গাজায় নিহত ২৬ হাজার ছুঁই ছুঁই, আইসিজের রায় আজ
দৈনিকসিলেটডেস্ক
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা প্রায় ২৬ হাজারে পৌঁছেছে। আহত হয়েছেন আরও ৬৪ হাজারেরও বেশি মানুষ। এর মধ্যে গত ২১ ঘণ্টায় নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ২০০ জন ফিলিস্তিনি।
আজ শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা ২৫ হাজার ৯০০ জনে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ইসরায়েলি বর্বর এই আগ্রাসনে আরও ৬৪ হাজার ১১০ জন আহত হয়েছেন।
আনাদোলু বলছে, ইসরায়েলি বাহিনী গত ২১ ঘণ্টায় গাজা উপত্যকায় ২৪টি গণহত্যা চালিয়েছে। এতে কমপক্ষে ২০০ জন নিহত এবং আরও ৩৭০ জন আহত হয়েছেন।
গাজার এই মন্ত্রণালয় বলেছে: ‘অনেক মানুষ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় আটকা পড়েছেন এবং উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছেন না।’
গাজায় ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। হাজার হাজার মানুষ কোনো ধরনের আশ্রয় ছাড়াই বসবাস করছে এবং প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম ত্রাণবাহী ট্রাক এই অঞ্চলে প্রবেশ করছে।
আইসিজের রায় আজ:
আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) ইসরাইলের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার দায়ের করা গণহত্যার মামলার অন্তর্বর্তী রায় দেবে আজ শুক্রবার। এই রায় ইসরাইলের বিরুদ্ধে যায় কিনা সেটা দেখার জন্য উৎসুক হয়ে রয়েছে সারা দুনিয়া।
ইতোমধ্যে আইসিজে বলেছেন, গাজায় গণহত্যার অভিযোগে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মামলায় শুক্রবারের রায় হবে যুগান্তকারী।
গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের নজিরবিহীন হামলার পর থেকে গাজায় আক্রমণ শুরু করে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী। আজকের রায়ে আইসিজে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীকে দ্রুত সামরিক তৎপরতা বন্ধের আদেশ দিতে পারেন। তবে ইসরায়েল গাজায় গণহত্যা চালিয়েছে কি না, সে প্রশ্নের সুরাহা আজ করবে না আইসিজে। শুধু জরুরি পদক্ষেপ নেয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হবে। গণহত্যা বিষয়ে রায় দিতে আরও সময় লাগবে বলে জানা গেছে। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আইসিজের দেয়া আদেশ দেশটির ওপর রাজনৈতিক চাপ বাড়াবে।
গত ডিসেম্বরে আইসিজেতে মামলাটি করে দক্ষিণ আফ্রিকা। বিষয়টি চলতি মাসের শুরুর দিকে আইসিজেতে দুই দিনের শুনানি হয়। শুনানিতে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়, আদালত যেন জরুরি ভিত্তিতে ইসরায়েলকে গাজায় সামরিক অভিযান বন্ধের নির্দেশ দেন। জেনোসাইড কনভেনশনের আওতায় ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকারের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক আদালতের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ ঘোষণা করা জরুরি বলেও তারা উল্লেখ করেন।
এদিকে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ইতিমধ্যে ইঙ্গিত দিয়েছেন, আইসিজের আদেশ তিনি মানার বাধ্যবাধকতা অনুভব করেন না। এর আগে ১৪ জানুয়ারি টেলিভিশনে প্রচারিত এক সংবাদ সম্মেলনে নেতানিয়াহু বলেন, ‘কেউ আমাদের থামাতে পারবে না—দ্য হেগ নয়, শয়তানের অক্ষ নয়, অন্য কেউ নয়।’ ওই বক্তব্যে ‘দ্য হেগ’ বলতে নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) কথা বুঝিয়েছেন নেতানিয়াহু। অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ইরান-সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর জোটকে ‘প্রতিরোধের অক্ষ’ বলে ডাকা হয়। যাকে ‘শয়তানের অক্ষ’ বলেছেন নেতানিয়াহু।
উল্লেখ্য, আইসিজের স্থায়ী বিচারপতির সংখ্যা ১৫। তবে মামলার দুই পক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইসরাইল একজন করে অস্থায়ী বিচারপতি পাঠাতে পারে।
এই আদালতের বর্তমান সভাপতি হচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের জুয়ান ডোনোহুই। অন্য বিচারপতিরা হচ্ছেন ফ্রান্স, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, স্লোভাকিয়া, জ্যামাইকা, জাপান, ব্রাজিল, রাশিয়া, চীন, মরক্কো, সোমালিয়া, লেবানন ও উগান্ডার।