আল্লাহ তায়ালার নির্দেশনা প্রচারে নবী-রাসুলদের ৫ বৈশিষ্ট্য
দৈনিকসিলেট ডেস্ক :
আল্লাহর পক্ষ থেকে নবী-রাসুলদের প্রধান দায়িত্ব ছিল তাঁর বাণী যথাযথভাবে পৌঁছে দেওয়া। আল্লাহর বাণী পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁরা কোনো ত্রুটি করেননি।
১. কোনো কিছু আড়াল করেননি : নবী ও রাসুলগণ তাঁদের কাছে অবতীর্ণ আল্লাহর বাণী পরিপূর্ণভাবে পৌঁছে দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে তাঁরা সামান্যতম ত্রুটিও করেননি।
ইরশাদ হয়েছে, ‘হে রাসুল! প্রতিপালকের কাছ থেকে তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তা প্রচার করো; যদি (পরিপূর্ণভাবে) না করো, তবে তুমি তাঁর বার্তা প্রচার করলে না।’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত ৬৭)
উল্লিখিত আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসিরবিদগণ বলেন, আল্লাহর বাণী প্রচারে নবী-রাসুল (আ.) সামান্যতম অবহেলা করেননি। তাঁরা যা কিছু দ্বিন ও শরিয়তের অংশ হিসেবে প্রচার করেছেন তার সবই আল্লাহর পক্ষ থেকে। যেমন—বিশ্বাস, ইবাদত, শিষ্টাচার ইত্যাদি।(তাফসিরে সাদি, পৃষ্ঠা ২৩৯)
তাফসিরে খাজেনে লেখা হয়েছে, এ বিষয়ে উলামায়ে কেরাম একমত যে, ওহি প্রচার ও ভীতি প্রদর্শনের ক্ষেত্রে খেয়ানত (বিশ্বাস ভঙ্গ) করা নবী-রাসুলের জন্য না জায়েজ। তাঁরা তাঁদের ওপর অবতীর্ণ ওহি থেকে একটি বাক্যও আড়াল করেননি। যদি কেউ মনে করে, নবী-রাসুল (আ.) ওহি গোপন করতে পারেন, তবে সে মূলত পুরো শরিয়তে ইসলামীকে সংশয়ের মধ্যে ফেলে দিল। (তাফসিরে খাজেন : ২/৪৭৪)
২. করেননি কোনো সংযোজনও : আল্লাহর নবী ও রাসুলরা যেমন ওহি প্রচারের ক্ষেত্রে কোনো কিছু সংযোজন করেননি, তেমন তাঁরা কোনো কিছু নিজ থেকে যুক্তও করেননি।
ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের সঙ্গী বিভ্রান্ত নয়, বিপথগামীও নয়, এবং সে মনগড়া কথাও বলে না। এটা তো ওহি, যা তাঁর প্রতি প্রত্যাদেশ হয়।’ (সুরা : নাজম, আয়াত : ২-৪)
৩. পরিবর্তনের এখতিয়ার ছিল না : নবী-রাসুল (আ.) পৃথিবীতে আল্লাহর মনোনীত ও সবচেয়ে প্রিয় বান্দা হলেও ওহি প্রচারে কোনো ধরনের সংযোজন বা বিয়োজনের এখতিয়ার তাঁদের ছিল না। মহান আল্লাহ বলেন, ‘সে যদি আমার নামে কোনো কথা রচনা করে চালাতে চেষ্টা করত, আমি অবশ্যই তাঁর ডান হাত ধরে ফেলতাম এবং কেটে দিতাম তাঁর জীবন-ধমনি। অতঃপর তোমাদের মধ্যে এমন কেউই নাই, যে তাঁকে রক্ষা করতে পারে।’ (সুরা : হাক্কাহ, আয়াত : ৪৪-৪৭)
৪. আল্লাহর বাণীর ভাষ্যকার : নবী-রাসুলরা ছিলেন আল্লাহর বাণী প্রচারক। তবে তাঁদের দায়িত্ব শুধু প্রচারে সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং আল্লাহর বাণী ও তার উদ্দেশ্য মানুষের সামনে স্পষ্টভাবে তুলে ধরাও তাঁদের দায়িত্ব ছিল। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা তার আনুগত্য করলে সৎপথ পাবে। আর রাসুলের কাজ তো কেবল স্পষ্টভাবে পৌঁছে দেওয়া।’ (সুরা : নুর, আয়াত ৫৪)
আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম তাবারি (রহ.) বলেন, নবীদের দায়িত্ব ছিল আল্লাহর বাণী এমনভাবে পৌঁছে দেওয়া, যাতে তার দ্বারা আল্লাহর উদ্দেশ্যও স্পষ্ট হয়। (তাফসিরে তাবারি : ১৭/৩৪৫)
৫. উম্মতের দায়িত্ব বিশ্বাস ও আনুগত্য : আল্লাহর নবী ও রাসুলগণ আল্লাহর বাণী যথাযথভাবে পৌঁছে দেওয়ার পর উম্মতের দায়িত্ব হলো দ্বিধাহীনভাবে তা বিশ্বাস করা এবং নিঃশর্ত আনুগত্য করা। ইরশাদ হয়েছে, ‘প্রেরণ করেছিলাম স্পষ্ট প্রমাণাদি ও গ্রন্থাবলিসহ এবং তোমার প্রতি কোরআন অবতীর্ণ করেছি, মানুষকে সুস্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য যা তাদের প্রতি অবতীর্ণ করা হয়েছিল, যাতে তারা চিন্তা করে।’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ৪৪)
শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন, ‘এটা স্পষ্ট যে, রাসুলগণ আমাদের ও আল্লাহর মধ্যখানে মাধ্যমস্বরূপ; তাঁর আদেশ, নিষেধ, অঙ্গীকার, হুঁশিয়ারি ও সংবাদ পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে। সুতরাং আমাদের দায়িত্ব হলো আল্লাহ সম্পর্কে তাঁরা যা বলেছেন তা সত্যায়ন করা এবং তাঁরা যেসব আদেশ দিয়েছেন এবং যা ওয়াজিব করেছেন তার আনুগত্য করা।’ (কায়িতাদুন জালিলাতুন ফিত তাওয়াসসুলি ওয়াল ওসিলাতি, পৃষ্ঠা ২৬১)
আল্লাহ সবাইকে নবী-রাসুল (আ.)-এর প্রতি পূর্ণ ঈমান আনার তাওফিক দিন। আমিন।