লাখ টাকা। ৪৫ কেজির কাতলের দাম চান ৮৫ হাজার টাকা। অভিজিৎ সাহা নামের এক জামাই পাংখা মাছের দাম বললেন ৭৫ হাজার টাকা। কাতলের জন্য দিতে চাইলেন ৫০ হাজার টাকা। দাম পছন্দ না হওয়ায় রফিকুল রাজি হলেন না। তাঁদের ঘিরে উত্সুক লোকের ভিড় জমে যায়।
স্থানীয় যুবক আশরাফুল বলেন, বরাবরের মতো উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত ছাড়াও টাঙ্গাইল, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, ভৈরব, কিশোরগঞ্জ ও ময়মনসিংহ থেকে অনেক লোক এসেছে মেলায়।
কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলা থেকে আসা মাছ ব্যবসায়ী বিজয় দাস (৬২) বললেন, ২৫ বছর ধরে তিনি এই মেলায় মাছ বিক্রি করেন। ঐতিহ্যের কারণে বিনিরাইলের জামাই মেলায় প্রচুর মানুষ আসে। বিক্রিও ভালো হয়। তবে তার চেয়ে বড় কথা, এ মেলা সব সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে উৎসবে পরিণত হয়েছে।
মেলায় আসা জামালপুর গ্রামের জামাই আবদুল ওয়াহাব (৫২) বলেন, সব জামাইয়ের নজর থাকে মেলার বড় মাছটা কেনার দিকে। এ বিষয়টি খুব ভালো লাগে তাঁর।
কালীগঞ্জের বাসিন্দা মো. সাখাওয়াত হোসেন (৪৮) জানান, তিনি ৫৫ হাজার টাকায় চিতল, বোয়াল, আইড়সহ বিভিন্ন ধরনের মাছ কিনেছেন। এক সঙ্গে অনেক মাছ পাওয়া যায় বলে প্রতিবছর এ মেলায় আসেন।
জামাই মেলা আয়োজক কমিটির সভাপতি নুরুল ইসলাম নুরু বলেন, গ্রামের মুরব্বিদের বর্ণনা অনুযায়ী, এ মেলার বয়স ২৬০ বছরের বেশি। শুরুতে ক্ষুদ্র পরিসরে হতো। প্রথমে শুধু হিন্দু ধর্মাবলম্বীরাই মেলার আয়োজন করতেন। কালের প্রবাহে হাজার হাজার মানুষের অংশগ্রহণে মেলাটি একটি সর্বজনীন উৎসবে রূপ নিয়েছে। গত বছর মেলায় দেড় কোটি টাকার মাছ বিক্রি হয়েছিল। এবার হয়তো বিক্রি আড়াই কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।