হকারদের দখলে সিলেট নগরের সড়ক
দৈনিকসিলেট ডেস্ক :
সিলেট নগরের কোর্ট পয়েন্টের ফুট ওভারব্রিজে দাঁড়িয়ে নিচে তাকালে মনে হবে কোনো বাজারের মাঝখান দিয়ে যানবাহন ঢুকে পড়েছে। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর ফুটপাত আর সড়কের দুই পাশে দু-তিন সারিতে ভাসমান দোকানপাট মিলে রীতিমতো বাজারে রূপ নেয়। শুধু কোর্ট পয়েন্টই নয়, নগরের চৌহাট্টা থেকে কোর্ট পয়েন্ট হয়ে সুরমা পয়েন্ট ধরে কিনব্রিজের মুখ পর্যন্ত প্রায় একই চিত্র। এতে পথচারীদের ভোগান্তি পোহাতে হয়, নগরজুড়ে সারাক্ষণ থাকে অসহনীয় যানজট।
সিলেট নগরের আম্বরখানা, চৌহাট্টা, জিন্দাবাজার, কোর্ট পয়েন্ট, বন্দরবাজার, সিটি পয়েন্ট, নাগরি চত্বর থেকে সুরমা নদীর পার, সুরমা মার্কেট থেকে তালতলাসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। যদিও সিটি করপোরেশনের (সিসিক) মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী এক মাসের মধ্যে রাস্তাঘাট হকারমুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন।
পথচারী ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিসিক নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই নগরের ফুটপাতে হকারদের দৌরাত্ম্য বাড়তে থাকে।
নতুন মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী মেয়রের দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীর সিলেট সফর ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত থাকায় নগরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কের ফুটপাত প্রায় পুরোটাই হকারদের দখলে চলে যায়।
নগরের জিন্দাবাজার এলাকায় সিলেট সরকারি অগ্রগামী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের দেয়ালগুলো হকারদের পণ্যের আড়ালে ঢাকা পড়ে গেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির পাঠদান শেষ হওয়ার পর প্রতিদিন বিকেল ৪টার পর থেকে স্কুলের প্রধান ফটক খুঁজে পাওয়া দুস্কর হয়ে যায়। সিঁড়ির ধাপের মতো থরে থরে উঁচু করে জুতা সাজিয়ে রাখায় আড়ালে ঢাকা পড়ে যায় বিদ্যালয়ের বিশাল ফটকটি। বিষয়টি নিয়ে পথচারীদের সমালোচনা করতে দেখা গেলেও কোনো প্রতিকার নেই।
বিষয়টি হতাশাজনক এবং জাতি হিসেবে আমাদের নির্লিপ্ততার পরিচয় দেয় মন্তব্য করে সিলেট জেলা বারের আইনজীবী রণেন সরকার রনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘ফুটপাত দখল করে দোকানপাট বসানো হয়েছে। হাঁটার জায়গাটুকু পর্যন্ত নেই, মানুষকে ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় হাঁটতে হয়। সবচেয়ে নিন্দনীয় হচ্ছে সিলেটের একটি শীর্ষ স্কুল সরকারি অগ্রগামী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে জুতার দোকান বানিয়ে ফেলা।’
সরকারি অগ্রগামী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে কোর্ট পয়েন্ট কয়েক শ ফুট দূরত্বে। দুই মিনিট হাঁটার দূরত্ব।
এটুকু সড়কের এক পাশেই ৬৪টি বিভিন্ন পণ্যের অস্থায়ী দোকান বসানো হয়েছে। এসব দোকানের ৮০ শতাংশই শীতবস্ত্রের।
নগরের সড়ক ও ফুটপাত দেখভাল করার দায়িত্ব সিসিকের। অথচ খোদ সিসিকের প্রধান ফটক থেকে শুরু নগর ভবনের সামনের অংশও রক্ষা পায়নি হকারদের দখল থেকে। দেখা গেছে, বন্ধ থাকা প্রধান ফটকের দুই পাশে সানগ্লাসের পসরা নিয়ে বসেছেন দুই হকার। তাঁদের পাশে তালা-চাবির একাধিক কারিগর বসেছেন। পশ্চিম পাশের ফটক ছাড়াও নগর ভবনের সামনের প্রায় পুরোটাই সবজি বিক্রেতাদের দখলে। কেউ টুকরি নিয়ে কেউ ঠেলায় করে সেখানে সবজি বিক্রি করছেন।
সিটি করপোরেশনের সামনে কথা হয় পথচারী আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে। নগরের বালুচর এলাকার বাসিন্দা আনোয়ার খানিকটা কটাক্ষ করে বলেন, ‘খোদ নগর ভবনের সামনের ফুটপাতই যেখানে হকারদের দখলে, সেখানে নগরের ফুটপাত হকারমুক্ত প্রত্যাশা করি কিভাবে?’
নগর ভবন থেকে পূর্ব দিকে প্রধান ডাকঘর হয়ে লালদীঘির পারের মুখ পর্যন্ত, সিসিকের সামনে থেকে পশ্চিমে আদালত এলাকা, জেলা প্রশাসকের বাসভবন ছাড়িয়ে নাগরি পয়েন্ট পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে গাদাগাদি করে বসেছে ভাসমান দোকান।
সিসিক মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘মহানগরের বিভিন্ন সড়কে হকারদের অবস্থান নিয়ে সমালোচনা চলছে। বিষয়টি আমাদেরও দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এ নিয়ে আমরা কাজ করতে শুরু করেছি। হকার নেতাসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে।’